পশ্চিমবঙ্গ কবিতা অ্যাকাডেমির বার্ষিক কবিতা উৎসব বন্ধ হওয়ায় বিতর্ক তৈরি হয়েছে কবি ও আবৃত্তিকার মহলে। কবি-আবৃত্তিকারদের একাংশ (যাঁদের বেশির ভাগ বাম মনোভাবাপন্ন) অ্যাকাডেমির কাজকর্ম নিয়ে তদন্ত চেয়ে খোলা চিঠি লিখেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও। সেই আবহে ‘কবিতার জগতে হিংসা’ নিয়ে সমাজমাধ্যমে লিখলেন অ্যাকাডেমির সভাপতি তথা কবি সুবোধ সরকার।
বৃহস্পতিবার সুবোধ তাঁর সমাজমাধ্যমের পাতায় লিখেছেন, ‘কবিতার জগতেও এত হিংসা দেখে বাঙালি জাতির একাংশের ওপর আমার বিষণ্ণতা জন্মায়।’ দেশের মধ্যে একমাত্র এ রাজ্যেই কবিতা অ্যাকাডেমি রয়েছে। পৃথক ভাবে কবিতা অ্যাকাডেমি তৈরি হয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাবনাতেই। সেই প্রসঙ্গ টেনে সুবোধ লিখেছেন, ‘মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৃষ্টি পশ্চিমবঙ্গ কবিতা অ্যাকাডেমি এখন গোটা ভারতবর্ষে একটি দৃষ্টান্ত । বহু রাজ্যের কবিরা চাইছেন কবিতা অ্যাকাডেমি স্থাপন করতে। সাহিত্য অ্যাকাডেমির সভাপতি দিল্লিতে প্রকাশ্যে প্রশংসা করেছেন এই বলে যে, শুধু কবিতা নিয়ে একটা অ্যাকাডেমি আছে বাংলায়। সর্বভারতীয় কবি, লেখকেরা ভূয়সী প্রশংসা করেছেন মুখ্যমন্ত্রীর। এখানেও কবি-লেখকেরা মুগ্ধ হয়েছেন।’
যদিও কবিতা উৎসব কেন বন্ধ হয়েছে, সে ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা সুবোধ তাঁর পোস্টে দেননি। উল্লেখ্য, কবি ও আবৃত্তিকারদের মহল থেকেই নানাবিধ অনিয়মের অভিযোগ উঠছে। শুধু তা-ই নয়, অ্যাকাডেমির অন্যতম সদস্য তথা আবৃত্তিকার ব্রততী বন্দ্যোপাধ্যায়ও জানিয়েছেন, কেন উৎসব বন্ধ হল, তা নিয়ে তাঁর মধ্যেও প্রশ্ন রয়েছে। তিনি বলেছেন, ‘‘কেন কবিতা উৎসব হয়নি, তা আমি জানি না। এ নিয়ে আমার মধ্যেও প্রশ্ন রয়েছে। এই উৎসবের দিকে নতুনেরা তাকিয়ে থাকেন। আশা করব, পরের বার হবে।’’
‘সমালোচকেরা’ যে প্রশ্ন তুলেছেন, তাকে ‘হিংসা’ হিসাবেই দেখাতে চেয়েছেন অ্যাকাডেমির সভাপতি কবি সুবোধ। ২০১৬ সালে এই অ্যাকাডেমি তৈরি হয়েছিল। তৈরি হওয়া থেকে এই পর্যন্ত অ্যাকাডেমির কাজের খতিয়ান তুলে ধরেছেন সুবোধ। লিখেছেন, ‘গত আট বছর ধরে সংশ্লিষ্ট দফতর যে ভাবে দক্ষতার সঙ্গে অ্যাকাডেমির সাংগঠনিক দিকগুলো পরিচালনা করে চলেছেন, আমি তার সুখ্যাতি করি এবং ধারাবাহিকভাবে করে থাকি। যাঁরা কবিতা নিয়ে হিংস্র রাজনীতি করতে নেমেছেন, আশা করি মানুষ তাঁদের ধিক্কার জানাবেন। সাতশো-আটশোজন কবি, আবৃত্তিকার, কথা সমন্বয়কারী, অধ্যাপক, আলোচক, শিল্পী ডাক পেয়ে আসছেন। আর কত ডাকতে পারে একটা কবিতা অ্যাকাডেমি? গ্রাম, শহর, জেলা, মহকুমা, ব্লক সমস্ত স্তর থেকে, সমস্ত সম্প্রদায় থেকে এই অ্যাকাডেমি কবি-আবৃত্তিকারদের আমন্ত্রণ জানিয়ে থাকে। আট বছরের মুদ্রিত অনুষ্ঠানসূচি দেখলেই জানা যাবে।’
সাধারণত প্রতি বছরের কবিতা উৎসব সংশ্লিষ্ট বছরের অর্থবর্ষ শেষ (৩১ মার্চ) হওয়ার মধ্যে করতে হয়। ২০২৪-’২৫ সালের সেই উৎসবটি হয়নি। হয়নি যে, তা বাচিকশিল্পী ব্রততীর কথাতেও স্পষ্ট। যিনি ঘটনাচক্রে, কবিতা অ্যাকাডেমির অন্যতম সদস্যও বটে। কেন সেই উৎসব বন্ধ হল, তা নিয়ে বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ উঠেছে। ‘প্রশাসনিক’ হস্তক্ষেপের জল্পনাও রয়েছে। সেই খবর করতে গিয়ে আনন্দবাজার ডট কম সুবোধের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল। কিন্তু ২৪ ঘণ্টা অপেক্ষা করার পরেও সুবোধের জবাব আসেনি। শেষমেশ সুবোধ সমাজমাধ্যমে ওই বিষয়ে বক্তব্য জানিয়েছেন। কিন্তু সেখানেও উৎসব কেন বন্ধ হল, সে বিষয়ে অ্যাকাডেমির চেয়ারম্যানের তরফে কোনও ব্যাখ্যা মেলেনি।