Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Subrata Mukherjee

Subrata Mukherjee Death: মায়ের মনস্কামনা পূর্ণ করেছিলেন রক্ষাকালী, সুব্রতর প্রয়াণে শোকস্তব্ধ পূর্ব বর্ধমানের মণ্ডল গ্রাম

মামা সুকুমার চট্টোপাধ্যায় ভাগ্নের স্মৃতিচারণায় বলেন, ‘‘সুব্রতর মা সাবিত্রী সন্তান চেয়ে রক্ষাকালী মায়ের কাছে মানত করেন। সেই মনস্কামনা পূর্ণ হয়।’’

এই মন্দিরেই সন্তান কামনায় মানত করেছিলেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের মা।

এই মন্দিরেই সন্তান কামনায় মানত করেছিলেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের মা। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০২১ ২২:৫২
Share: Save:

সন্তান কামনায় বাপের বাড়ির গ্রামের আরাধ্য দেবী রক্ষাকালীর কাছে মানত করেছিলেন মা সাবিত্রী মুখোপাধ্যায়। রক্ষাকালী মায়ের কৃপায় পূরণ হয়েছিল মনস্কামনা। সাবিত্রী মুখোপাধ্যায়ের বিশ্বাস, মানতের জোরেই সন্তান সুব্রত এসেছে পৃথিবীতে।

পরবর্তীকালে সেই সুব্রতই হয়ে ওঠেন বাংলার রাজনীতির অন্যতম বর্ণময় চরিত্র। তাঁর প্রয়াণে শোকাতুর পূর্ব বর্ধমানের মেমারি ২ ব্লকের বড়পলাশন ১ পঞ্চায়েতের মণ্ডল গ্রামের মামার বাড়ির আত্মীয় পরিজন। তাঁদের আক্ষেপ, সুব্রতবাবু অসুস্থ হওয়ার পর তাঁর সুস্থতা কামনায় তাঁরা রক্ষাকালী মায়ের কাছে প্রার্থনা করেছিলেন। সুব্রতবাবু সুস্থও হয়ে উঠছিলেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার রাতে আচমকাই চির ঘুমের দেশে পাড়ি দিলেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়।

মণ্ডল গ্রামে মামার বাড়ির যে মাটির ঘরে সুব্রতবাবুর জন্ম, সেই বাড়ি আজও অক্ষত। মামা সুকুমার চট্টোপাধ্যায় চোখের জল ফেলতে ফেলতেই প্রিয় ভাগ্নের স্মৃতিচারণা করেন। বলেন, ‘‘সুব্রতর মা সাবিত্রী সন্তান কামনায় গ্রামের রক্ষাকালী মায়ের কাছে মানত করেছিলেন। রক্ষাকালী মায়ের কৃপায় সাবিত্রীর মনস্কামনা পূরণ হয়।’’ সুকুমারবাবু জানান, মণ্ডল গ্রামেই জন্ম ভাগ্নে সুব্রতর। মামাবাড়ির স্নেহ ভালবাসায় সুব্রতর শৈশব কাটে। তাঁর লেখাপড়া জীবন শুরু হয় পূর্ব বর্ধমান জেলার পূর্বস্থলী ১ ব্লকের নাদনঘাট থানার ন-পাড়ার পৈতৃক বাড়িতে।

সুব্রতর বাবা অশোকনাথ মুখোপাধ্যায় ছিলেন নাদনঘাটের জয়পুরিয়া হাইস্কুলের শিক্ষক। পৈতৃক ভূমি ও মামার বাড়ি এই দুই জায়গারই প্রতি গভীর টান ছিল সুব্রতর। সুকুমারবাবু দাবি করেন, এই দুই এলাকার উন্নয়নে শেষদিন পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন সুব্রত। সুব্রতর চেষ্টাতেই মণ্ডল গ্রামের বাসিন্দারা পায় সজলধারা প্রকল্পে পানীয় জলের পরিষেবা।

মণ্ডল গ্রামের বাসিন্দা মেমারি ২ পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ স্বপ্না দে ও এলাকার বাসিন্দা দেবকুমার চট্টোপাধ্যায় বলেন, রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী হলেও সুব্রত মুখোপাধ্যায় মণ্ডলগ্রামের মানুষজনের কাছে গ্রামের ভাগ্নে হিসাবেই আদরের ছিলেন। মামার বাড়িতে এলেই তিনি তাঁর ছোট বেলার খেলার সাথী, বন্ধু বান্ধব সবার খোঁজ নিতেন । তাঁদের সঙ্গে গল্পগুজব হাসি ঠাট্টায় মেতে উঠতেন ।

স্বপ্নাদেবী বলেন, সবাইকে আপন করে নেওয়ার একটা ঈশ্বরদত্ত ক্ষমতা ছিল সুব্রতবাবুর মধ্যে। দেবকুমার বলেন, তাঁদের গ্রামের রক্ষাকালী মায়ের জন্য তিনি রূপোর একটি খাঁড়া তৈরি করে দিয়েছিলেন। এ ছাড়াও রক্ষাকালী মাকে সাজানোর জন্য অনেক গয়নাও গড়িয়ে দিয়েছিলেন। প্রতিবছর রক্ষাকালী মায়ের পুজোর সময়ে এসে মায়ের মন্দিরে দু’হাত জোড় করে বসে সুব্রতবাবু প্রার্থনা করতেন। সে সবই এখন স্মৃতির পাতায়।

সুব্রতবাবুর মামাতো ভাই সিদ্ধার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ছোটবেলায় সুব্রতদা অসুস্থ হলে তাঁর মা সাবিত্রীদেবী ছেলেকে কোলে নিয়ে ন-পাড়া থেকে পায়ে হেঁটে বাপের বাড়ি মণ্ডলগ্রামে চলে আসতেন। সাবিত্রীদেবী মণ্ডল গ্রামের মা রক্ষাকালীর কাছে মানত করতেন। বড় হয়ে রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ নেতা ও মন্ত্রী হয়ে যাওয়ার পরেও সুব্রতর মনে রক্ষাকালী মায়ের প্রতি সেই বিশ্বাসে কোনও ছেদ পড়েনি বলে দাবি ভাই সিদ্ধার্থর।

সকালে সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের পৈতৃক ভিটেয় গিয়ে শ্রদ্ধা জানান রাজ্যের মন্ত্রী তথা স্থানীয় বিধায়ক স্বপন দেবনাথ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Subrata Mukherjee bankura TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE