Advertisement
০৫ মে ২০২৪
Recruitment Case

কালীঘাটে তৃণমূলের দলীয় দফতরে বসে চাকরি বিক্রির চক্র চালাতেন ‘কাকু’ সুজয়, চার্জশিটে দাবি ইডির

নিয়োগ দুর্নীতিতে গ্রেফতার হওয়া সেই সুজয় ওরফে ‘কালীঘাটের কাকু’ সম্পর্কে এ বার চার্জশিটে ইডি-র অভিযোগ, খাস কালীঘাটে তৃণমূলের দলীয় দফতরে বসে চাকরি বিক্রির চক্র চালাতেন তিনি।

Kalighater Kaku

সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র। —ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০২৩ ০৭:৩৬
Share: Save:

স্কুলে নিয়োগ দুর্নীতিতে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র যে অন্যতম ‘মুখ্য চরিত্র’, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে সেই ইঙ্গিত মিলেছে আগেই। চার্জশিটে ইতিমধ্যেই অভিযোগ, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বার্তা (কী ধরনের বার্তা, তা যদিও এখনও স্পষ্ট নয়) এই দুর্নীতিতে ধৃত মানিক ভট্টাচার্যের কাছে নিয়ে যেতেন সুজয়ই। নিয়োগ দুর্নীতিতে গ্রেফতার হওয়া সেই সুজয় ওরফে ‘কালীঘাটের কাকু’ সম্পর্কে এ বার চার্জশিটে ইডির অভিযোগ, খাস কালীঘাটে তৃণমূলের দলীয় দফতরে বসে চাকরি বিক্রির চক্র চালাতেন তিনি।

শুক্রবার ‘কাকু’র নামে ওই চার্জশিট পেশ করেছে ইডি। সেখানে তদন্তকারী সংস্থাটির দাবি, জেরায় তদন্তকারী অফিসারদের কাছে এই বিষয়টি কবুল করেছেন সুজয়। এই চার্জশিটেই ইডি জানিয়েছে, নিয়োগ দুর্নীতিতে জেল হেফাজতে থাকা প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের অপসারিত সভাপতি মানিকের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ছিল সুজয়ের। তদন্তকারীদের দাবি, সুজয়ই তাঁদের জানিয়েছেন যে, মূলত তাঁর সুপারিশেই ২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের প্রার্থী হিসেবে টিকিট পেয়েছিলেন মানিক।

সম্প্রতি দায়ের করা ওই চার্জশিটে ইডির অভিযোগ, কালীঘাটের তৃণমূল অফিসে বসেই বাঁকা পথে আসা চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন সুজয়। নিয়োগ দুর্নীতিতে অভিযুক্ত তৃণমূলের দুই বহিষ্কৃত যুব নেতা কুন্তল ঘোষ ও শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বেসরকারি কলেজ সংগঠনের নেতা তাপস মণ্ডলের সঙ্গে কালীঘাটের ওই অফিসে বসেই বৈঠকও করেছেন তিনি। কুন্তল ও তাপসের মাধ্যমে ২০১২-১৪ সালের টেট চাকরিপ্রার্থীদের নামের তালিকা তিনিই মানিককে পাঠিয়েছিলেন বলেও দাবি তদন্তকারীদের।

সুজয় যে ‘কালীঘাটের কাকু’ হিসেবে ক্ষমতার বৃত্তে পরিচিত, তা টিভি-ক্যামেরার সামনেই দাবি করেছিলেন তাপস। পরে জানা যায়, তিনি কাজ করতেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সংস্থার অফিসে। তাঁর ‘সাহেব’ অভিষেককে কোনও দিন ছোঁয়া যাবে না বলে দাবি করেছিলেন সুজয় নিজেই। এ হেন ‘প্রভাবশালী কাকু’র খাস কালীঘাটে বসে চাকরি বিক্রির চক্র চালানোকে তাই তাৎপর্যপূর্ণ তথ্য হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে বলে ইডি সূত্রে দাবি।

এরই মধ্যে সুজয়ের মোবাইল থেকে বেশ কিছু ভয়েস-বার্তা নিয়ে তদন্তে নেমেছে ইডি। তাদের দাবি, সেগুলি আদালতে প্রামাণ্য নথি হিসেবে পেশ করতে পারলে, আরও অনেক প্রভাবশালীর নাম উঠে আসতে পারে। এ জন্য সুজয়ের গলার স্বরের নমুনা প্রয়োজন। কিন্তু ওই নমুনা দিতে আপত্তি জানান সুজয়। আদালতে সেই আপত্তি টেকেনি। আদালত জানিয়েছিল, প্যারোল থেকে জেলে ফেরার তিন দিনের মধ্যে ওই নমুনা সংগ্রহ করবে ইডি। তদন্তকারীদের অভিযোগ, কোনও ভাবে সেই নমুনা যাতে না দিতে হয়, তার জন্যই অসুস্থতার বাহানায় সময় নষ্টের ‘খেলায়’ নেমেছেন সুজয়।

হৃদ্‌রোগের চিকিৎসা বেসরকারি হাসপাতালে করাতে চেয়ে মঙ্গলবার হাই কোর্টে মামলা দায়ের করেন সুজয়। তাতে আপত্তি জানায় ইডি। বিচারপতির প্রশ্ন, এতে অসুবিধা কোথায়? বিচারপতির মন্তব্য, ‘‘হাসপাতাল নিয়ে তো প্রত্যেকেরই নিজস্ব পছন্দ-অপছন্দ থাকে। তবে এ ক্ষেত্রে কেন সেটা বেসরকারি হাসপাতাল, তা বোঝা যাচ্ছে না। সুজয় যদি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে চান, তাতে ইডির আপত্তি কেন— এই প্রশ্ন তুলে বৃহস্পতিবারের মধ্যে বিষয়টি সম্পর্কে তদন্তকারী সংস্থাটিকে তাদের মতামত জানানোর নির্দেশ দিয়েছেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ। জামিন না দিয়েই চিকিৎসা হলে অসুবিধা আছে কি না, তা-ও আদালতে জানাবে ইডি।

এসএসকেএম হাসপাতালের অবশ্য দাবি, সুজয়ের হার্টে ব্লকেজ আছে। বাইপাস সার্জারি দরকার। এর পরেই বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করানোর ইচ্ছাপ্রকাশ করেন ‘কালীঘাটের কাকু’। এসএসকেএম-এর প্রতি তাঁর আস্থা নেই বলেও জানিয়েছেন তিনি। বিরোধী শিবির যদিও প্রশ্ন তুলেছে, খোদ মুখ্যমন্ত্রী যে এসএসকেএমে চিকিৎসা করান, তার প্রতি ‘কাকু’র অনাস্থা কেন? ইডির আইনজীবী ফিরোজ এডুলজির অভিযোগ, বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা হলে, ১৬ দিন প্যারোলে থাকবেন। তার পর আবার কোনও অজুহাতে এসএসকেএম চলে যাবেন সুজয়। তাই এই পরিকল্পনা। উল্লেখ্য, নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ৩০ মে গ্রেফতার হন সুজয়। তিনি জেলে থাকাকালীন তাঁর স্ত্রীর মৃত্যু হয়। স্ত্রীর শেষকৃত্যের জন্য প্যারোলে মুক্তি পান তিনি। কিন্তু প্যারোল সম্পূর্ণ হওয়ার পরে জেলে ফিরেই ফের অসুস্থ হয়ে পড়েন সুজয়। তখন এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

ED
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE