বুথ লেভল অফিসার (বিএলও) নিয়োগ নিয়ে বিতর্ক বাধল উত্তর ২৪ পরগনার হাসনাবাদ ও হিঙ্গলগঞ্জে। যোগ্য স্থায়ী সরকারি কর্মী থাকা সত্ত্বেও তৃণমূল কংগ্রেসের নেতাদের বিএলও হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করে বৃহস্পতিবার সরব হয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। বিএলও হিসেবে নিয়োগ হওয়া হিঙ্গলগঞ্জের তিন জনের নামও সমাজমাধ্যমে প্রকাশ করেছেন শুভেন্দু। তাঁর দাবি, ‘‘এঁরা শিক্ষক হলেও প্রত্যেকেই তৃণমূলের নেতা।’’ অভিযোগ জমা পড়ায় জেলা প্রশাসনের কাছে এই বিষয়ে রিপোর্ট তলব করেছে নির্বাচন কমিশন।
আগামী বিধানসভা ভোটের আগে নির্বাচন সংক্রান্ত বিভিন্ন কাজের জন্য রাজ্য জুড়ে বিএলও নিয়োগ হচ্ছে। কমিশনের নির্দেশে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনই এই কাজ করছে। কমিশনের বিধি অনুযায়ী, স্থায়ী সরকারি পদে কর্মরতদেরই বিএলও হিসেবে নিয়োগ করতে হবে। কোথাও সরকারি কর্মী পাওয়া না-গেলে সেই তথ্য শংসাপত্র আকারে জমা করে কমিশনের অনুমতি নিয়ে বিকল্প কাউকে বিএলও নিয়োগ করতে পারবে জেলা প্রশাসন। তবে বিজেপির অভিযোগ, বহু ক্ষেত্রেই নিয়ম ভেঙে শাসক দলের নেতা-কর্মী ও অস্থায়ী কর্মীদের নিয়োগ করা হচ্ছে।
বিরোধী দলনেতার ‘পোস্ট’ করা তালিকায় নাম রয়েছে হাসনাবাদ ও হিঙ্গলগঞ্জের রমেশচন্দ্র দাস, শুভজিৎ সরকার এবং দেবু অধিকারীর। শুভেন্দুর দাবি, রমেশচন্দ্র দাস হাসনাবাদ পঞ্চায়েত এলাকার তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি এবং অস্থায়ী সহকারী শিক্ষক। তৃণমূলের পতাকা হাতে তাঁর ছবিও পোস্ট করেছেন শুভেন্দু। তাঁর অভিযোগ, ‘‘ওই এলাকায় অনেক যোগ্য প্রার্থী থাকা সত্ত্বেও দলীয় ওই নেতাকেই বিএলও করেছে তৃণমূল।’’ রমেশ ও শুভজিৎ অবশ্য দাবি করেছেন, তাঁরা যথাক্রমে স্থায়ী সহকারী শিক্ষক ও স্থায়ী শিক্ষক হিসেবেই বিএলও পদে নিয়োদ পেয়েছেন। কমিশন নির্দেশ দিলে তাঁরা সরে দাঁড়াবেন। রমেশের বক্তব্য, “শিক্ষক হিসেবেই আমাকে বিএলও করা হয়েছে। সেই হিসেবেই আমি কাজ করছি। আমি কোনও রাজনৈতিক মতাদর্শে বিশ্বাস করতে পারি, কিন্তু কোনও দলের নেতা নই। ঊর্ধ্বতন আধিকারিকদের তরফে বারণ করা হলে, আমি আর এই কাজ করব না।” শুভজিতের দাবি, “স্কুলে পড়ানোর পাশাপাশি যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তা মেনে চলা আমার কাজ। আমি কোনও রাজনৈতিক দলের হয়ে সরাসরি কাজ করি না। তবে কোনও রাজনৈতিক দলকে ভালবাসতেই পারি।” তালিকায় নাম থাকা দেবু অধিকারীর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। অভিযোগ, তিনি প্যারা-টিচার হিসেবে কর্মরত, তার পরেও বিএলও-র দায়িত্ব পেয়েছেন।
বিজেপির বসিরহাট সাংগঠনিক জেলার সভাপতি সুকল্যাণ বৈদ্যের অভিযোগ, “অন্যায় ভাবে তৃণমূল বিএলও তালিকায় এঁদের নাম তুলেছে। বিষয়টা নির্বাচন আধিকারিককে জানিয়ে নাম বাদ দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। এ ভাবে বিএলও তালিকায় নাম তুলে ভোটে কারচুপির চেষ্টা করছে তৃণমূল।” কংগ্রেস নেতা হিরণ্ময় দাসেরও দাবি, “তৃণমূল নানা ভাবে চাইছে সরকারি কাজে বাধা দিতে।” তৃণমূলের জেলা সভাপতি বুরহানুল মোকাদ্দিম লিটন অবশ্য বলেছেন, “মানুষের চোখে তৃণমূলকে ছোট করার চক্রান্ত শুরু করেছে বিরোধীরা। মানুষ এর যোগ্য জবাব দেবেন!”
রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের (সিইও) দফতর সূত্রের বক্তব্য, এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনের কাছে রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। কমিশনের স্থির করে দেওয়া বিধি মেনে বিএলও নিয়োগ করার কথা জেলা প্রশাসনেরই। সেই নিয়োগে সরাসরি হস্তক্ষেপ করে না কমিশন। তবে অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ করার সুযোগ রয়েছে তাদের হাতে। বিজেপি এ দিনই ২৯৯১টি বিএলও-র নাম কমিশনে জমা করেছে। তাদের অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট এলকাগুলিতে সরকারি কর্মচারী থাকার পরেও বিধি ভেঙে এদের নিয়োগ করা হয়েছে। সেই তথ্যও খতিয়ে দেখছে কমিশন।
এরই পাশাপাশি, বিধানসভা ভোটের দিকে তাকিয়ে ভোট-কর্মীদের জন্য নতুন পোর্টাল এ দিন উদ্বোধন করেছেন রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক (সিইও) মনোজ আগরওয়াল। সিইও-র দফতর সূত্রের বক্তব্য, নতুন পোর্টাল চাহিদা অনুযায়ী প্রশিক্ষণ, অনলাইন পরীক্ষা, নির্বাচনী অভিজ্ঞতা পর্যবেক্ষণের মতো প্রক্রিয়ায় সহায়ক হবে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)