কাঁথির সভায় শুভেন্দু অধিকারী। নিজস্ব চিত্র
ইদানীং তাঁর আক্রমণের নিশানায় মূলত থাকতেন সর্বভারতীয় তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে বুধবার নিজের শহর কাঁথির সভায় সেই অবস্থান থেকে খানিকটা সরে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি আক্রমণ তীব্র করলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।
ঘটনাচক্রে ২৪ ঘণ্টা আগেই দিল্লিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন শুভেন্দু। ফলে গোটা ঘটনাক্রম নজর এড়াচ্ছে না রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের। এ দিনের সভা থেকে শুভেন্দু স্লোগান তুলেছেন, ‘‘পার্থ-কেষ্ট চুনোপুঁটি/ সব খেয়েছে হাওয়াই চটি।’’ সঙ্গে বলেছেন, ‘‘পঞ্চায়েতে ছোট চোরদের আপনারা ধরুন। বড় চোর ধরার দায়িত্ব আমার।’’ শুভেন্দুর আরও ঘোষণা, ‘‘কাঁথি আর তমলুক লোকসভা নরেন্দ্র মোদীজিকে দেওয়ার দায়িত্ব বিজেপির এই কর্মী শুভেন্দু অধিকারীর।’’
জবাবে শুভেন্দুকে বিঁধে তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘সিবিআইয়ের এফআইআর-এ যাঁর নাম আছে তাঁর তো আত্মসমর্পণ করার কথা। বিজেপি নেতাদের পায়ে ধরে বাঁচতে চাইছেন আর এ সব বলছেন। এ তো বাসে পকেটমারের কৌশল।’’
গত ৩ ডিসেম্বর কাঁথি প্রভাত কুমার কলেজের মাঠে সভা করেন তৃণমূল সাংসদ অভিষেক। তার পাল্টা হিসেবেই এ দিন কাঁথি রেলস্টেশন সংলগ্ন মাঠে শুভেন্দুর সভার আয়োজন ছিল। তবে, অভিষেক প্রসঙ্গে বিশেষ বাক্যব্যয় করেননি শুভেন্দু। বরং তাঁকে ২০১১-র পরে আসা ‘হালি নেতা’ বলে কটাক্ষ করে মন্তব্য করেছেন, ‘‘পিসি মানে কোম্পানির মালিক নন্দীগ্রামে আমার কাছে হেরেছেন। আমি মালিককে হারানো লোক। তাই কর্মচারীর কথার কোনও উত্তর দিই না। পুলিশ না থাকলে ভাইপো কিচ্ছু করতে পারবে না।’’ যার পাল্টা হিসেবে কুণাল বলেন, ‘‘শুভেন্দু তো অভিষেককে ফলো করছেন। এ দিন যেমন কাঁথিতে সভা করেছেন, তেমনই রানাঘাটেও সভা করবেন। তবে কাঁথিতে অভিষেকের সভায় যা লোক হয়েছিল তার এক-চতুর্থাংশ ভিড়ও শুভেন্দুর সভায় হয়নি।’’
শুভেন্দুর কথায় ফিরেছে ‘ডিসেম্বর ডেডলাইন’ প্রসঙ্গও। খানিক ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘আমি বলেছিলাম ডিসেম্বর মাসে তিনটে গুরুত্বপূর্ণ দিনের কথা। আমি বলিনি, ডিসেম্বরে সরকার বদলে দেব। আপনারা কী চান? এমএলএ ভাঙিয়ে সরকার বদলে যাক? না, ভোটে জিতে বিজেপি আসুক? আমরা ভোটে জিতে বিজেপিকে ক্ষমতায় আনব। পশ্চিমবঙ্গেও রাষ্ট্রবাদী সরকার হবে। উত্তরপ্রদেশের মতো বুলডোজ়ার চলবে।’’ তৃণমূল নেতা কুণালের কটাক্ষ, ‘‘২০২০ সালে বিজেপিতে যাওয়ার পরে প্রথমে বললেন, একুশে বিজেপি বাংলায় ক্ষমতায় আসবে। তারপর বলেছিলেন, মহারাষ্ট্রের পরে বাংলায় বিজেপি ক্ষমতায় আসছে। এখন আবার বলছেন, ভোটে জিতে বিজেপি ক্ষমতায় আসবে। কোনওটাই হচ্ছে না, হবেও না।’’
এ দিন শুভেন্দু ছাড়াও সভায় বক্তব্য রাখেন বিজেপি সাংসদ জ্যোতির্ময় সিংহ মাহাতো, বিধায়ক হিরণ চট্টোপাধ্যায়, রুদ্রনীল ঘোষ-সহ জেলা নেতৃত্ব। সকলের কথাতেই ফিরে ফিরে আসে পঞ্চায়েত ভোটের প্রসঙ্গ। আবাস-ক্ষোভ উস্কে দেন বিরোধী দলনেতা। অন্যায্য ভাবে কেউ প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার বাড়ি পেলে সেই তথ্য মণ্ডল সভাপতিদের কাছে জমা দিতে বলেন। আর উপযুক্ত হওয়া সত্ত্বেও যাঁদের নাম তালিকায় নেই, তাঁদের প্রতি শুভেন্দুর বার্তা, ‘‘বিজেপিকে পঞ্চায়েতে জেতাতে পারলে আমরা ২৪-এর লোকসভা ভোটের আগে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বাড়ি পাইয়ে দেব।’’
এ প্রসঙ্গে রাজ্যের মন্ত্রী অখিল গিরি বলছেন, ‘‘তিন ধাপে তদন্ত করে আবাস যোজনায় প্রাপকদের নামের তালিকা তৈরি হয়েছে। তারপরেও যদি উপযুক্ত কেউ বাদ থাকেন, তাঁদের পরিষেবা পাইয়ে দেওয়ার দায়িত্ব তৃণমূলের।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy