সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরে এসএসসি ‘দাগি শিক্ষকদের’ নামের তালিকা প্রকাশ করেছে। আর তাকে সামনে রেখে বিরোধীদের তোপ, সরকার আদতে অনিয়মের কথা স্বীকার করে নিয়েছে। এই সূত্রেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘মহাদাগি’ বলে তোপ দেগেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী! যদিও বিরোধীদের আমলে বিভিন্ন রাজ্যের ‘কেলেঙ্কারি’কে হাতিয়ার করে পাল্টা সরব তৃণমূল। নিশানা করা হয়েছে শুভেন্দুকেও।
নন্দীগ্রামে ‘মন কি বাত’-এর অনুষ্ঠানে রবিবার যোগ দিয়ে বিরোধী দলনেতা বলেছেন, “তালিকা সামনে আসায় গোটা দেশ দেখল, মমতার সরকার অবৈধ ভাবে চাকরি দিয়েছে। যাঁরা চাকরি হারালেন, সুপ্রিম কোর্টের ভাষায় তাঁরা দাগি হলে, মমতা ও তাঁর সরকার মহাদাগি!” তাঁর সংযোজন, “জীবনকৃষ্ণ সাহার মতো অনেকেই পার্থ চট্টোপাধ্যায়, ভাইপোর এজেন্ট ছিলেন। ওঁরা যে টাকা তুলেছেন, তার ৭৫-৮০% সরাসরি কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে গিয়েছে। ভাইপোর নামও এসেছে। যাঁরা এসআইআর নিয়ে চিৎকার করছিলেন, তাঁদের বলব ‘চাকরি চোর, গদি ছোড়’।” এসএসসি ১৮০৬ জনের ‘দাগি’-তালিকা প্রকাশ করলেও, আদতে সংখ্যাটা ২১০০-র বেশি বলে দাবি তাঁর। এই সূত্রেই ডেবরায় তিনি বলেছেন, “তালিকা থেকে মুখ্যমন্ত্রী ও অনেকের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়-সহ ২৫০-৩০০ লোককে বাদ দেওয়া হয়েছে। মামলাকারীরা সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে ১৮০৬ জনের তালিকার সঙ্গে সিবিআইয়ের তালিকা মিলিয়ে দেখার আবেদন জানান।” তালিকায় না-থাকা বাকি শিক্ষকদের ‘যোগ্য’ বলেছেন শুভেন্দু। ওই শিক্ষকদের আবার যাতে নিয়োগ-পরীক্ষা না দিতে হয়, সে জন্য প্রধান বিচারপতির কাছে মুখ্যমন্ত্রী যাতে আবেদন জানান— এমন দাবিও তুলেছেন। এই প্রেক্ষিতে ‘চুরি’র দায় নিয়ে মমতার পদত্যাগ দাবি করেছেন কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার।
রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু অবশ্য বলেছেন, “বিরোধী দলনেতা কী বলবেন, সেটা তাঁর ব্যাপার। আমরা আদালত যা বলেছে, সেটাই শুনব। বিষয়টি আইনজীবী দেখছেন।” এই পরিস্থিতিতে শুভেন্দুকেই নিশানা করেছেন এসএসসি-র আইনজীবী তথা তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর বক্তব্য, “সব শুভেন্দু করিয়েছেন। দুই মেদিনীপুর, বাঁকুড়া ও মুর্শিদাবাদে তৃণমূলের তৎকালীন পর্যবেক্ষক ছিলেন তিনি। ওই সব জেলা থেকেই বেশি দাগিদের নাম রয়েছে।” শুভেন্দুর পাল্টা দাবি, যে তালিকা প্রকাশিত হয়েছে, তাতে তাঁর এবং তাঁর সঙ্গে ২০২০-তে যাঁরা বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন, তাঁদের কারও আত্মীয়ের নাম নেই।
সরকারকে নিশানা করেছে সিপিএম-ও। সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, “তালিকা প্রকাশ করে সরকার দুর্নীতির দায় স্বীকার করল। এসএসসি-র দেওয়া তালিকাতেও কারচুপি। লিস্ট ১ মানে কী? কয়েকটা প্রজন্মকে ধ্বংস করার জন্য তৃণমূলের ছক।” প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকারের বক্তব্য, “প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী ও আমলারা জেলে, গোটা শিক্ষা ব্যবস্থা লাটে তুলে দিয়েছে যারা, তারা এত দিনে একটা তালিকা দিয়েছে। শিক্ষা দফতর যোগ্য-অযোগ্য আগে আলাদা করেনি বলেই ২৬ হাজার চাকরি বাতিল হয়েছে। এখন যে তালিকা দেওয়া হয়েছে, সেটাই কি সম্পূর্ণ?”
এই প্রেক্ষিতে সিপিএম ও বিজেপিকে এক পঙ্ক্তিতে রেখে সরব হয়েছে তৃণমূল। দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেছেন, “কিছু অন্যায় হয়েছে বলেই তদন্ত, গ্রেফতার হচ্ছে। কিন্তু মধ্যপ্রদেশে (বিজেপি আমলে) ব্যাপম কেলেঙ্কারি, ত্রিপুরায় (বাম জমানায়) ১০ হাজারের বেশি শিক্ষকের নিয়োগ বাতিলের পরে বিজেপি, সিপিএম কী বলবে? সিপিএমের আমলে তাদের প্রত্যেক সর্বক্ষণের কর্মীর বাড়িতে কী করে সরকারি চাকরি হয়েছে?”
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)