জম্মু ও কাশ্মীরের উধমপুরে জঙ্গিদের সঙ্গে গুলির লড়াইয়ে নিহত জওয়ান ঝন্টু আলি শেখের শেষকৃত্যে দলের কোনও নেতা না যাওয়ায় সমালোচনার মুখে পড়েছে বিজেপি। নদিয়ার তেহট্টে মঙ্গলবার ‘নাগরিক সভা’র মঞ্চে সেই পরিবারের লোকজনকে তুলে ‘শ্রদ্ধাজ্ঞাপন’ করলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তবে শুধু ঝন্টুর পরিবার নয়, এর আগে নিহত নদিয়ার আরও তিন জওয়ানের পরিবারের লোকজনকেও সেখানে আনা হয়েছিল। প্রত্যেক পরিবারকে দু’লক্ষ টাকার আর্থিক অনুদান তুলে দিয়েছেন বিরোধী নেতা।
তেহট্ট জিৎপুর মোড়ে ওই মঞ্চে দাঁড়িয়ে শুভেন্দু বলেছেন, “প্রতিরক্ষা দফতর শ্রদ্ধার সঙ্গে জওয়ানের মরদেহ বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছে এবং তাঁকে সম্মান দেওয়ার জন্য সব কিছু করা হয়েছে। রাষ্ট্রের জন্য যাঁরা নিজেদের বলিদান দেবেন, তাঁদের সঙ্গে আমরা নিশ্চিত ভাবেই আছি।” কাশ্মীরে নিহত পর্যটকদের পরিবারের পাশাপাশি ঝন্টুর পরিবারকেও ১০ লক্ষ টাকা এককালীন সাহায্য দেওয়ার কথা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই প্রসঙ্গ তুলে শুভেন্দুর বক্তব্য, “ঝন্টু শেখের পরিবারকে মুখ্যমন্ত্রী অর্থনৈতিক সাহায্য এবং কর্মসংস্থান দেওয়ার কথা বলেছেন। বাকি পরিবারগুলোও যাতে এই ধরনের সহযোগিতা পায় এবং তারা যেন উপেক্ষিত না হয়, সেই আবেদন মুখ্যমন্ত্রীর কাছে করব।” তাঁর কথায়, “রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি সব সময় সমান থাকে, তাঁর দু’টো চোখ খোলা থাকবে, একটা চোখ বন্ধ থাকবে না— এটা আমি আশা করব।”
ঝন্টুর বাবা সবুর আলি শেখ এ দিন মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া, ২০১৯ সালে পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলায় নিহত পলাশিপাড়ার হাঁসপুকুরিয়া গ্রামের সুদীপ বিশ্বাস, ২০২০ সালে বারামুলা সেক্টরে নিহত তেহট্ট থানার রঘুনাথপুরের সুবোধ ঘোষ এবং ২০২২ সালে উত্তরপ্রদেশের ঝাঁসিতে ট্যাঙ্ক বিস্ফোরণে মৃত হাঁসপুকুরিয়ার সুকান্ত মণ্ডলের পরিবারের লোকজনও হাজির ছিলেন।
শুধু এক জন কেন, নিহত অন্য জওয়ানদের পরিবারকে সাহায্যের যে কথা বিরোধী দলনেতা বলেছেন, তার প্রেক্ষিতে তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদারের অবশ্য পাল্টা দাবি, ‘‘শহিদের ধর্ম বিচার করে ঝন্টুর বাড়িতে যেতে শুভেন্দুর পাঁচ দিন লেগে গিয়েছে! ধর্ম দেখে শহিদ বাছাই করার সঙ্কীর্ণতা আড়াল করতে তিনি অপ্রসাঙ্গিক কথা বলছেন।’’
সম্প্রতি পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়ার এক যুবকের আগ্নেয়াস্ত্র হাতে ছবি পোস্ট করে পুলিশের কাছে আটক হয়েছিলেন কৃষ্ণনগরের এক সংখ্যালঘু যুবক। সরাসরি তাঁর নাম না-করেও শুভেন্দু বলেন, “এক যুবক ভাইকে দেখি পাকিস্তানের সেনার সঙ্গে ছবি ছাড়তে, কষ্ট লাগে। ভারতবর্ষ উদার দেশ বলে আপনারা এগুলো করতে পারছেন। পশ্চিমবঙ্গে কেউ বা কারা আপনাদের সুযোগ দিচ্ছে। আমি ধন্যবাদ জানাব অসমের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত বিশ্বশর্মাকে, তিনি ওই রাজ্যের এক বিধায়ককে জেলে পুরে দিয়েছেন!”
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)