Advertisement
E-Paper

আলসার রুখতে অস্ত্র বন্ধু-জীবাণুর মিষ্টি

শরীরের ভিতরে ব্যাক্টেরিয়া। শরীরের বাইরে ব্যাক্টেরিয়া। শত্রু ব্যাক্টেরিয়া। বন্ধু ব্যাক্টেরিয়া।

মধুরিমা দত্ত

শেষ আপডেট: ২৩ জুন ২০১৬ ০৮:৫৫

শরীরের ভিতরে ব্যাক্টেরিয়া। শরীরের বাইরে ব্যাক্টেরিয়া। শত্রু ব্যাক্টেরিয়া। বন্ধু ব্যাক্টেরিয়া।

বন্ধু ব্যাক্টেরিয়ার সাহায্য নিয়ে শত্রু ব্যাক্টেরিয়া দমনের নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন গবেষকেরা। এমনই এক ক্ষতিকর ব্যাক্টেরিয়াকে রুখতে শরীরের ভিতর থেকেই বন্ধু ব্যাক্টেরিয়া নিয়ে নতুন প্রোবায়োটিক তৈরি করা গিয়েছে বলে বালিগঞ্জ সায়েন্স কলেজের গবেষকদের দাবি।

লাগাতার পেটব্যথা। গ্যাসের সমস্যা। বদহজম। ওষুধ খেলে তখনকার মতো যন্ত্রণা গায়েব। কিন্তু অ্যান্টিবায়োটিকের রেশ কাটতে না-কাটতেই ফিরে আসে একই উপসর্গ। নিরুপায় হয়ে ডাক্তারের কাছে গেলে অনেক ক্ষেত্রেই ছুরিকাঁচি। অস্ত্রোপচার করে ক্ষুদ্রান্ত্রের ঘা থেকে মিলছে মুক্তি। ক্ষুদ্রান্ত্রের আলসার বা ঘা-এর মূলে আছে একটি ব্যাক্টেরিয়া। নাম তার ‘আলসারেটিভ কোলাইটিস’। বালিগঞ্জ সায়েন্স কলেজের গবেষকদের দাবি, তাঁদের তৈরি নয়া প্রোবায়োটিক ওই ক্ষতিকর ব্যাক্টেরিয়ার জারিজুরি ভেঙে দেবে।

শুধু তা-ই নয়, এই প্রোবায়োটিক দিয়েই হরেক কিসিমের মিষ্টি, দই আর স্বাস্থ্যকর পানীয় তৈরি করবে কলকাতার একটি মিষ্টি প্রস্তুতকারক সংস্থা। তাদের তৈরি পানীয় এবং মিষ্টান্নে থাকবে আলসার-সহ পেটের নানান রোগ থেকে মুক্তির চাবিকাঠি। ছত্রাক থেকে তৈরি পেনিসিলিন একদা হয়ে উঠেছিল বহু রোগব্যাধি মোকাবিলার মোক্ষম অস্ত্র। সেই ভাবেই বন্ধু ব্যাক্টেরিয়া বা নতুন প্রোবায়োটিক দিয়ে তৈরি খাবারে থাকবে পেটের রোগের সঙ্গে, বিশেষত ‘ইনফ্ল্যামেটরি বাওয়েল ডিজিজ সিন্ড্রোম’-এর সঙ্গে লড়াই চালানোর বীজ। এমনই দাবি বালিগঞ্জ সায়েন্স কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষিকা-গবেষিকা এণা রায় বন্দ্যোপাধ্যায়ের।

কী এই প্রোবায়োটিক?

প্রোবায়োটিক হল মানুষের শরীরে থাকা সেই বন্ধু ব্যাক্টেরিয়া বা জীবাণু, যা আক্রমণকারী জীবাণুর কবল থেকে শরীরকে রক্ষা করে। রোগব্যাধি হলেই নিয়মবিধি না-মেনে গুচ্ছের অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া আধুনিক জীবনচর্যার বদ-অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। চিকিত্সকেরা বারবার সতর্ক করে দেওয়া সত্ত্বেও পরিস্থিতি খুব বেশি পাল্টায়নি। রোগব্যাধি হলে অ্যান্টিবায়োটিক আমাদের শরীরের ক্ষতিকর জীবাণুকে নষ্ট করে ঠিকই। কিন্তু তার দাপটে মারা যায় অনেক বন্ধু ব্যাক্টেরিয়াও। ফলে শরীরের পক্ষে উপকারী বন্ধু জীবাণুর সংখ্যা কমে যাওয়ায় ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যায় স্বাভাবিক রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা। তখন বাইরে থেকে শরীরের ভিতরে কিছু বন্ধু পাঠানোর প্রয়োজন দেখা দেয়। এই বহিরাগত এক বন্ধুর নাম প্রোবায়োটিক। চিকিত্সকেরা জানাচ্ছেন, বাইরে থেকে প্রোবায়োটিক প্রয়োগ করে শরীরে বন্ধু ব্যাক্টেরিয়ার সংখ্যা বাড়ানো যায়।

এণাদেবীর দাবি, তাঁদের তৈরি নতুন ধরনের প্রোবায়োটিক আসলে এমনই বন্ধু জীবাণুর বাড়ানো হাত। ওই প্রোবায়োটিকের নাম ‘ই-এবিটি’ বা ইকোকম্প্যাটিবল-এবিটি। সংশ্লিষ্ট মিষ্টান্ন সংস্থার পক্ষ থেকেই প্রথমে এই গবেষণার প্রস্তাব এসেছিল বালিগঞ্জ সায়েন্স কলেজের কাছে।

‘এবিটি’ হল তিনটি জীবাণু,— এ, বি এবং টি। এই তিনটি জীবাণুকে নিয়ে নির্দিষ্ট তাপে এবং পদ্ধতিতে লালন করেছেন গবেষকেরা। দেখা গিয়েছে, এই আলাদা তিনটি জীবাণু একসঙ্গে মিলে একটি নতুন প্রোবায়োটিকের হদিস দিচ্ছে। এই নতুন ‘ই-এবিটি’ সব থেকে ভাল কাজ করে ছানা কাটার জলে, দুগ্ধজাত যে-কোনও দ্রব্যে। স্ট্রবেরি থেকে তৈরি জিনিসেও একই ভাবে সক্রিয় থাকে ওই প্রোবায়োটিক। গবেষকেরা জানাচ্ছেন, বাজারচলতি অনেক প্রোবায়োটিক আছে। বিভিন্ন সময়ে চিকিত্সকেরা প্রেসক্রিপশন বা ব্যবস্থাপত্রে সেগুলোর কথা লিখেও থাকেন। কিন্তু সেই সব প্রোবায়োটিক একটি জীবাণু দিয়ে তৈরি। এণাদেবী এবং তাঁর সঙ্গী গবেষকদের দাবি, তিনটি পৃথক জীবাণু দিয়ে তাঁদের তৈরি প্রোবায়োটিক আরও বেশি কর্মক্ষম। ছানা জাতীয় দ্রব্য, দই ইত্যাদিতে ব্যবহার করলে এর কার্যক্ষমতা যথাযথ ভাবে প্রকাশ পাবে। পেটের রোগে সুরাহা মিলবে অনেকটাই।

দই জাতীয় দ্রব্য অনেকেই খান না। সে-ক্ষেত্রে কী করে বেশি মানুষের কাছে পৌঁছবে এই প্রোবায়োটিক?

গবেষকেরা জানাচ্ছেন, শুধু দই নয়, চ্যবনপ্রাশের মতো বিভিন্ন ভেষজ দ্রব্য বা বিভিন্ন স্বাস্থ্যকর পানীয়েও এই প্রোবায়োটিক ব্যবহার করা যাবে। মিষ্টান্ন সংস্থার তরফে ধীমান দাস বলেন, ‘‘চিকিৎসাবিদ্যার পরিভাষায় যাকে বলে ‘ইনফ্ল্যামেটরি বাওয়েল সিন্ড্রোম’, তার ওষুধ এখনও নেই। ছানা কাটার জলে এই প্রোবায়োটিক মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারলে ভালই হবে।’’ তবে পরীক্ষানিরীক্ষা শেষ হতে আরও কিছু দিন অপেক্ষা করতেই হবে বলে জানান তিনি।

সকলের শরীরে এই প্রোবায়োটিক সমান ভাবে কাজ করবে, এমনটা ভেবে নেওয়া ঠিক হবে না বলে জানাচ্ছেন গ্যাসট্রোএন্টেরোলজিস্ট গোপালকুমার ঢালি। তিনি বলেন, ‘‘বন্ধু ব্যাক্টেরিয়াদের ফিরিয়ে আনতে এর ভূমিকা আছে ঠিকই। তবে মানুষের দেহে প্রয়োগের আগে বিস্তর পরীক্ষানিরীক্ষা প্রয়োজন।’’

ulcer sweets
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy