Advertisement
E-Paper

ব্যবসায় মন্দা, বৈভবের সঙ্গে তবু আপস করতে পারেনি দে পরিবার! খরচ জলের মতো, তাই বিপর্যয়?

অটল শূর রোডের চারতলার বাড়িটি জুড়ে বৈভবের ছাপ স্পষ্ট। বিলাসবহুল জীবনযাত্রার সঙ্গে আপস করতে পারেননি বলেই কি সপরিবারে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত? হেফাজতে নিয়ে দুই ভাইকে জেরা করবে পুলিশ।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১১:৫৯
ট্যাংরার দে পরিবারের সদস্যেরা বিলাসবহুল জীবন যাপন করতেন।

ট্যাংরার দে পরিবারের সদস্যেরা বিলাসবহুল জীবন যাপন করতেন। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

চামড়ার ব্যবসায় মন্দা দেখা দিয়েছিল। কিন্তু বিলাসবহুল জীবনের সঙ্গে আপস করতে পারেননি প্রণয় দে, প্রসূন দে-রা। খরচ হত জলের মতো। কোনও বাড়তি খরচেই রাশ টানতে পারেননি তাঁরা। সেই কারণেই কি নেমে এল এত বড় বিপর্যয়? পুলিশের একাংশ তা-ই মনে করছে। বিভিন্ন সূত্র থেকে তারা জানতে পেরেছে, গলা অবধি ঋণে ডুবে ছিল ট্যাংরার দে পরিবার। বাজারে কয়েক কোটি টাকা ঋণ ছিল তাঁদের। ঋণের অঙ্ক দিন দিন বাড়ছিল। বাড়িটিও বন্ধক দিতে হয়েছিল। কিন্তু বাইরে থেকে তাঁদের আর্থিক অনটন টের পাওয়া যায়নি। পাড়া-প্রতিবেশী বা আত্মীয়স্বজনেরা কেউ বুঝতেই পারেননি, সংসারে টানাটানির দশা।

২১/সি অটল শূর রোডের চারতলার বাড়িটি জুড়ে বৈভবের ছাপ স্পষ্ট। সারা বাড়িতে ভিতরে এবং বাইরে মিলিয়ে অন্তত ২০টি সিসি ক্যামেরা বসানো রয়েছে। সর্বত্র রয়েছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রক যন্ত্র। এ ছাড়া দামি আসবাবপত্র, অত্যাধুনিক প্রযুক্তির একাধিক প্রয়োগ রয়েছে অন্দরমহলে। পরিবারে মাত্র ছ’জন সদস্য। অথচ তাঁদের গাড়ির সংখ্যা তিনটি। সেগুলি সাধারণ কোনও গাড়ি নয়, দামি বিলাসবহুল গাড়ি। দুই ভাইকে এ ছাড়াও মাঝেমাঝে বাইকে চড়ে কারখানায় যাতায়াত করতে দেখা গিয়েছে।

ট্যাংরাতেই বড় চামড়ার কারখানা দে পরিবারের। সেখানে প্রায় ৭০ জন কর্মী তাদের অধীনে কাজ করতেন। খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, এই সব কর্মীর বেতন সম্প্রতি অনিয়মিত হয়ে পড়েছিল। কেউ সময়ে বেতন পেতেন, কেউ পেতেন না। আর্থিক সমস্যার কারণেই কর্মীদের বেতন ঠিক করে দিতে পারছিলেন না দে ভাইয়েরা, অনুমান তদন্তকারীদের।

পুলিশ জানতে পেরেছে, পুরনো পৈতৃক বাড়ি সংস্কার করে চারতলা বানিয়েছিলেন প্রণয় এবং প্রসূন। দেনায় ডুবে যাওয়ার পর সেই বাড়ি বা কারখানা কি বিক্রি করে দেওয়ার কথা ভেবেছিলেন এক বারও? প্রতি দিন সকালে লোক এসে তাঁদের গাড়ি ধুয়ে দিয়ে যেতেন। আনুষঙ্গিক কোনও খরচে কি রাশ টেনেছিলেন? দে পরিবারের কারখানা থেকে বিদেশে চামড়া রফতানি করা হত। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে এই ব্যবসা কি আদৌ আর লাভজনক? নানা প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে পুলিশ। মনে করা হচ্ছে, ব্যবসায় মন্দার কথা তাঁরা বাইরের কাউকে জানতে দিতে চাননি। তার চেয়ে সপরিবার আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত তাঁদের কাছে সঠিক এবং সম্মানের মনে হয়েছিল। একই সঙ্গে এই তিন খুনের নেপথ্যে অন্য সম্ভাবনাগুলিও উড়িয়ে দিচ্ছেন না তদন্তকারীরা। নেপথ্যে থাকতে পারে জটিল কোনও মনস্তত্ত্ব। পরিবারের মধ্যে কী ঘটেছিল, জানার চেষ্টা চলছে।

হাসপাতাল থেকে প্রণয় এবং প্রসূন যে বয়ান দিয়েছেন, তাতে বলা হয়েছে, আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত সায় দিয়েছিলেন দুই বধূ। সোমবার রাতে একসঙ্গে তাঁরা ঘুমের ওষুধ মেশানো পায়েস খান। কিন্তু সকালে ঘুম ভেঙে যায় দুই ভাইয়ের। পুলিশ সূত্রে খবর, অচৈতন্য অবস্থায় এর পর রোমি এবং সুদেষ্ণার হাতের শিরা কেটে দেন তাঁরা। কিশোরী প্রিয়ম্বদার মৃত্যু হয়েছিল আগেই। তবে জেগে ওঠে প্রতীপ। তাকে নিয়ে রাতে গাড়ি করে বেরিয়ে পড়েন দুই ভাই। তিনটি খুন নিয়ে তাঁদের পূর্ণাঙ্গ জেরা করতে চায় পুলিশ। হাসপাতাল থেকে আজকালের মধ্যেই ছেড়ে দেওয়া হতে পারে প্রণয় এবং প্রসূনকে। তার পর তাঁদের হেফাজতে নিয়ে জেরা করা হতে পারে।

Tangra Tangra Murder Case unnatural death
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy