প্রতীকী ছবি।
আগুন শুধু পেঁয়াজেই লেগেছে, এমন নয়। বাজারে শীতকালীন আনাজ কিনতে গিয়েও ছেঁকা লাগছে বাঙালির হাতে। পরিস্থিতি সামাল দিতে সুফল বাংলা বিপণির পাশাপাশি রেশন দোকান ও বিভিন্ন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মাধ্যমে ৫৯ টাকা কিলোগ্রাম দরে আমজনতার হাতে পেঁয়াজ তুলে দিতে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য সরকার।
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, আজ, সোমবার থেকে রাজ্যের ৪৩০টি রেশন দোকান, আরও ১৩১টি সুফল বাংলা স্টল এবং ১০৫টি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মাধ্যমে সরকারি দামে পেঁয়াজ বিক্রি করা হবে। কাল, মঙ্গলবার থেকে তা পাওয়া যাবে আরও ৪০৫টি রেশন দোকানে। আপাতত পুরনো ও ডিজিটাল রেশন কার্ডের ভিত্তিতে প্রতি বারে পরিবার-পিছু এক কিলোগ্রাম পেঁয়াজ দেওয়া হবে। সুফল বাংলার স্টলে বেঁধে দেওয়া দামে পেঁয়াজ বিক্রি শুরু হয়েছে আগেই।
পেঁয়াজ-বিলাপের মরসুমে চেন্নাই-বেঙ্গালুরুর দিকে তাকিয়ে আপাতত কিছুটা সান্ত্বনা পেতে পারে কলকাতা-সহ পশ্চিমবঙ্গ। কেননা এখানে পেঁয়াজে হাত দিলে যদি ছেঁকা লাগে, চেন্নাই-বেঙ্গালুরুতে হাত রীতিমতো পুড়ে যাচ্ছে। দক্ষিণের ওই দুই মহানগরে পেঁয়াজের কেজি ইতিমধ্যে ২০০ টাকা ছুঁয়ে ফেলেছে!
কলকাতা ও শহরতলির বাজারে এখনও পেঁয়াজ বিকোচ্ছে ১৪০ টাকা কেজি দরে। কোথাও কোথাও ১৫০ টাকা। পেঁয়াজকে সামনে রেখে এক শ্রেণির ব্যবসায়ী শীতের আনাজের দামও বাড়িয়ে চলেছেন বলে অভিযোগ করেছেন রাজ্য সরকারের টাস্ক ফোর্স কমিটির সদস্য কমল দে। তিনি বলেন, ‘‘পেঁয়াজকে ঢাল করে অনেক বিক্রেতা শীতের আনাজের দাম বাড়িয়ে চলেছেন। আমরা এ বার শহরের প্রতিটি বাজারে বোর্ড টাঙিয়ে দেব। তাতে আনাজের নির্দিষ্ট দাম লেখা থাকবে। তার থেকে বেশি দাম নিলে ক্রেতারা বোর্ডে দেওয়া ফোন নম্বরে অভিযোগ জানাতে পারবেন।’’
মূলত কলকাতা-কেন্দ্রিক রেশন দোকান ও সুফল বাংলার স্টলেই নির্দিষ্ট দামে পেঁয়াজ মিলবে বলে খবর। তবে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মাধ্যমে পেঁয়াজ পাবেন উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হুগলি, হাওড়ার বাসিন্দারা। রবিবার খাদ্য ভবনে কৃষি বিপণন, খাদ্য দফতরের কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে পেঁয়াজ বিক্রি নিয়ে সবিস্তার আলোচনা করেন মুখ্যমন্ত্রীর কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদার। এই পেঁয়াজ বিক্রির ক্ষেত্রে রেশন দোকানের মালিকেরা কোনও কমিশন নেবেন না বলে জানান অল ইন্ডিয়া ফেয়ার প্রাইস শপ ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বম্ভর বসু।
রবিবার কলকাতার উত্তর থেকে দক্ষিণের বিভিন্ন বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১৩০-১৪০ টাকা কেজি দরে। মানিকতলা, উল্টোডাঙা, কলেজ স্ট্রিট, হাতিবাগান বাজারে পেঁয়াজ কিনতে গিয়ে ঘাম ছুটেছে ক্রেতাদের। লেক, গড়িয়াহাট বাজারে একটু ভাল মানের পেঁয়াজ ১৫০ টাকায় বিকিয়েছে। রাজ্যের কৃষি দফতর সূত্রের খবর, গত বছর ডিসেম্বরে ২৪ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল। চলতি বছরে তা বেড়ে হয়েছে ১৫০ টাকা। রাজ্যের কৃষি দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘আমাদের রাজ্যে মূলত মহারাষ্ট্র থেকে পেঁয়াজ আসে। কিন্তু এ বার বন্যায় ওখানে মোট উৎপাদনের ৩০% পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে গিয়েছে।’’
পেঁয়াজের পাশাপাশি বাড়ছে আলুর দামও। গত সপ্তাহে জ্যোতি এবং চন্দ্রমুখী আলুর দর ছিল যথাক্রমে ২০ এবং ২২ টাকা কেজি। কিন্তু রবিবার কলকাতা ও শহরতলির বিভিন্ন বাজারে তা যথাক্রমে ২২ এবং ২৫ টাকায় বিকিয়েছে। কৃষি বিপণন মন্ত্রী তপন দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘আলুর দাম হঠাৎ কেন বেড়ে গেল, জানি না। সোমবার অফিসে গিয়ে খোঁজ নেব।’’
ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের হামলার পরে হঠাৎই আনাজের দাম বেড়ে যাওয়ায় নবান্নে টাস্ক ফোর্সের সদস্য, পুলিশ-সহ বিভিন্ন দফতরের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। তার পরেও আনাজের দাম নিয়ন্ত্রণে না-আসায় টাস্ক ফোর্স কমিটি চিন্তিত। কমিটির সদস্য কমল দে বলেন, ‘‘বুলবুলের পরে অনেকটা সময় কেটে গিয়েছে। নদিয়া-সহ বেশ কিছু জেলা থেকে শীতের আনাজ ঢুকে গিয়েছে। তবু দাম নিয়ন্ত্রণে আসছে না কেন, সেটা ভাবার বিষয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy