প্রতীকী ছবি।
গত বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি ‘স্টেট সেনটেন্স রিভিউ বোর্ড’ বা সাজাপ্রাপ্ত বন্দিদের মুক্তি সংক্রান্ত পর্যালোচনা কমিটি আদালতের কাছে যে ৮ জন বন্দিকে মুক্তি দেওয়ার সুপারিশ করেছিল, গৌরাঙ্গ দাসের নাম ছিল সেই তালিকায়। ৭১ বছরের গৌরাঙ্গবাবু তখন জলপাইগুড়ি জেলে। একটি খুনের মামলায় ১৮ বছর সাজা খেটে রোগে ভুগে জীর্ণ হয়ে পড়েছিল তাঁর শরীর। কিন্তু গারদের বাইরের জীবন আর দেখা হয়নি বৃদ্ধের। এক বছরেরও বেশি সময় পেরিয়ে এ মাসের গোড়ায় আদালতের অনুমোদন যখন কারা দফতরে পৌঁছয়, মারা গিয়েছেন গৌরাঙ্গবাবু।
গৌরাঙ্গবাবুই প্রথম নন। রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরের একটি সূত্র জানাচ্ছে, এর আগেও যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত দু’জন আসামি মুক্তির খবর পেয়েও সমাজ জীবনে ফিরতে পারেননি। লৌহকপাটের আড়াল থেকে বেরোনোর আগেই মৃত্যু ঘটে তাঁদের। এক জন মারা যান ২০১২ সালে, অন্য জন ২০১৩-এ।
কেন এত দেরি? রাজ্যের বিচারসচিব বিবেক চৌধুরী বলছেন, ‘‘রিভিউ বোর্ডের আহ্বায়ক হিসেবে এ’টুকু বলতে পারি, আমাদের সুপারিশ সময় মতোই হাইকোর্টে পাঠিয়ে দিই।’’ অভিযোগ, হাইকোর্টের অনুমোদন পেতেই দীর্ঘ সময় পেরিয়ে যায়। দেরির কারণ ব্যাখ্যা করে উচ্চ আদালতের একটি সূত্রের বক্তব্য, কমিটি সুপারিশ করলেও প্রতিটি ক্ষেত্রে চুলচেরা বিশ্লেষণ করতে অনেকটা সময় লাগে। কারণ, মুক্তির অনুমোদন দেওয়ার আগে আদালতকে অনেকগুলি ধাপ পেরোতে হয়। যেমন, মুক্তির পরে বন্দিকে সমাজ মেনে নেবে কি না, পরিবার তাঁকে কী ভাবে গ্রহণ করবে অথবা আদৌ করবে কি না, মুক্তির পরে বন্দির গ্রাসাচ্ছাদনের জোগাড় কী ভাবে হবে— এ সবই বিচার করে দেখে আদালত। উত্তর জানতে পুলিশ-প্রশাসনের একাধিক রিপোর্ট খতিয়ে দেখতে হয়। তাতে বিরূপ মন্তব্য থাকলে সংশ্লিষ্ট বন্দির মুক্তির বিষয়টি স্থগিত রাখা হয়।
রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিবকে মাথায় রেখে সাত জন সদস্য রয়েছেন ‘স্টেট সেনটেন্স রিভিউ বোর্ড’-এ। বিচারসচিব, কারাসচিব, রাজ্য পুলিশের ডিজি, কারা দফতরের ডিজি এবং বন্দির বাস যে এলাকায়, সেখানকার পুলিশ কমিশনার বা পুলিশ সুপারকে রেখে বন্দির মুক্তির বিষয়টি পর্যালোচনা করা হয়। নবান্নের একটি সূত্র জানাচ্ছে, বছরে চারটি বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও সব সময় তা হয় না। তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে ২০১১-এর জুন থেকে এই ছ’বছরে ১৫টি বৈঠক হয়েছে। এবং ওই বৈঠকগুলিতে সব মিলিয়ে ৮১৪ জন বন্দির আচরণ, বয়স ও শারীরিক সক্ষমতা পর্যালোচনা করে ২৬২ জনের মুক্তির সুপারিশ করে বোর্ড। এর মধ্যে মুক্তিও পেয়েছেন ২১৬ জন।
রাজ্য প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘প্রতি বারই যে নতুন মুখের মুক্তি নিয়ে পর্যালোচনা হয়, তা নয়। এক বার কোনও কারণে বাতিল হলে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ফের ওই বন্দির পরিবারের আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি ও এলাকায় তার প্রভাব ও গ্রহণযোগ্যতা সংক্রান্ত রিপোর্ট চাওয়া হয়। বোর্ডের সুপারিশ উচ্চ আদালত ফের পর্যালোচনার জন্য ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছে, এমনও হয়েছে।’’ স্বরাষ্ট্র দফতরের একটি সূত্র জানাচ্ছে, রিভিউ বোর্ডের সর্বশেষ দু’টি বৈঠকে ২২ জনের মুক্তি চেয়ে সুপারিশ পাঠানো হয়েছে। তবে আদালত থেকে এখনও সেগুলির অনুমোদন আসেনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy