Advertisement
E-Paper

এ ভাবে খুন কে করল, ভেবে পাচ্ছেন না কেউ

রাতেই তাঁর কোয়ার্টারে চড়াও হয়েছিল খুনিরা। তাঁকে বাইরে ডেকে নিয়ে যায় তারা। তার পরে কুপিয়ে খুন করে। পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, এই ভাবেই সম্ভবত খুন করা হয়েছে গণেশ ঠাকুরকে। কিন্তু কেন? সেই প্রশ্নই এখন ঘুরছে ভান্ডিবাড়ি লাম্বাবালা চা বাগানে।

পার্থ চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০২:৩৫
বাগানে পড়ে ম্যানেজারের নিথর দেহ। তদন্তে পুলিশ কর্মীরা। ছবি: সন্দীপ পাল।

বাগানে পড়ে ম্যানেজারের নিথর দেহ। তদন্তে পুলিশ কর্মীরা। ছবি: সন্দীপ পাল।

রাতেই তাঁর কোয়ার্টারে চড়াও হয়েছিল খুনিরা। তাঁকে বাইরে ডেকে নিয়ে যায় তারা। তার পরে কুপিয়ে খুন করে। পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, এই ভাবেই সম্ভবত খুন করা হয়েছে গণেশ ঠাকুরকে। কিন্তু কেন? সেই প্রশ্নই এখন ঘুরছে ভান্ডিবাড়ি লাম্বাবালা চা বাগানে।

এত দিন সহকারী ম্যানেজার হিসেবে কাজ করতেন গণেশ। সম্প্রতি ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব ভাগাভাগি করে নিয়েছিলেন আর এক সহকারী ম্যানেজার স্বপন বসাকের সঙ্গের। এর মধ্যে বাগানে কোনও বড় শ্রমিক সমস্যা হয়নি। বাগানে সাম্প্রতিক কালে বড় ধরনের কোনও গোলমালের কথা মনে করতে পারছেন না শ্রমিকরাও। বরং, প্রতিদিন সকাল থেকেই কাজ শুরু হয়ে যেত বাগানে৷ মজুরি নিয়েও সমস্যা ছিল না। তা হলে?

এই প্রশ্নেই এখন আতঙ্ক চা বাগানে। একই সঙ্গে উদ্বিগ্ন চা শিল্পমহলও। কারও কথায় উঠে আসছে সোনালি চা বাগানের মালিককে কুপিয়ে, থেঁতলে খুনের ঘটনাও। কেউ আবার ডুয়ার্সে বাগান-কর্তাকে কোপানোর স্মৃতিচারণও করছেন। সকলেই বলছেন, দ্রুত খুনের কিনারা না হলে আতঙ্ক কমবে না।

ইন্ডিয়ান টি প্ল্যান্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (আইটিপিএ) উপদেষ্টা অমৃতাংশু চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ম্যানেজার এ ভাবে খুন হয়ে যাবেন, ভাবাই যায় না৷ এ ধরনের ঘটনা ঘটতে থাকলে তো চা শিল্পে কাজ করার উৎসাহ হারাতে শুরু করবেন সকলে৷’’ ঘটনায় উদ্বিগ্ন ডুয়ার্স ব্র্যাঞ্চ ইন্ডিয়ান টি অ্যাসোসিয়েশনও৷ সম্পাদক সুমন্ত গুহঠাকুরতা বলেন, ‘‘চা শিল্পে এর আগেও এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে৷ আবারও ঘটল৷ এটা খুবই উদ্বেগের বিষয়৷ গোটা শিল্পেই এর খারাপ প্রভাব পড়তে বাধ্য৷’’

সোমবার কাজে যোগ দিতে যাওয়ার সময়ে শ্রমিকরা প্রথম দেখতে পান, কোয়ার্টারের সামনে পড়ে ম্যানেজারের নিথর দেহ৷ সঙ্গে সঙ্গেই অবশ্য সেই খবর চাউর হয়ে যায় গোটা বাগানে৷ দ্রুত সেখানে ছুটে গিয়েছিলেন শ্রমিকরা৷ পরে পুলিশ গিয়ে ভিড় সড়িয়েও দেয়৷ কিন্তু মানুষের কৌতূহল কমেনি৷ সন্ধ্যার সময়েও ম্যানেজারের কোয়ার্টার ঘিরে ছিল শ্রমিকদের জটলা। ম্যানেজারের খুনের ঘটনার জেরে স্বাভাবিক ভাবেই কোনও কাজ হয়নি ভান্ডিবাড়ি বাগানে৷

বাগানের শ্রমিক পদেশ্বর রায় বলেন, ‘‘আমরা সবাই আতঙ্কে রয়েছি। জানি না আজ, মঙ্গলবারও বাগানে কোন কাজ হবে কি না৷’’ জলপাইগুড়ির জেলাশসক মুক্তা আর্য অবশ্য বিষয়টি নিয়ে আতঙ্কিত না হওয়ারই আবেদন জানিয়েছেন। তবে বাগানের লোকজন বলছেন, এত নৃশংস খুনের পরে আতঙ্ক ছড়াবেই। ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে জানা গিয়েছে, সারা শরীর তো বটেই, গণেশের গলার নলিও কাটা ছিল। কাটা আঙুলটিও এখন পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যায়নি।

গণেশবাবুর মৃত্যুর খবর পেয়ে এ দিন ঘটনাস্থলে আসেন তাঁর খুড়তুতো ভাই রাজীব ঠাকুর৷ তাঁর কথায়, “দাদা কাজের লোক বলে মালিক তাঁকে পছন্দ করতেন। কিন্তু, বাগানের কয়েক জন শ্রমিকের তিনি শত্রু হয়ে উঠেছিলেন৷ দিন পনেরো আগে দাদা আমার বাড়িতে গিয়েছিলেন৷ দাদাকে মনমরা দেখে জানতে চাই, কী হয়েছে।’’ রাজীববাবুর দাবি, তখন গণেশ বলেছিলেন, এক শ্রমিক তাঁর কলার ধরে চড় মেরেছেন। রাজীববাবুর অভিযোগ, “মালিক কিন্তু কোনও পদক্ষেপ করেননি৷” বাগানের মালিকপক্ষ এই অভিযোগ নিয়ে এ দিন কোনও মন্তব্য করতে চাননি৷ রাজগঞ্জের বিধায়ক খগেশ্বর রায়ও ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে বলেন, “নিশ্চয়ই বাগানে কোনও গোলমাল হয়েছে ৷ তা না হলে এক জন ম্যানেজার খুন হবেন কেন?’’

Tea estate manager Murder Mystery Investigation
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy