E-Paper

দুর্নীতির জেরে ছাত্রীর সঙ্গে ফের পরীক্ষায় শিক্ষকও

পরীক্ষার হল থেকে বেরিয়ে ছাত্রীর সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করলেও পুরোপুরি স্বাভাবিক হতে পারছিলেন না গার্ডেনরিচের বাসিন্দা, শিবপুরের উর্দু হাই স্কুলের অঙ্কের শিক্ষক এহেতাসাম অ্যান।

আর্যভট্ট খান

শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৯:৩৫
ছাত্রী পারকুন্দা বেগম (বাঁ দিকে) ও শিক্ষক এহেতাসাম অ্যান এসএসসি পরীক্ষা দিলেন একসঙ্গে। রবিবার, মণীন্দ্র কলেজে।

ছাত্রী পারকুন্দা বেগম (বাঁ দিকে) ও শিক্ষক এহেতাসাম অ্যান এসএসসি পরীক্ষা দিলেন একসঙ্গে। রবিবার, মণীন্দ্র কলেজে। —নিজস্ব চিত্র।

‘‘স্যর, আপনার পরীক্ষা কেমন হল?’’

শ্যামবাজার এলাকার মণীন্দ্র কলেজে পরীক্ষা দিতে এসে দেখা হয়ে গেল ছাত্রী ও শিক্ষকের। শিক্ষকের সঙ্গে পরীক্ষা দিয়ে ছাত্রীর প্রশ্নের মধ্যে ছিল কিছুটা কুণ্ঠাবোধ। সেই দ্বিধা কাটিয়ে অবশ্য শিক্ষক ছাত্রীকে বললেন, ‘‘আমার তো হয়েছে ভালই। তোরও নিশ্চয়ই ভাল হয়েছে পরীক্ষা।’’

পরীক্ষার হল থেকে বেরিয়ে ছাত্রীর সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করলেও পুরোপুরি স্বাভাবিক হতে পারছিলেন না গার্ডেনরিচের বাসিন্দা, শিবপুরের উর্দু হাই স্কুলের অঙ্কের শিক্ষক এহেতাসাম অ্যান। তাঁর গার্ডেনরিচের বাড়ির কাছেই থাকেন পারকুন্দা বেগম। পারকুন্দাকে তিনি উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে অঙ্ক পড়াতেন। তাঁর সঙ্গেই একসঙ্গে পরীক্ষায় বসতে হয়েছে। এহেতাসাম বলেন, ‘‘ছাত্রীর সঙ্গে পরীক্ষা দিতে বসায় লজ্জা নেই। কিন্তু যে কারণে পরীক্ষা দিতে হল, সেটা কোনও ভাবেই মেনে নিতে পারছি না।’’

পরীক্ষা দিয়ে বেরিয়ে এহেতাসাম বলেন, ‘‘তীব্র মানসিক চাপের মধ্যে দিয়ে গিয়েছি গত কয়েক মাস। এসএসসি-র দাগি তালিকায় আমার নাম নেই। তবু পরীক্ষা দিতে হল। পরিজন, ছাত্র-ছাত্রীদের অনেকেরই প্রশ্ন, দাগি না হলে কেন ফের পরীক্ষায় বসতে হল? অনেকে ভাবতেই পারে, আমরাও হয়তো টাকা দিয়ে চাকরি পেয়েছিলাম। এই মানসিক চাপটা মারাত্মক। এই চাপ নিয়েই পরীক্ষায় বসতে হয়েছে।’’ তবে তিনি একা নন। পরিস্থিতির ফেরে তাঁর মতো বহু শিক্ষককে সাত বছর স্কুলে পড়ানোর পরে আজ ফের ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে পরীক্ষায় বসতে হল।

এহেতাসামের পাশে দাড়ানো পারকুন্দা বলে ওঠেন, ‘‘স্যরের এই মানসিক অবস্থাটা আমরা বুঝতে পারছি। তাই ওঁর ফের পরীক্ষা দেওয়া মেনে নিতে পারছি না। স্যর চাকরি পাওয়ার আগে পাড়ায় টিউশন করতেন। তখন ওঁর কাছে পড়েছি। স্যর খুব ভাল পড়ান। আমি উচ্চ মাধ্যমিকে অঙ্কে খুব ভাল নম্বর পেয়েছিলাম। সাত বছর স্কুলে পড়িয়ে আবার শিক্ষকতার যোগ্যতার পরীক্ষা দিতে হবে কেন স্যরকে? একসঙ্গে পরীক্ষা দিতে ভীষণ কুণ্ঠাবোধ হচ্ছিল।’’ পারকুন্দার মতে, সীমাহীন দুর্নীতি হয়েছে। তারই ফল ভোগ করতে হচ্ছে তাঁর শিক্ষককে।

যোগ্য হয়েও ফের পরীক্ষা দিতে হচ্ছে, এই প্রতিবাদে এহেতাসাম কালো টিশার্ট পরে এসেছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘পরীক্ষা আমার ভাল হয়েছে। ২০১৬ সালের এসএসসিতে পাশ করেছিলাম। এ বারও পাশ করে যাব। ওএমআর শিটের কার্বন কপি ওরা দিয়েছে। কিন্তু এই পরীক্ষায় যে ফের দুর্নীতি হবে না, তার নিশ্চয়তা কোথায়? শুধু এই সরকারের উপরে ভরসা উঠে গিয়েছে এমন নয়, বিচারব্যবস্থার প্রতিও আমাদের ভরসা উঠে গিয়েছে। নিজের পরিশ্রমের উপর ভরসা আছে, কিন্তু সরকারের উপরে নেই।’’

পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি ফেরার সময় এহেতাসাম বলেন, ‘‘পারকুন্দারা এখন পড়াশোনার মধ্যে রয়েছে। আজ ও আমার থেকে ভাল পরীক্ষা দিতেই পারে। দু’জনের মধ্যে প্রতিযোগিতা আছে ঠিকই, কিন্তু আমি চাই ও যেন চাকরি পায়।’’

পাশ থেকে পারকুন্দা বলে ওঠেন, ‘‘আমিও চাই, স্যর সম্মানের সঙ্গে আবার চাকরি ফিরে পান।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

SSC SSC Exam

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy