Advertisement
E-Paper

ককবরকে রামায়ণ অনুবাদ করেও ব্রাত্য

উপজাতি অধ্যুষিত ত্রিপুরার সংখ্যাগরিষ্ঠের ভাষা ‘ককবরক’-কে বাঁচিয়ে রাখার তাগিদে ওই ভাষায় ‘রামায়ণ’ অনুবাদ করেছেন ইংরেজি সাহিত্যের প্রাক্তন শিক্ষক প্রভাস ধর।

আশিস বসু

শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০১৬ ০৪:১৭

উপজাতি অধ্যুষিত ত্রিপুরার সংখ্যাগরিষ্ঠের ভাষা ‘ককবরক’-কে বাঁচিয়ে রাখার তাগিদে ওই ভাষায় ‘রামায়ণ’ অনুবাদ করেছেন ইংরেজি সাহিত্যের প্রাক্তন শিক্ষক প্রভাস ধর।

কিন্তু ত্রিপুরার উপজাতি সম্প্রদায়ের নতুন প্রজন্মের অনেকেই তা জানেন না বলে আক্ষেপ করেছেন প্রভাসবাবু। তাঁর কথায়, ‘‘এখনকার ছেলেমেয়েরা মোবাইলের বিভিন্ন অ্যাপস্‌ নিয়েই সারা দিন ব্যস্ত থাকে। অন্য কোনও দিকে তাঁদের নজর দেওয়ার সময় কোথায়!’’ তিনি বলেন, ‘‘নিজেদের মাতৃভাষা ও সংস্কৃতি কোনও ভাবে হারিয়ে গেলে কী হবে তা তারা ভেবেও দেখে না।’’

মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারও অবশ্য ককবরক ভাষায় লেখা রামায়ণের কথা জানেন না। তবে তিনি জানিয়েছেন, ওই ভাষায় ‘গীতাঞ্জলি’ অনুবাদ করা হয়েছে।

১৯৭৫ সালে উচ্চশিক্ষার জন্য হায়দরাবাদে গিয়েছিলেন প্রভাসবাবু। তখনই তিনি জানতে পারেন— সারা পৃথিবীতে চর্চার অভাবে অনেক জাতি-উপজাতির ভাষা বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে। এর পরই ত্রিপুরার ‘ককবরক-কে বাঁচানোর চিন্তা শুরু করেন তিনি। ওই ভাষায় রামায়ণ লেখার সিদ্ধান্ত নেন। প্রভাসবাবুর মন্তব্য, ‘‘ককবরক ভাষায় রামমোহন রায়, বিদ্যাসাগর বা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতো বড় মাপের কোনও লেখক নেই। ত্রিপুরার সংখ্যাগরিষ্ঠ উপজাতি মানুষের ভাষায় তাই সে ভাবে কোনও লেখা আগে হয়নি। সে দিকে তাকিয়েই ওই ভাষায় রামায়ণ লেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।’’ তিনি জানান, অনুবাদ শেষ করতে ১৬-১৭ বছর সময় লেগেছে। ককবরক ভাষায় রামায়ণ প্রকাশিত হয়েছে নব্বইয়ের দশকের শেষে।

কিন্তু আক্ষেপ থেকেই গিয়েছে প্রভাসবাবুর। গত সপ্তাহে আগরতলায় ককবরক ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছিল। কিন্তু সেখানে ব্রাত্য ছিলেন তিনি। প্রভাসবাবু বলেন, ‘‘কেউ আমাকে কিছু জানায়নি। গুরুত্ব দেয়নি রাজ্য সরকারও। শুনেছি রাজ্যের উপজাতি সম্প্রদায়ের ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে চর্চা ও গবেষণার জন্য একটি দফতর তৈরি হয়েছে।’’ তবে একইসঙ্গে তিনি জানান, সরকারি উদ্যোগে উপজাতিদের ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির বিকাশ ঘটলে রাজ্যেরই মঙ্গল হবে।

উল্লেখ্য, ১৯৯৩ সালে দশরথ দেবের মন্ত্রিসভার অ-উপজাতি সদস্য তথা বাঙালি মন্ত্রীরা ককবরক ভাষা শেখার জন্য উদ্যোগ নিয়েছিলেন। এ কথা জানিয়েছেন রাজ্যের মন্ত্রী অঘোর দেববর্মা। কিন্তু তা বেশিদূর এগোয়নি। মন্ত্রীর ব্যাখ্যা, ‘‘কাজের চাপে অধিকাংশ মন্ত্রীই ভাষাটা খুব ভাল ভাবে রপ্ত করতে পারেননি।’’ তিনি জানান, ত্রিপুরায় ককবরক ভাষার সরকারি স্বীকৃতি অনেক আগেই মিলেছে।

ত্রিপুরায় ১৯টি উপজাতি সম্প্রদায়ের মানুষ বসবাস করেন। রিয়াং, জামাতিয়া, মুড়াসিং, উচই, কলয় ও রূপীনি সম্প্রদায়ের
ভাষা ককবরক। সংখ্যায় তাঁরা ৭-৮ লক্ষ। ডারলং, লুসাই, সাঁওতাল,
মুন্ডা, চাকমা, মগ, কাইপেং,
রাঙ্ঘল, হালাম সম্প্রদায়ের নিজস্ব ভাষা রয়েছে।

Kakabarak ramayana translate
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy