E-Paper

খাতা দেখতে নারাজ অনেকেই, বোর্ডের পরীক্ষার ফল নিয়ে চিন্তা

২০১৬ সালের এসএসসি-র গোটা প্যানেল বাতিল হওয়ার পরে প্রশ্ন উঠেছে, এ বারের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের মূল্যায়ন কী ভাবে হবে?

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০২৫ ০৯:০৮
—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

তাঁরা মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার যে সমস্ত খাতা দেখলেন, সেই সব খাতার মূল্যায়ন বাতিল করা হোক।

কিছুটা অভিমানের সুরেই বললেন সদ্য চাকরি হারানো শিক্ষকেরা। তাঁদের কয়েক জন বললেন, ‘‘এতগুলো বছর শিক্ষকতা করার পরে প্রমাণিত হল, আমরা অযোগ্য। তা হলে অযোগ্যদের দেখা খাতার মূল্যায়ন নিশ্চয়ই যথাযথ মূল্যায়ন হবে না। আমি উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদকে ফোন করে বলব, আমার কাছে যে খাতাগুলি আছে, সেগুলি ফেরত দিয়ে দেব।’’

২০১৬ সালের এসএসসি-র গোটা প্যানেল বাতিল হওয়ার পরে প্রশ্ন উঠেছে, এ বারের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের মূল্যায়ন কী ভাবে হবে? পরীক্ষার ফল প্রকাশ কি পিছিয়ে যাবে? ইল্লাজুল রহমান নামে এক শিক্ষক বললেন, ‘‘আমার কাছে উচ্চ মাধ্যমিকের খাতা রয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে আমার চাকরি তো বাতিল হল। এ বার এই খাতাগুলি নিয়ে কী করব? সেগুলি কি আমি দেখব, না কি দেখব না?’’ অদিতি বসু নামে এক অঙ্কের শিক্ষিকা ক্ষোভের সঙ্গে বললেন ‘‘পাঁচ বছর ধরে আমরা শিক্ষকতা করছি। তা হলে গত পাঁচ বছরে মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিকের যে সব খাতা দেখেছি, সেই সব মূল্যায়নও বাতিল করা হোক। আবার নতুন করে গত পাঁচ বছরের মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা নেওয়া হোক। পরীক্ষার্থীরা তো এ বার চ্যালেঞ্জ করতেই পারেন যে, তাঁদের মূল্যায়ন অযোগ্যদের হাতে পড়ে ঠিক মতো হয়নি। নতুন করে পরীক্ষায় বসতে চাই। তা হলে কী করবে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ বা উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ? ফের পাঁচ বছরের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা নেবে?’’

অদিতির পাশে বসা আর এক শিক্ষকের কথায়, ‘‘খুব যত্ন করে খাতা দেখেছি, যাতে এক জনের নম্বরেও কোনও ভুলচুক না থাকে। বার বার নম্বর মিলিয়ে দেখতাম। সেই আমরাই নাকি অযোগ্য! এই অপমান হজম করতে কষ্ট হচ্ছে। আমি আমার হেড এগ্জ়ামিনারকে বলে দিয়েছি, উচ্চ মাধ্যমিকের খাতা আর দেখতে পারব না। আমার যোগ্যতা নেই বলে রায় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। আমি অঙ্কের খাতা ফেরত দিয়ে যাব।’’ খাতা না দেখলেও গত পাঁচ বছর ধরে গড়ে ওঠা শিক্ষক সত্তাটা হারিয়ে যায়নি ওঁদের। তাই এই অবস্থাতেও ছোট ছোট পড়ুয়াদের কথা মনে পড়ছে তাঁদের। এক শিক্ষক বললেন, ‘‘আমরা যদি এখন খাতা দেখা বন্ধ করে দিই, তা হলে পরীক্ষার ফল বেরোনোও তো পিছিয়ে যেতে পারে। কী হবে ওদের?’’

২০১৬ সালের প্যানেলের সকলের চাকরি বাতিল হওয়ার বিষয়টি মাধ্যমিকের খাতা দেখার উপরে কতটা প্রভাব ফেলবে? এ নিয়ে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ কোনও মন্তব্য করতে না চাইলেও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার খাতা দেখার ক্ষেত্রে বড়সড় ধাক্কা আসতে পারে বলে জানিয়ে দিল উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ। সংসদের সভাপতি চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘ইতিমধ্যেই কয়েক জন আমাকে ফোন করে জানিয়েছেন যে, চাকরি বাতিল হওয়ায় তাঁরা খুবই হতাশ। এই পরিস্থিতিতে তাঁরা উচ্চ মাধ্যমিকের খাতা দেখবেন না।’’ চিরঞ্জীব জানান, প্রধান পরীক্ষক এবং পরীক্ষক মিলিয়ে মোট ৫০ হাজারের মতো শিক্ষক উচ্চ মাধ্যমিকের খাতা দেখার সঙ্গে যুক্ত থাকেন। তাঁদের মধ্যে কত জন অযোগ্য ছিলেন, তা দেখতে হবে।

চিরঞ্জীব বলেন, ‘‘যদি দেখা যায় যে, খুব কম সংখ্যক চাকরিহারা শিক্ষক খাতা দেখছিলেন, তা হলে বেশি সমস্যা হবে না। এ বার উচ্চ মাধ্যমিকের পরীক্ষার্থীদের সংখ্যা অন্য বারের থেকে কম। কিন্তু যদি দেখা যায়, চাকরি বাতিল হওয়া বহু শিক্ষক খাতা দেখছিলেন, তা হলে কিন্তু খাতা দেখার উপরে প্রভাব পড়বে। পরীক্ষার ফল প্রকাশ পিছোবে কিনা, এখনই বলতে পারছি না। এই পরিস্থিতিতে আমরা পুরো বিষয় পর্যালোচনা করে দেখছি।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Madhyamik 2025 Higher Secondary

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy