E-Paper

‘আমার মতো ভুল আর যেন কেউ না করে’

কোভিডের সময় মোবাইল ফোনে তার সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ায় বন্ধুত্ব হয়েছিল এক যুবকের। ওই বন্ধুত্ব ঘনিষ্ঠ হতে বেশি দিন লাগেনি। তাকে বিয়ে করে বাড়ি ছেড়ে চলে যায় ছাত্রীটি।

অর্জুন ভট্টাচার্য  

শেষ আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৮:৩১
representational image

—প্রতীকী ছবি।

জলপাইগুড়ি: স্কুলে পড়তে পড়তেই এক দিন চলে গিয়েছিল মেয়েটি। আবার ফিরে আসা স্কুল চত্বরে। মাঝে দু’টো বছরের কথা বলতে বলতে থেমে যাচ্ছিল দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রীটি। চোখেমুখে অনুশোচনার ছাপ তার। নতুন স্কুলের মাঠের এক পাশে দাঁড়িয়ে মেয়েটির অস্ফুট গলায় সেই অনুশোচনার সঙ্গে উঠে এল একটা জেদের সুরও, ‘‘যে ভুল করেছি, তা হয়তো আর শোধরাতে পারব না। কিন্তু বাচ্চার জন্য আমাকে এখন অনেক কিছু করতে হবে, অনেক পড়াশোনা করতে হবে।’’

মেরেকেটে বছর সতেরো বয়স মেয়েটির। দু’বছর আগে জলপাইগুড়ির একটি স্কুলে দশম শ্রেণিতে পড়ত। কিছু দিন পরেই মাধ্যমিক। তার কথায়, কোভিডের সময় মোবাইল ফোনে তার সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ায় বন্ধুত্ব হয়েছিল এক যুবকের। ওই বন্ধুত্ব ঘনিষ্ঠ হতে বেশি দিন লাগেনি। তাকে বিয়ে করে বাড়ি ছেড়ে চলে যায় ছাত্রীটি। একটি সন্তানের জন্ম দেয় সে। এর পরে পড়াশোনা করতে চাইলে তীব্র বাধার মুখোমুখি হতে হয় বলে তার অভিযোগ। সেই সঙ্গে চলে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনও। এক দিন বাচ্চাকে নিয়ে স্বামীর কাছ থেকে পালিয়ে বাবার কাছে ফিরে আসে মেয়েটি। অনেক চেষ্টায় জলপাইগুড়ির অন্য একটি উচ্চমাধ্যমিক স্কুলে ভর্তি হয় সে। কোলের সন্তানকে সামলে নিয়মিত স্কুলে আসতে না পারায়, স্কুলের প্রধান শিক্ষকের অনুমতিতে সপ্তাহে দু’দিন করে স্কুল করছে সে। ছাত্রীর কথায়, ‘‘আমার মতো এত কম বয়সে বিয়ে করার মতো ভুল যেন আর কেউ না করে, এটাই চাই।’’ ওই ছাত্রীর অভিভাবক বলেন, ‘‘স্বামীর বাড়ি থেকে ফিরে আসার পরে বেশ কিছুদিন মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছিল মেয়ে। এখন স্বাভাবিক ভাবেই পড়াশোনা করছে। আমরা যতটা সম্ভব সহযোগিতা করছি।’’

জেলার একটি উচ্চমাধ্যমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘‘নাবালিকা বিয়ে রোখা ও ছাত্রছাত্রীদের মোবাইল ফোনের প্রতি আসক্তি কমাতে সচেতনতা বাড়ানো খুবই জরুরি।’’ নাবালিকা বিয়ে, পাচার ও ১৯ বছরের নীচে অন্তঃসত্ত্বার সংখ্যা ক্রমেই জলপাইগুড়ি জেলায় বাড়ছে বলে অভিযোগ। জেলায় ১৯ বছরের নীচে অন্তঃসত্ত্বার সংখ্যা অন্তত পাঁচ হাজারের কাছাকাছি বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর। একই সঙ্গে জেলায় বাল্যবিবাহও বেড়েছে বলে প্রশাসন সূত্রের খবর। জেলা পুলিশ সুপার উমেশ খান্ডবহালে বলেন, ‘‘পুলিশের পক্ষ থেকে নাবালিকা বিয়ে বন্ধ করতে অভিযান চালানো হচ্ছে। ধারাবাহিক ভাবে এই ক্ষেত্রে সচেতনতা প্রচারও চলছে।’’ জেলাশাসক শামা পারভীন বলেন, ‘‘এ ক্ষেত্রে খোঁজ নিয়ে দ্রুত পদক্ষেপ করা হবে।’’

জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অসীম হালদার বলেন, ‘‘বয়ঃসন্ধির সমস্যা সমাধানে জেলার সব হাসপাতালগুলিতে কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়াও জেলার স্কুলগুলিতে সচেতনতা বাড়াতে শিবির বসানো হচ্ছে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

teenage marriage Jalpaiguri

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy