Advertisement
E-Paper

আর জি কর ও যাদবপুর মিশে গেল মহালয়ার তর্পণে

পরলোকগত পিতৃপুরুষের সঙ্গে প্রিয় সন্তানের উদ্দেশে তিল-জল দান করতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লেন যাদবপুরের হস্টেলে র‌্যাগিংয়ে মৃত পড়ুয়ার বাবা। নবদ্বীপ বড়ালঘাটে, গঙ্গার ঘোলা জলে মিশল ফোঁটা-ফোঁটা উষ্ণ জল।

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় 

শেষ আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০২৪ ০৮:৫৫
মহালয়ার সকালে নবদ্বীপের গঙ্গায় তর্পণ করলেন যাদবপুরে মৃত পড়ুয়ার বাবা‌। নদিয়ার নবদ্বীপে। ২ অক্টোবর ২০২৪। ছবি : সুদীপ ভট্টাচার্য।

মহালয়ার সকালে নবদ্বীপের গঙ্গায় তর্পণ করলেন যাদবপুরে মৃত পড়ুয়ার বাবা‌। নদিয়ার নবদ্বীপে। ২ অক্টোবর ২০২৪। ছবি : সুদীপ ভট্টাচার্য।

তখনও রাতের অন্ধকার কাটেনি। চেনা ভিড় উপচে পড়েনি ঘাটে। সবে দু’এক জন আসছেন।

পরলোকগত পিতৃপুরুষের সঙ্গে প্রিয় সন্তানের উদ্দেশে তিল-জল দান করতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লেন যাদবপুরের হস্টেলে র‌্যাগিংয়ে মৃত পড়ুয়ার বাবা। নবদ্বীপ বড়ালঘাটে, গঙ্গার ঘোলা জলে মিশল ফোঁটা-ফোঁটা উষ্ণ জল।

মানুষের মুখোমুখি হতে এখন আর তাঁর ভাল লাগে না। তাই হয়তো বুধবার ভোরে আলো ফোটার আগেই তর্পণ করতে এসেছেন মাঝবয়সি মানুষটি। এক দশকেরও বেশি ধরে পূর্বপুরুষদের জন্য তিনি তর্পণ করছেন। তবে আত্মজের জন্য এই প্রথম বার।

২০২৩ সালের ১০ অগস্ট যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলের সামনে মেলে বাংলা প্রথম বর্ষে ভর্তি হওয়া পড়ুয়ার মৃতদেহ। র‌্যাগিংয়ের জেরেই এই অপমৃত্যু— এমন অভিযোগে রাজ্য জুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। বছর ঘুরে সেই হইচই, বিচারের দাবি অনেকটাই থিতিয়ে গিয়েছে।

প্রশ্ন শুনে খানিক চুপ করে থাকেন ছাত্রের বাবা। তার পর বলেন, “বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে। আমরা আদালতের উপর ভরসা রাখছি। আমাদের মতো সাধারণ লোক এ ছাড়া আর কী-ই বা করতে পারে!” যুক্তি সাজিয়ে শান্ত ভাবেই কথাগুলো তিনি বলেন বটে, কিন্তু গলার স্বরে অভিমান আড়ালের চেষ্টাটুকুও যেন ধরা পড়ে। এক বছর আগে তাঁর ছেলের মৃত্যুর বিচার চেয়ে যাঁদের সরব হতে দেখেছিলেন, তাঁদের কি এখন আর ধারে-কাছে দেখছেন? মৃত ছাত্রের বাবা বলেন, “হ্যাঁ দেখছি। ওঁরা আর জি কর কাণ্ডের প্রতিবাদ করছেন।”

আপনারা এই খুন-ধর্ষণের প্রতিবাদ করছেন না? উত্তর আসে: “আমরা প্রতিবাদ মিছিলে হাঁটতে পারিনি।” সন্তান হারানোর শোকে তাঁর স্ত্রী মানসিক স্থিতি অনেকটাই হারিয়ে ফেলেছেন, শরীরও খুবই ভেঙে গিয়েছে। “আমাদের প্রতিবাদের ভাষা তো কান্না। তা তো লোকসমক্ষের জন্য নয়!” তার পরেই জলের দিকে চোখ সরিয়ে নিয়ে তিনি বলেন, “আর জি করের ওই ছাত্রীর বাবা-মায়ের অবস্থা আমাদের চেয়ে বেশি কে আর বুঝবে? আমরা একই শূন্যতায় গিয়ে পৌঁছেছি।”

আকাশ-জোড়া মেঘ। তাতেই ফিকে হতে গিয়েও যেন পুব দিগন্ত তখনও আঁধার। হাতের তিল-জল গঙ্গায় অর্পণ করে উঠে যাওয়ার আগে এক বছরে অনেকটা বয়স বেড়ে যাওয়া মানুষটি বলেন, “শুধু আমার ছেলের জন্য নয়, আর জি করে মৃত কন্যা-সহ যাদেরই লেখাপড়া করতে গিয়ে বেঘোরে প্রাণ গিয়েছে, তাদের সকলের উদ্দেশে আজ তর্পণ করলাম। আর একটি প্রাণও যেন এ ভাবে না যায়।”

Mahalaya 2024 tarpan Jadavpur University R G kar Incident
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy