E-Paper

মুক্তিযুদ্ধের কথা এ-পারে, চলছে বয়কট-বিক্ষোভও

শাসক-বিরোধী দু’পক্ষই স্মরণ করেছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের কথাও। পাশাপাশি, কাঁথি, কাকদ্বীপ, পুরুলিয়া, হলদিয়া-সহ রাজ্য জুড়ে এ দিনও বিক্ষোভ, বয়কট অব্যাহত।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৪:৩৭
প্রতিবাদ মিছিলে (বাঁ দিকে) শুভেন্দু অধিকারী ও কুণাল ঘোষ (ডান দিকে)।

প্রতিবাদ মিছিলে (বাঁ দিকে) শুভেন্দু অধিকারী ও কুণাল ঘোষ (ডান দিকে)। —নিজস্ব চিত্র।

বাংলাদেশে হিন্দু-সহ সংখ্যালঘুর উপরে নির্যাতনের ঘটনায় কেন্দ্র নিষ্ক্রিয়, এই অভিযোগে এ বার পথে নামলেন তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্বও। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী রবিবার ফের বাংলাদেশকে কড়া ভাষায় হুঁশিয়ারি দিলেন। শাসক-বিরোধী দু’পক্ষই স্মরণ করেছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের কথাও। পাশাপাশি, কাঁথি, কাকদ্বীপ, পুরুলিয়া, হলদিয়া-সহ রাজ্য জুড়ে এ দিনও বিক্ষোভ, বয়কট অব্যাহত।

বাংলাদেশের ধর্মীয় গোষ্ঠীর নেতা চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের মুক্তির দাবিতে কাঁথিতে সন্ত সমাজের ডাকা মিছিল ও সমাবেশে যোগ দিয়েছিলেন শুভেন্দু। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার’ বলে যে স্লোগান দিয়ে থাকেন, বাংলাদেশের অবস্থার সূত্রে সেই প্রসঙ্গে বিরোধী দলনেতার পাল্টা বক্তব্য, “ধর্ম যার যার, ধর্ম রক্ষার দায়িত্ব তার তার।” কলকাতার কবরডাঙা থেকে করুণাময়ী মন্দির পর্যন্ত ইন্দ্রনীল খাঁয়ের নেতৃত্বে ভারতীয় জনতা যুব মোর্চাও মিছিল করেছে। কলকাতার নানা জায়গায় বাংলাদেশি পণ্য পুড়িয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছে অখিল ভারত হিন্দু মহাসভা ও অন্যান্য সংগঠনও।

কেন্দ্র নিষ্ক্রিয়, এই অভিযোগে ও ব্যবস্থার দাবিতে উত্তর কলকাতায় মিছিল করেছে নগেন্দ্র মঠ ও মিশন এবং বাংলা সিটিজেন্স ফোরাম। সঙ্গে ছিলেন বিভিন্ন ক্লাব, বিভিন্ন ধর্মের প্রতিনিধিরা। নগেন্দ্র মঠের সহ-সভাপতি তথা তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষের বক্তব্য, “বিজেপিকে ধর্মীয় রাজনীতির সুযোগ করে দিতেই কি কেন্দ্র নীরব? বিদেশ সচিব অশান্তির মাথাদের সঙ্গে কথা না-বলে অত্যাচারিতদের উদ্ধারের ব্যবস্থা করুন।” একই দাবিতে আজ, সোমবার ওই দুই সংগঠন রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসের কাছে দাবিপত্রও দিতে পারে।

কেন্দ্রকে যথাযথ ভূমিকা নেওয়ার আর্জি জানিয়ে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর অভিযোগ, সাম্প্রদায়িক শক্তি দু’পারেই উত্তেজনা তৈরির চেষ্টা করছে। তাঁর বক্তব্য, “দেশ কী ভাবে চলবে, সেটা মঠ-মন্দিরের কাজ নয়। কার্তিক মহারাজ বলে দেবেন, সেই অনুযায়ী দেশ চলবে— এটা শুভেন্দু অধিকারীর পছন্দ হলেও মানুষের পছন্দ নয়। মসজিদের ফতোয়া দিয়েও দেশ চলবে না।” মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আস্থা রেখে প্রাক্তন কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরীরও আশা, “বাংলাদেশকে যাঁরা স্বাধীন করেছিলেন, সেই শক্তি আজ না হয় কাল আবার ফুটে উঠবে। বাংলাদেশের মানুষ গণ-প্রতিরোধ করবেনই।” বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনকে ধিক্কার জানিয়ে কিসানগঞ্জে সংগঠনের জমায়েতে জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের সর্বভারতীয় সভাপতি মাহমুদ আসাদ মাদানির বক্তব্য, “হিন্দু-সহ অমুসলিম সম্প্রদায়ের উপরে হামলা ইসলাম বিরোধী। তাঁদের ধর্মীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ-সহ অন্য মুসলিম রাষ্ট্রগুলির কাছে অনুরোধ করছি।”

বাংলাদেশের ঘটনাবলির প্রেক্ষিতে নাগরিক স্তরেও বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে। মুর্শিদাবাদের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা তাদের শতাধিক বাংলাদেশি সদস্যকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করার কথা জানিয়েছে। জিয়াগঞ্জে সংস্থাটির সম্পাদক রফিক শেখ বলেন, “ওই সদস্যদের অনুদানও নেওয়া হবে না। কোনও বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী থাকলে তাঁকে পুলিশের হাতে তুলে দিতে হবে।” এ দিকে, শনিবার পশ্চিম বর্ধমানের ‘দুর্গাপুর উৎসবে’ একটি শাড়ির স্টলে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা আঁকা ব্যানার জনতার আপত্তিতে এবং উৎসব কমিটির নির্দেশে সরিয়ে নেন স্টল-মালিক শামসুর রহমান। শিলিগুড়িতে বাংলাদেশিদের না-রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সেখানকার হোটেল মালিকদের একটি বড় অংশ। যে সব বাংলাদেশি নাগরিক বিভিন্ন হোটেলে এখনও রয়েছেন, তাঁদের সোমবারের মধ্যে হোটেল ছাড়তে বলা হয়েছে বলেও দাবি।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Bangladesh Unrest Opposition Party TMC BJP

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy