E-Paper

জামিন-অযোগ্য ধারা প্রাক্তন আইসি-র বিরুদ্ধে

পুলিশ আধিকারিকের বিরুদ্ধে এতগুলি জামিন-অযোগ্য ধারায় মামলা হলেও অপরাধ প্রমাণ না হওয়া পর্যন্ত তাঁকে এখনই গ্রেফতার করা হবে না বলে হাওড়া সিটি পুলিশ জানিয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৭:৪২
(বাঁ দিকে) ওসি জয়ন্ত পাল এবং ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ (ডান দিকে)।

(বাঁ দিকে) ওসি জয়ন্ত পাল এবং ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ (ডান দিকে)। ছবি: সংগৃহীত।

হুগলির চণ্ডীতলা থানার প্রাক্তন আইসি জয়ন্ত পালের হাওড়ায় গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় তাঁর বিরুদ্ধে জামিন-অযোগ্য ধারায় মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু করল হাওড়া সিটি পুলিশ। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনার এক প্রত্যক্ষদর্শীর অভিযোগের ভিত্তিতে ওই পুলিশ আধিকারিকের বিরুদ্ধে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ১১৮/২ ধারায় মারধর, ১০৯ ধারায় খুনের চেষ্টা, ৩/৫ ধারায় ভীতি প্রদর্শন এবং ২৫, ২৭ ও ৩৫-এ বেআইনি অস্ত্র রাখার ধারায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। যদিও ওই পুলিশ আধিকারিকের বিরুদ্ধে এতগুলি জামিন-অযোগ্য ধারায় মামলা হলেও অপরাধ প্রমাণ না হওয়া পর্যন্ত তাঁকে এখনই গ্রেফতার করা হবে না বলে হাওড়া সিটি পুলিশ জানিয়েছে। শনিবার হুগলি জেলা পুলিশকে এই সমস্ত তথ্য ‘মেসেজ’ আকারে পাঠিয়ে দিয়েছেন তদন্তকারীরা। অন্য দিকে, এ দিন দুপুরে আন্দুল রোডের যে বেসরকারি হাসপাতালে ওই আধিকারিক চিকিৎসাধীন ছিলেন, সেখান থেকে তাঁকে ছুটি দেওয়া হয়েছে। তার পরেই পুলিশের স্টিকার মারা একটি সাদা গাড়িতে চেপে তিনি একাই হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে যান। বেরোনোর সময়ে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে অস্বীকার করেন।

সূত্রের খবর, ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে, যে গাড়িতে চড়ে ওই দিন তিনি হাওড়ায় এসেছিলেন, তাতে পুলিশের স্টিকার মারা থাকলেও গাড়িটি তাঁর নয়। সেটি তাঁর এক সঙ্গীর। এ দিন গাড়িটি এবং ভিতরে থাকা সমস্ত জিনিস সরকারি ভাবে পুলিশ বাজেয়াপ্ত করেছে। পুলিশ জানিয়েছে, গাড়িটি ওই পুলিশকর্তার না হওয়া সত্ত্বেও তিনি কী করে পুলিশ লেখা স্টিকার মেরে ঘুরছিলেন, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

হাওড়া সিটি পুলিশের এক পদস্থ কর্তা জানান, গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনা নিয়ে জয়ন্ত বার বার বয়ান পাল্টেছেন। প্রথমে তিনি বলেছিলেন, বান্ধবীকে ভয় দেখাতে নিজেই গুলি চালিয়েছেন। পরে বলতে শুরু করেন যে, তিনি নিজের থানা এলাকা চণ্ডীতলায় গুলিবিদ্ধ হন এবং ওই অবস্থাতেই গাঢ় নীল গাড়িটি চালিয়ে হাওড়ায় আসেন। তাঁর কাছে তখন জানতে চাওয়া হয়, হুগলিতে গুলিবিদ্ধ হলে তিনি সেখানকার স্থানীয় হাসপাতাল বা নার্সিংহোমে চিকিৎসা না করিয়ে হাওড়ার আন্দুল রোডের বেসরকারি হাসপাতালে এলেন কেন? আর এলেও গাড়ির মধ্যে কোনও রক্ত পাওয়া গেল না কেন? তা ছাড়া, মধ্য হাওড়ার গৌড়ীয় মঠের ওই গলিতে গুলি না চললে সেখানেই বা এত রক্ত এল কী করে?

তদন্তকারীরা জানান, এই সব প্রশ্নের স্পষ্ট উত্তর দিতে পারেননি অভিযুক্ত। হাওড়া সিটি পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘ওই প্রাক্তন আইসি বার বার বয়ান বদল করায় আমরা সমস্ত দিক খোলা রেখে তদন্ত করছি। দেশি পিস্তল ও ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া গুলির খোল ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হচ্ছে। গাড়িটিও পরীক্ষায় পাঠানো হতে পারে। তদন্তে ওই পুলিশকর্তা দোষী প্রমাণিত হলে তাঁর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

এ দিকে, এ দিন দুপুরে ওই পুলিশকর্তা হাসপাতাল থেকে ছুটি পাওয়ার পরে হাওড়া সিটি পুলিশের তদন্তকারীরা সেখানে গিয়ে কর্তৃপক্ষ ও দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলেন। তদন্তকারীদের দাবি, চিকিৎসকদের দেওয়া রিপোর্ট থেকে প্রমাণ মিলেছে যে, চণ্ডীতলা থানার ওই প্রাক্তন আইসি গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন। তাই ওই পুলিশকর্তার পাশাপাশি তাঁর হাওড়ার ‘বন্ধুদের’ গতিবিধির উপরেও নজর রাখা হচ্ছে। অন্য দিকে, এ দিন হুগলি গ্রামীণ পুলিশের এক কর্তার দাবি, এ দিন জয়ন্তের জন্য হাসপাতালে হুগলি পুলিশের তরফে কোনও গাড়ি পাঠানো হয়নি। তিনি বলেন, ‘‘তদন্ত চলছে। ওই রাতে ঠিক কী ঘটেছিল, তা নিয়ে জয়ন্ত পালকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তদন্ত শেষে রিপোর্ট এসপি-কে জমা দেওয়া হবে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

IC chanditala

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy