Advertisement
০২ জুন ২০২৪
Ramakrishna Sarada Mission

সারদা মঠ ও রামকৃষ্ণ সারদা মিশনের অধ্যক্ষা প্রব্রাজিকা ভক্তিপ্রাণার জীবনাবসান

১৯২০ সালের অক্টোবরে কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন ভক্তিপ্রাণা মাতাজি। পূর্বাশ্রমে নাম ছিল কল্যাণী বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর মধ্যে ছোটবেলা থেকেই ঈশ্বরানুরাগ ছিল প্রবল।

প্রব্রাজিকা ভক্তিপ্রাণা।

প্রব্রাজিকা ভক্তিপ্রাণা। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০২২ ০৮:০২
Share: Save:

সারদা মঠ ও রামকৃষ্ণ সারদা মিশনের অধ্যক্ষা প্রবীণতম সন্ন্যাসিনী প্রব্রাজিকা ভক্তিপ্রাণার জীবনাবসান হয়েছে। রবিবার রাত ১১টা ২৪ মিনিট নাগাদ তিনি প্রয়াত হন। দক্ষিণ কলকাতার রামকৃষ্ণ মিশন সেবা প্রতিষ্ঠান হাসপাতালে কয়েক দিন ধরে ভক্তিপ্রাণা মাতাজি চিকিৎসাধীন ছিলেন। গত অক্টোবরে ১০২ বছর অতিক্রম করেছেন তিনি।

রবিবার রাতেই তাঁর পার্থিব দেহ দক্ষিণ কলকাতার ওই হাসপাতাল থেকে টালিগঞ্জের মাতৃভবন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। আজ, সোমবার সকাল ১০টা নাগাদ তাঁকে নিয়ে আসা হবে দক্ষিণেশ্বরে সারদা মঠের প্রধান কার্যালয়ে। সেখানেই ভক্তরা তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানানোর সুযোগ পাবেন বলে সারদা মঠ সূত্রে জানানো হয়েছে। তার পরে কাশীপুর শ্মশানে ভক্তিপ্রাণা মাতাজির শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে বলেও সারদা মঠ সূত্রে জানা গিয়েছে।

বয়সজনিত সমস্যা ছাড়াও কিছু শারীরিক অসুবিধা ছিল প্রব্রাজিকা ভক্তিপ্রাণার। অসুস্থতার কারণে গত ৫ ডিসেম্বর ভক্তিপ্রাণা মাতাজিকে রামকৃষ্ণ মিশন সেবা প্রতিষ্ঠান হাসপাতালে ভর্তি করা হয় বলে সারদা মঠ সূত্রে জানা গিয়েছে। গত শনিবার আচমকাই ভক্তিপ্রাণা মাতাজির শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। তখন তাঁকে আইসিইউতে স্থানান্তরিত করা হয়। জানা যাচ্ছে ফুসফুসেও সংক্রমণ ছড়িয়ে ছিল। তীব্র জ্বরেও তিনি আক্রান্ত ছিলেন। শারীরিক অবস্থা অতি সঙ্কটজনক হওয়ায় তাঁকে ভেন্টিলেশনে দেওয়া হয়। ভক্তিপ্রাণা মাতাজি ছিলেন শ্রীসারদা মঠ ও রামকৃষ্ণ সারদা মিশনের চতুর্থ অধ্যক্ষা। ২০০৯-এর এপ্রিলে তিনি ওই পদে বৃত হন। তার আগে দীর্ঘ সময় তিনি টালিগঞ্জের মাতৃভবন হাসপাতালের সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। তাঁর হাত ধরেই ওই হাসপাতাল ১০ শয্যার প্রসূতি সদন থেকে ১০০ শয্যার আধুনিক হাসপাতালে উন্নীত হয়।

১৯২০ সালের অক্টোবরে কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন ভক্তিপ্রাণা মাতাজি। পূর্বাশ্রমে নাম ছিল কল্যাণী বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর মধ্যে ছোটবেলা থেকেই ঈশ্বরানুরাগ ছিল প্রবল। যোগাযোগ ছিল রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের সঙ্গেও। সারদেশ্বরী আশ্রম ও হিন্দু বালিকা বিদ্যালয়ের পাঠ শেষ করে তিনি নার্সিং প্রশিক্ষণ নেন। ১৯৫০ সালে টালিগঞ্জের মাতৃভবন হাসপাতালে নার্স হিসেবে কাজে যোগ দেন।

শ্রী রামকৃষ্ণের প্রত্যক্ষ শিষ্য তথা রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের চতুর্থ অধ্যক্ষ স্বামী বিজ্ঞানানন্দের কাছে দীক্ষা নেন ভক্তিপ্রাণা মাতাজি। পরে ১৯৫৪ সালে তাঁকে ব্রহ্মচর্যে দীক্ষা দেন রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের সপ্তম অধ্যক্ষ স্বামী শঙ্করানন্দ। অনেকের কাছে ভক্তিপ্রাণা মাতাজি পরিচিত ছিলেন কল্যাণীদি নামেও। তার পরে ১৯৫৯ সালে স্বামী শঙ্করানন্দের কাছেই সন্ন্যাস দীক্ষা গ্রহণ করেছিলেন ভক্তিপ্রাণা মাতাজি। ১৯৬০ সালে রামকৃষ্ণ সারদা মিশনের পরিচালন সমিতির সদস্যও হন প্রব্রাজিকা ভক্তিপ্রাণা। ১৯৬১ সালের ১৮ নভেম্বর রামকৃষ্ণ মিশনের তরফে মাতৃভবনের দায়িত্বভার হস্তান্তর করা হয় রামকৃষ্ণ সারদা মিশনকে। তখন থেকেই প্রব্রাজিকা ভক্তিপ্রাণা মাতৃভবনের সম্পাদক হন। তখন থেকেই ২০০৯ সাল পর্যন্ত তিনি প্রতি মুহূর্তে চিন্তা করেছেন কী ভাবে মাতৃভবন হাসপাতালের উন্নতি করা যায়। নিজে হাতে সাজিয়েছেন ওই হাসপাতাল।

১৯৯৮ সালের ২০ ডিসেম্বর সারদা মঠ ও রামকৃষ্ণ সারদা মিশনের সহ অধ্যক্ষা পদে নিযুক্ত হন প্রব্রাজিকা ভক্তিপ্রাণা। ২০০৯ সালে সঙ্ঘের তৃতীয় অধ্যক্ষা প্রব্রাজিকা শ্রদ্ধাপ্রাণার মৃত্যুর পরে, ওই বছরের ২ এপ্রিল ওই পদে বসেন ভক্তিপ্রাণা মাতাজি। টানা ১৩ বছর তিনি অধ্যক্ষা পদের দায়িত্ব সামলেছেন। সারা জীবন সমাজ ও মানব কল্যাণের জন্য কাজ করেছেন ভক্তিপ্রাণা মাতাজি।

প্রব্রাজিকা ভক্তিপ্রাণার প্রয়াণে শোক প্রকাশ করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এক শোকবার্তায় তিনি বলেন, ‘‘শ্রী সারদা মঠ ও রামকৃষ্ণ সারদা মিশনের চতুর্থ অধ্যক্ষা প্রব্রাজিকা ভক্তিপ্রাণার প্রয়াণে আমি গভীর ভাবে শোকাহত। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ১০২ বছর। প্রবীণা মাতাজি সন্ন্যাসিনী সংঘকে দক্ষতার সঙ্গে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে সঙ্ঘে ও বৃহৎ জনজীবনে গভীর আধ্যাত্মিক ও প্রাতিষ্ঠানিক শূন্যতার সৃষ্টি হল। এ ক্ষতি অপূরণীয়। শ্রী সারদা মঠের তথা রামকৃষ্ণ সারদা মিশনের সন্ন্যাসিনী ও ভক্তবৃন্দকে আমি আমার আন্তরিক সমবেদনা জানাই।’’

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী টুইটার মাধ্যমে প্রব্রাজিকা ভক্তিপ্রাণার প্রয়াণে শোক প্রকাশ করেছেন। টুইটে তিনি লিখেছেন, ‘‘প্রব্রাজিকা ভক্তিপ্রাণা মাতাজীকে শ্রদ্ধা জানাই। শ্রীসারদা মঠ ও রামকৃষ্ণ সারদা মিশনের মাধ্যমে সমাজসেবায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে যাওয়ার জন্য তিনি চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন । সংঘের সব সদস্য ও ভক্তদের সঙ্গে রইল আমার চিন্তা। ওম শান্তি।’’

(শ্রী রামকৃষ্ণের প্রত্যক্ষ শিষ্য তথা রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের চতুর্থ অধ্যক্ষ স্বামী বিজ্ঞানানন্দের কাছে দীক্ষা নেন ভক্তিপ্রাণা মাতাজি। পরে ১৯৫৪ সালে তাঁকে ব্রহ্মচর্যে দীক্ষা দেন রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের সপ্তম অধ্যক্ষ স্বামী শঙ্করানন্দ। তার পরে ১৯৫৯ সালে স্বামী শঙ্করানন্দের কাছেই সন্ন্যাস দীক্ষা গ্রহণ করেছিলেন ভক্তিপ্রাণা মাতাজি। প্রতিবেদনটি প্রথম বার প্রকাশের সময় উপরিউক্ত তথ্য পরিবেশনে অনিচ্ছাকৃত ভুল হয়েছিল। তার জন্য আমরা দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী। ভ্রম সংশোধন করা হল।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Ramakrishna Sarada Mission Sri Sarada Math
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE