Advertisement
০৫ মে ২০২৪
West Bengal Budget 2024-25

বিরোধী-তিরে বাজেট, তরজা বহাল একশো দিনের কাজেও

বৃহস্পতিবার বিধানসভায় পেশ হয়েছে ২০২৪-২৫ আর্থিক বছরের বাজেট। শুক্রবার ছিল সেই বাজেটের উপরে আলোচনা।

চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য (বাঁ দিকে) এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।

চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য (বাঁ দিকে) এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৬:৫৩
Share: Save:

বাজেট নিয়ে বৃহস্পতিবারই রাজ্য সরকারের সমালোচনা করেছিলেন বিরোধীরা। শুক্রবারও বিধানসভায় ‘দিশাহীন’ বাজেট নিয়ে রাজ্যকে কাঠগড়ায় তোলার চেষ্টা করলেন তাঁরা। পাশাপাশি অব্যাহত রইল কেন্দ্রীয় বরাদ্দ ব্যবহারের শংসাপত্র নিয়ে টানাপড়েনও।

বৃহস্পতিবার বিধানসভায় পেশ হয়েছে ২০২৪-২৫ আর্থিক বছরের বাজেট। শুক্রবার ছিল সেই বাজেটের উপরে আলোচনা। আলোচনায় রাজ্যের অর্থের উৎস থেকে মূলধনী খাতে বরাদ্দ কমানোর অভিযোগ তুলে সরব হন বিজেপি বিধায়কেরা। সঙ্গে ছিল শংসাপত্র-বিতর্কের খোঁচাও।

এ দিন বিধানসভায় অর্থনীতি বিশারদ তথা বিজেপি বিধায়ক অশোক লাহিড়ী বলেন, সরকারের নজর এক দিকে কিন্তু নিশানা অন্যত্র। নির্বাচনী বৈতরণী পার করতে যা করার তাই হয়েছে। টাকা কোথা থেকে আসবে, তার দিশা নেই। যথাযথ কর্মসংস্থানের অভাব, কেন্দ্রীয় বরাদ্দের উপরে নির্ভরতা বৃদ্ধি, টাকার উৎস নিয়ে বিভ্রান্তি, পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যাবৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা। কৃষি এবং পরিষদীয় মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের পাল্টা দাবি, অর্থনীতির অন্যতম শর্তই হল মানুষের হাতে টাকা পৌঁছে দেওয়া। সেই কাজ করা গিয়েছিল বলেই কোভিডের মন্দাতেও রাজ্যের আর্থিক গতি ইতিবাচক ছিল। তিনি বলেন, ‘‘সর্বস্তরের মানুষের কথাই বাজেটে বলা হয়েছে। মূলধনী বরাদ্দ বেড়েছে বলেই সম্পদ, বরাদ্দ, আয় বাড়ানো গিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী এটা করে দেখাতে পেরেছেন।’’

সিএজি রিপোর্টে রাজ্যে ১০০ দিনের কাজ, আবাস প্রকল্পের মতো ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় বরাদ্দ ব্যবহারের শংসাপত্র না দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে এ দিনও সরব হয়েছে বিজেপি। বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ অভিযোগ করেন, কয়েকটি আর্থিক বছরে ৩০, ৪০ হাজার কোটি টাকা করে বরাদ্দ ব্যবহারের শংসাপত্র পাঠায়নি রাজ্য সরকার। তৃণমূল বিধায়ক দেবব্রত মজুমদারের পাল্টা দাবি, শংসাপত্র পাঠানো হয়েছে। সিএজি রিপোর্টেই উল্লেখ রয়েছে, তা দেয়নি মধ্যপ্রদেশ এবং উত্তরপ্রদেশের মতো রাজ্য। পরে শোভনদেব বলেন, ‘‘দেশের ৪০% সম্পদ এক শতাংশ মানুষের কাছে রয়েছে। দেশ থেকে টাকা নিয়ে পালিয়ে যাওয়া সম্ভব হল কী ভাবে এবং কার মদতে? কমিশন দিয়ে পালাতে পারল? ১৪ লক্ষ ৫৬ হাজার কোটি টাকা ঋণ মকুব করে দেওয়া হল কাদের স্বার্থে?’’ নাম না করলেও শোভনদেব শিল্পপতিদের একাংশ ও বিজেপির মধ্যে আঁতাঁতের অভিযোগ করেছেন বলে মত রাজনীতিকদের একাংশের।

শংসাপত্র-বিতর্ক নিয়ে এ দিনই নবান্নে আটটি দফতরের সচিবকে সঙ্গে নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করেন মুখ্যসচিব। বলেন, ‘‘সিএজি যে রিপোর্ট দিয়েছে তা শুধু ২০২১ সালের নয়। তা ২০০২-০৩ সাল থেকে বকেয়া ইউসি (ইউটিলাইজ়েশন সার্টিফিকেট)-র হিসাব। কিন্তু মনে রাখতে হবে, কোনও বছরের শংসাপত্র না দিলে পরবর্তী বছরের বরাদ্দ অনুমোদিত হয় না। সে ক্ষেত্রে এত দিন ধরে রাজ্য যদি ইউসি না দিয়ে থাকে, তা হলে বিগত কুড়ি বছর ধরে কেন্দ্রীয় বরাদ্দ এল কোথা থেকে! ২.২৯ লক্ষ কোটি টাকার যে হিসাব দেওয়া হয়নি বলা হয়েছে, তা-ও ঠিক নয়। কারণ এই অঙ্কটি বিগত কুড়ি বছরের হিসাব যোগ করে করা হয়েছে। এটা ভ্রান্ত হিসাব।’’

রাজ্যের আরও প্রশ্ন, শংসাপত্র না পেলে তা রাজ্যের এজি (অ্যাকাউন্ট্যান্ট জেনারেল)-কে জানানো হয়নি কেন? গত দু’বছরে রাজ্যের বিভিন্ন দফতরের কাজ খতিয়ে দেখতে যে ৩৩৪টি কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল এসেছিল, তাদের বিভিন্ন প্রশ্ন ও পর্যবেক্ষণের জবাবও রাজ্য ইতিমধ্যেই বিভিন্ন মন্ত্রকের কাছে পাঠিয়েছে। অর্থসচিবও বলেন, ‘‘বিভ্রান্তি দূর করার প্রয়োজন রয়েছে। কেন্দ্রকে সব শংসাপত্র পাঠানো হয়েছে। আমাদের কাছে সব প্রতিলিপি রয়েছে। দরকারে ফের কেন্দ্রের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকগুলিকে সেগুলি পাঠাতে পারি।’’

অন্য দিকে বৃহস্পতিবারই একশো দিনের কাজের শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি মিটিয়ে দেওয়ার জন্য বাজেটে ৩৭০০ কোটি টাকা বরাদ্দের ঘোষণা হয়েছে। তবে প্রশ্ন উঠছে, যে বাজেট আগামী অর্থবর্ষের (এপ্রিল থেকে শুরু) জন্য, তাতে ২১ ফেব্রুয়ারি মজুরির টাকা মেটানো হবে কোথা থেকে? যদিও প্রশাসনের অন্দরের দাবি, সেই বরাদ্দের সংস্থান করাই রয়েছে। পঞ্চায়েত দফতরের হাতে রয়েছে তা। আগামী অর্থবর্ষের বাজেটে শুধুমাত্র তার উল্লেখ রাখা হয়েছে। পর্যবেক্ষকদের অনেকের অনুমান, হয়তো অন্য কোনও খাত থেকে প্রাথমিক ভাবে সেই টাকা মিটিয়ে বাজেট কার্যকর হলে সেখান থেকে ওই অর্থ সেখানে ফিরিয়ে দেওয়া হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE