E-Paper

তেরো বছরে বৃদ্ধি ১৬৪%, প্রশ্ন অনুপাতে

তথ্য বলছে, ২০০২ সালে পশ্চিমবঙ্গে জনসংখ্যা ছিল কমবেশি ৮.০১ কোটি। সে বছর ভোটার সংখ‍্যা ছিল প্রায় ৪.৫৮ কোটি। ২০১১ সালে জনসংখ্যা ছিল প্রায় ৯.১২ কোটি। সে বছর ভোটার সংখ্যা ছিল প্রায় ৫.৬২ কোটি। আগের হার অনুযায়ী ২০২৪ সালে জনসংখ্যা আনুমানিক প্রায় ১০.৩২ কোটি বলে ধরা হচ্ছে।

চন্দ্রপ্রভ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০২৫ ০৫:৫৬

—প্রতীকী চিত্র।

জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে ভোটার-বৃদ্ধির তুলনা (ইলেক্টর পপুলেশন বা ইপি রেশিয়ো) সংক্রান্ত রিপোর্ট জমা করতে দেশের প্রতিটি মুখ্য নির্বাচনী কার্যালয়কে (সিইও) নির্দেশ দিয়েছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন। কমিশনের সেই বার্তা পৌঁছেছে জেলায় জেলায়। এই অবস্থায় সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি, এ রাজ্যের ক্ষেত্রে গত প্রায় ১৩ বছরে ‘ইপি-রেশিয়ো’ বা জনসংখ্যা বৃদ্ধির নিরিখে ভোটার বৃদ্ধির (বা দুইয়ের তুলনামূলক) হার পৌঁছেছে প্রায় ১৬৪ শতাংশে। বিশেষজ্ঞদের একাংশের ব্যাখ্যা, এই হার ঠিক ধরে নিলে বুঝতে হবে, প্রতি একজন শিশুর জন্মের সঙ্গে দেড়-জন ভোটার তৈরি হচ্ছে। যদিও পর্যবেক্ষকদের একাংশ মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ২০১১ সালের পরে দেশে জনগণনা হয়নি। ফলে সঠিক জনসংখ্যা এবং এই তেরো বছরে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার নিয়ে স্পষ্ট কোনও পরিসংখ্যান নেই। ফলে শুধু এ রাজ্যেই নয়, অন্য কোনও কোনও রাজ্যেও ইপি-রেশিয়োয় এমন হার চোখে পড়ছে। তবু পরিসংখ্যানটি অভূতপূর্ব বলেই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখছে সংশ্লিষ্ট মহল।

সূত্রের আরও দাবি, প্রত্যেক জেলাশাসককে যে লিখিত বার্তা পাঠিয়েছে কমিশন, তাতে বলা হয়েছে, নতুন অনলাইন পদ্ধতিতে (ইআরওনেট ২.০) বহু গরমিল ধরা পড়ছে এই ‘ইপি রেশিয়ো’-তে। হয় কিছু রাজ্যে সেখানে তথ্য যুক্ত হয়নি, না হয় সেখানে ভুল তথ্য দেওয়া হয়েছে। তাই কোনও রাজ্যে এই ‘ইপি রেশিয়ো’ ১০০%, আবার কোনও রাজ্যে তা ৪০০%!

তথ্য বলছে, ২০০২ সালে পশ্চিমবঙ্গে জনসংখ্যা ছিল কমবেশি ৮.০১ কোটি। সে বছর ভোটার সংখ‍্যা ছিল প্রায় ৪.৫৮ কোটি। ২০১১ সালে জনসংখ্যা ছিল প্রায় ৯.১২ কোটি। সে বছর ভোটার সংখ্যা ছিল প্রায় ৫.৬২ কোটি। আগের হার অনুযায়ী ২০২৪ সালে জনসংখ্যা আনুমানিক প্রায় ১০.৩২ কোটি বলে ধরা হচ্ছে। সে বছর ভোটার সংখ্যা পৌঁছেছে ৭.৫৮ কোটিতে। ২০০২ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার প্রায় ১৩.৮৪%। এই সময়ে ভোটার বৃদ্ধির হার ছিল ২২.৮৯%। কমিশনের হিসেবে এই সময়ের মধ‍্যে ইপি-রেশিয়ো প্রায় ৯৪.৪৪%। অর্থাৎ, জনসংখ্যা এবং ভোটার সংখ‍্যা বৃদ্ধির হার প্রায় এক। তাতে প্রতি ১০০ জনে ৯৪ জন ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে, তাঁরা ভোটার। আবার ২০১১ সাল থেকে ২০২৪ পর্যন্ত জনসংখ্যা বৃদ্ধির আনুমানিক হার প্রায় ১৩.০৬%। এই সময়ে ভোটার সংখ‍্যা বেড়েছে ৩৪.৭৪% হারে। ফলে এই সময়ে ইপি-রেশিয়ো দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৬৩.৯৯ শতাংশে। এই সময়ে জনসংখ্যা বৃদ্ধির থেকে বেশি হারে বেড়েছে ভোটার সংখ্যা। ফলে প্রশ্ন উঠছে, প্রতি ১০০ জনে ১৬৪ জন ভোটার থাকেন কী ভাবে? একই সঙ্গে প্রশ্ন উঠছে, জন্মহার যদি কমে থাকে, তা হলে তার পরেও ভোটার হার বাড়ছে কী করে?

আধিকারিকদের একাংশ জানাচ্ছেন, ১৮ বছর হলেই এখন ভোটার তালিকায় নাম তোলার প্রবণতা বাড়ছে। তবে সেটাই একমাত্র কারণ নয়। বরং অবৈধ অনুপ্রবেশ, মৃত ভোটার, ভিন্ন ঠিকানায় একই ভোটারের নাম থাকা, অথবা একই ছবি বা নামে একাধিক ভোটারের উপস্থিতি, ভুয়ো ভোটার ইত্যাদি এই ‘অস্বাভাবিক’ হার বৃদ্ধির নেপথ্যে কাজ করতে পারে। এই কারণে প্রতিটি জেলাতে পৃথক ভাবে জনসংখ্যার তুলনায় ভোটার সংখ্যা কোথায় কত, তা-ই জানতে চাইছে কমিশন।

ভোটার তালিকা নিয়ে শাসক-বিরোধী উভয়েই সরব হচ্ছেন বিভিন্ন রাজ্যে। এনডিএ শাসিত মহারাষ্ট্রে ভোটের ঠিক আগে ৪০ বছরের বেশি বয়সের বিপুলসংখ্যক ভোটারের নাম তালিকাভুক্ত কী করে হয়েছিল, তা নিয়ে অভিযোগ করেছেন রাহুল গান্ধী।

বিশ্লেষকদের একাংশ মনে করিয়ে দিচ্ছেন, প্রাক এসআইআর প্রস্তুতি পর্বে প্রথম ধাপে গত এক বছর ধরে অনুমোদন পাওয়া নতুন ভোটার-আবেদনগুলির নমুনা যাচাই করার নির্দেশ দিয়েছিল কমিশন। দ্বিতীয় ধাপে একই দিনে বা স্বল্প সময়েরমধ‍্যে একগাদা নতুন ভোটারের আবেদনপত্র গৃহীত হচ্ছে কি না, জেলাশাসকদের তা অডিট করার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। তৃতীয় ধাপে ইপি-রেশিয়ো চাওয়ার অর্থ— সব ক’টি ধাপের মধ্যে ভোটার বৃদ্ধির নির্দিষ্ট যুক্তি খুঁজে বের করা। কমিশন-কর্তাদের একাংশের দাবি, এ রাজ্যের নানা প্রান্তে ভোটার তালিকায় অসাধু হস্তক্ষেপের একাধিক প্রমাণ তাঁদের হাতে আসছে। এমনকি, ১ মার্চ থেকে ৩১ মে পর্যন্ত যত সংখ্যক নতুনভোটার কমিশনের কাছে আবেদন করেছেন, ১ জুন থেকে ৭ অগস্টের হিসেবে দেখা যাচ্ছে, তা আচমকা প্রায় চার গুণ বেড়ে গিয়েছে। এই দুই সময়ের নিরিখে সীমান্তবর্তী এলাকাগুলিতেও আবেদন সংখ্যা বেড়েছে প্রায় পাঁচ গুণ।

এক কর্তার কথায়, “ইপি রেশিয়ো দেখলে ধরে ফেলা যায়, কোথাও কোনও অস্বাভাবিক বৃদ্ধি রয়েছে কি না। গত লোকসভা ভোটের আগে এই রাজ্যে খসড়া এবং মূল তথা চূড়ান্ত তালিকায় ইপি রেশিয়ো ছিল ০.৭৩। আবার এ বছরের গত ১ জানুয়ারি যে সংশোধিত চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ হয়, তাতে এই রেশিয়ো ছিল ০.৭৪। মোটের উপর তা স্বাভাবিক। অর্থাৎ, জনসংখ্যা ১০০ জন হলে তার মধ্যে ৭৪ জন ভোটার। কিন্তু তার বেশি হলেই সন্দেহ তৈরি হয়।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Voter List Controversy Election Commission of India Population Density West Bengal government

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy