ডিএ-র দাবিতে আন্দোলন তীব্র হচ্ছে। নিজস্ব চিত্র।
৩০ মার্চ রেড রোডের ধর্না মঞ্চ থেকে আন্দোলনরত সরকারি কর্মচারীদের ‘চোর-ডাকাত’ বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারই প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার রাজ্য জুড়ে কর্মবিরতি পালন করছে রাজ্য সরকারি কর্মচারী সংগঠনগুলি। এ ক্ষেত্রে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেই কর্মচারী সংগঠনগুলির সদস্যেরা কর্মবিরতিতে শামিল হয়েছেন। গত ফেব্রুয়ারি মাসের ২০ এবং ২১ তারিখে মহার্ঘ ভাতার (ডিএ) দাবিতে কর্মবিরতি পালন করেছিল যৌথ সংগ্রামী মঞ্চ। ১০ মার্চ প্রশাসনিক ধর্মঘট পালন করেছিলেন তাঁরা। দুটি ক্ষেত্রেই নবান্ন থেকে কড়া বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, কোনও সরকারি কর্মচারী যদি কর্মবিরতিতে বা প্রশাসনিক ধর্মঘটে শামিল হয়ে নিজের কর্তব্য থেকে বিরত থাকেন তবে তাঁর বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এমনকি চাকরিজীবন থেকে একটি দিন কেটে নেওয়ার কথাও সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছিল। কিন্তু কর্মবিরতি তথা প্রশাসনিক ধর্মঘটে শামিল সরকারি কর্মচারী সংগঠনগুলো জানিয়েছিল সরকারি কর্মী এবং স্কুলশিক্ষকেরা হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেই কর্মবিরতিতে শামিল হয়েছিলেন। তাই কারা ধর্মঘটে শামিল হচ্ছেন, তা চিহ্নিত করা সম্ভব নয় সরকারের পক্ষে।
তবে এ বারের কর্মবিরতি নিয়ে তেমন কোনও নির্দেশিকা জারি করেনি নবান্ন। তাই এ বার ধর্মঘটে সরকারি কর্মীরা হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেই কর্মবিরতিতে শামিল হবেন বলে জানানো হয়েছে। ফলে রাজ্য সরকারের কাছে সরকারি কর্মীদের গরহাজিরা বা কর্মবিরতিতে শামিল হওয়া প্রসঙ্গে কোনও পরিসংখ্যান থাকবে না বলে মনে করা হচ্ছে। ডিএ-র দাবিতে গত কয়েক মাস ধরেই সরকারি কর্মচারীদের সঙ্গে রাজ্য সরকারের সংঘাত তীব্র থেকে তীব্রতর হয়েছে। সরকারি কর্মচারীদের দাবি, কেন্দ্রীয় হারেই ডিএ দিতে হবে তাঁদের। বর্তমানে ৬ শতাংশ ডিএ পাচ্ছেন রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা। তাঁদের দাবি, প্রাপ্য আরও ৩৬ শতাংশ ডিএ দিতে হবে রাজ্যকে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার নিজেদের অবস্থানে অনড়। ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় সরকার তাদের কর্মচারীদের জন্য ৪২ শতাংশ ডিএ-র কথা ঘোষণা করে দিয়েছে। যা কার্যকর হয়েছে চলতি বছরের জানুয়ারি মাস থেকে। আর তাতেই রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের ক্ষোভের আগুনে ঘি পড়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
গত ১৫ ফেব্রুয়ারি বাজেট অধিবেশনে ৩ শতাংশ মহার্ঘ ভাতার (ডিএ) ঘোষণা করেছিলেন রাজ্যের অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। সেই ঘোষণার পর ২৪ ফেব্রুয়ারির সন্ধ্যায় এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি জারি করে নবান্ন। ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সরকারি কর্মচারী, সরকার অনুমোদিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকার অনুমোদিত স্বশাসিত সংস্থা, সরকার অধিগৃহীত সংস্থা, পঞ্চায়েত কর্মী, পুরসভা, পুর নিগম এবং অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মীদের জন্য ডিএ ঘোষণা করছে রাজ্য সরকার। ১ মার্চ থেকে ৬ শতাংশ হারে ডিএ পাবেন কর্মীরা। ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে ৩ শতাংশ হারে ডিএ বাড়িয়েছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। এ বারের বাজেটে আরও ৩ শতাংশ যুক্ত হয়েছে। তাই মার্চ মাস থেকে ৬ শতাংশ হারে ডিএ পাবেন রাজ্য সরকরি কর্মীরা। কিন্তু তাতে সন্তুষ্ট না হয়ে কর্মবিরতি এবং পরে প্রশাসনিক ধর্মঘটের আশ্রয় নিয়েছেন সরকারি কর্মচারীরা। পরবর্তী পদক্ষেপ হিসাবে আগামী ১০ এবং ১১ এপ্রিল দিল্লি যন্তর মন্তরে ডিএ-র দাবিতে ধর্না দেবেন যৌথ সংগ্রামী মঞ্চের ৫০০ জন প্রতিনিধি। তাঁরা রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু, উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়, কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন এবং কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানের হাতে ডেপুটেশনও তুলে দেবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy