E-Paper

হেরেও নিস্তার নেই, তাড়া করছে ‘সন্ত্রাসের’ রক্তচক্ষু

আনসারের ছেলে মতিন আলি মোল্লা পেশায় শিক্ষক। নিউ টাউন বিধানসভা কেন্দ্রের পাথরঘাটা পঞ্চায়েতের ২৩২ নম্বর আসনে তিনি সিপিএমের হয়ে জিতেছেন।

প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০২৩ ০৬:১১
An image of excitement

উৎসব: ভোটের ফলাফল জানার পরে বাম ও আইএসএফ সমর্থকদের উল্লাস। মঙ্গলবার, রাজারহাটে। ছবি: সুমন বল্ল।  

গ্রামের সব চেয়ে ‘সুরক্ষিত’ বাসিন্দার নাম আনসার আলি মোল্লা। পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফল বেরোনোর পরে মঙ্গলবার নিউ টাউনের বালিগড়ি গ্রামের বাসিন্দারা তেমনটাই ভেবেছিলেন। আনসারের ছেলে সিপিএমের হয়ে জিতেছেন, জামাই জিতেছেন তৃণমূলের হয়ে। কিন্তু সেই ভাবনা ভেঙেচুরে গেল কয়েক ঘণ্টায়। ছেলে বাড়ি ফেরার পথেই তাঁর অনুগামীরা আক্রান্ত হলেন জামাইয়ের লোকজনের হাতে।

আনসারের ছেলে মতিন আলি মোল্লা পেশায় শিক্ষক। নিউ টাউন বিধানসভা কেন্দ্রের পাথরঘাটা পঞ্চায়েতের ২৩২ নম্বর আসনে তিনি সিপিএমের হয়ে জিতেছেন। আবার ওই পঞ্চায়েতের ২৩১ নম্বর আসনে তৃণমূলের হয়ে জিতেছেন আনসারের জামাই আখতার আলি গাজি ওরফে টুটুন। যিনি এলাকায় দাপুটে নেতা হিসাবেই পরিচিত।

গত শনিবার পঞ্চায়েত ভোটের দিন কেন্দ্রীয় বাহিনীর দাবিতে বালিগড়ি অবৈতনিক স্কুলের পাঁচটি বুথে তালা লাগিয়ে দিয়েছিলেন গ্রামের মানুষ। প্রায় চার ঘণ্টা ওই ভাবে চলার পরে কেন্দ্রীয় বাহিনী ওই ভোটকেন্দ্রে পৌঁছয়। তার পরে অনেক রাত অবধি শান্তিপূর্ণ ভাবে ভোট দেন গ্রামবাসীরা। মঙ্গলবার ভোট গণনার পরে দেখা যায়, পাঁচটির মধ্যে চারটি বুথেই তৃণমূলের প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। ব্যতিক্রম সিপিএমের মতিন।

এ দিন দুপুরে বালিগড়িতে গিয়ে দেখা যায়, আনসার ও তাঁর পরিবার-প্রতিবেশীরা মতিনের জয়ে রাস্তায় বেরিয়ে আনন্দ করছেন। আবার ওই রাস্তা দিয়েই দেখা যায়, সবুজ আবির উড়িয়ে যাচ্ছেন তৃণমূলের সমর্থকেরাও। আনসারকে তখন বলতে শোনা যায়, ‘‘গত পঞ্চায়েতে এখানে ভোট লুট হয়েছিল বলে এ বার গ্রামের মানুষ একজোট হয়ে কেন্দ্রীয় বাহিনীর দাবিতে বুথে তালা দিয়েছিলেন। তার পরেই শান্তিপূর্ণ ভোট হয়েছে।’’

মতিন গণনা কেন্দ্র থেকে ফেরার সময়ে তাঁর লোকজনের উপরে হামলা চলে। তাঁর অভিযোগ, ‘‘টুটুন আমার আত্মীয় হতে পারেন। কিন্তু, বিপরীত দল করি। ওঁর দল আমার জয় মেনে নিতে পারেনি। বয়স্কদেরও মারধর করে মুখ ফাটিয়ে দিয়েছে।’’ যদিও সেই অভিযোগ তৃণমূল অস্বীকার করেছে। টুটুনকে ফোন করা হলে তিনি পাল্টা বলেন, ‘‘ভোটের দিন বুথ বন্ধ করে ওঁরা মানুষকে হেনস্থা করেছেন। আজ শাসক দলের তরফে মিছিল করিনি। কিন্তু ওঁরা মিছিল করার সময়ে লাল আবির আমাদের ছেলেদের গায়ে ছোড়ায় গোলমাল হয়।’’।

এ বার রাজারহাটের পাঁচটি পঞ্চায়েতের সিংহভাগ আসনে শাসক দল জয়লাভ করলেও কংগ্রেস, সিপিএম ও আইএসএফ মিলে ১৯টি আসন জিতেছে। অথচ, ২০১৮ সালে কোনও জায়গাতেই বিরোধীদের বিশেষ কিছু ছিল না। রাজারহাট-বিষ্ণুপুরের (১) বিজেপি প্রার্থী সমীর দাসের অভিযোগ, ‘‘আমাকে জয়ী ঘোষণা করার পরেও পুনর্গণনা করিয়ে ব্যালট ছিঁড়ে ভোট টাই করা হয়। তার পরে টস করে আমাকে হারিয়ে দিল।’’

গণনা শুরুর আগে রাজারহাট চৌমাথায় এক সিপিএম কর্মীকে তৃণমূলের লোকজন মারধর করেন বলে অভিযোগ। ফল প্রকাশের পরে রাজারহাট রোডে দেখা যায়, তৃণমূল সমর্থকদের সবুজ আবিরের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাতাসে ওড়ানো হচ্ছে লাল আবির। যদিও সিপিএম এবং বিজেপি, উভয় পক্ষেরই দাবি, হেরে যাওয়া এলাকায় তাদের লোকজন ভয়ে রয়েছেন। সন্ত্রাস মোকাবিলায় নিউ টাউন বিধানসভার জন্য আধা সেনাও মোতায়েন করা হয়েছে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

West Bengal Panchayat Election 2023 Political Clash

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy