E-Paper

নাক গলানো হচ্ছিল কাজে: প্রাক্তন পিপি

সৌমেন্দ্রনাথের ইস্তফার আগেই পদত্যাগ করেছিলেন শাশ্বতগোপাল। এ দিন তিনিও সংবাদমাধ্যমে যা বলেছেন, তা-ও আইনি ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন অনেকে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০২৩ ০৭:২৪
Calcutta High Court

কলকাতা হাই কোর্ট। —ফাইল চিত্র।

কলকাতা হাই কোর্টে ফৌজদারি মামলায় রাজ্য সরকারের কার্যত প্রধান যোদ্ধা পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি)। এ হেন গুরুত্বপূর্ণ সরকারি আইনজীবীর কাজে রাজ্যের শাসক দলের আইনজীবী সংগঠনের একাংশ নাক গলায় বলে অভিযোগ করলেন কলকাতা হাই কোর্টের সদ্য প্রাক্তন পিপি শাশ্বতগোপাল মুখোপাধ্যায়। শনিবার এবিপি আনন্দ-কে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে নিজের ইস্তফা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘হাই কোর্টে শাসক দলের সংগঠন কাজে নাক গলাচ্ছিল। যাঁদের হাই কোর্টে কাজ করার অভিজ্ঞতা নেই তাঁরাও কাজে হস্তক্ষেপ করছিলেন।’’

প্রসঙ্গত, শুক্রবারই সাক্ষাৎকারে রাজ্যের বিদায়ী এজি সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ও নিজের ইস্তফা প্রসঙ্গে নানা কথা বলার পাশাপাশি এ-ও বলেছিলেন যে, দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে তার তদন্ত হওয়া উচিত এবং রাজ্য সরকার কোনও ভাবে তা আটকাতে পারে না। সাম্প্রতিক নিয়োগ এবং রেশন দুর্নীতির পরিপ্রেক্ষিতে যা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।

সৌমেন্দ্রনাথের ইস্তফার আগেই পদত্যাগ করেছিলেন শাশ্বতগোপাল। এ দিন তিনিও সংবাদমাধ্যমে যা বলেছেন, তা-ও আইনি ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন অনেকে। তাঁদের মতে, এই ধরনের ঘটনা ঘটলে আইনি লড়াইয়ে রাজ্য আরও দুর্বল হয়ে পড়তে পারে।

প্রসঙ্গত, হাই কোর্টে বিভিন্ন মামলায় বারবার কার্যত মুখ থুবড়ে পড়েছে রাজ্য। তা নিয়ে অনেক সময়ই নবান্নের শীর্ষ মহল অসন্তোষ প্রকাশ করেছিল। তবে এ দিন শাশ্বতগোপাল বলেছেন, ‘‘আমি সাধ্যমতো রাজ্য সরকারের হয়ে সওয়াল করেছি। ফৌজদারি মামলায় কিন্তু রাজ্য সে ভাবে হারেনি। লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস-এর মামলাতেও কলকাতা পুলিশের হয়ে সওয়াল করেছি।’’ যদিও হাই কোর্টে সরকারি কৌঁসুলিদের প্যানেলে যোগ্য ব্যক্তিদের ঘাটতি আছে কি না, সেই প্রশ্নও শাশ্বতগোপালের কথা থেকে উঠে এসেছে। তাঁর বক্তব্য, ‘‘কিছু কিছু ক্ষেত্রে যোগ্য আইনজীবীর অভাব হচ্ছিল। যাঁদের পদোন্নতির প্রয়োজন বলে মনে করেছিলাম, তাঁদের আটকে দেওয়া হচ্ছিল। প্যানেলে আরও দক্ষ আইনজীবী আসুক চেয়েছিলাম। কিন্তু তা পাইনি।’’

রাজ্যের এজি এবং পিপি, দুই গুরুত্বপূর্ণ আইনজীবীর পরপর পদত্যাগের মধ্যে সম্পর্ক আছে কি না, তা নিয়ে অনেকের মনে প্রশ্ন ছিল। যদিও বিদায়ী এজি দাবি করেছেন যে, দু’জনের পদত্যাগের মধ্যে কোনও সম্পর্ক নেই। এ দিন একই কথা বলেছেন শাশ্বতগোপালও। উল্লেখ্য, শাশ্বতগোপালের পদত্যাগের পরেই পিপি পদে দেবাশিস রায়কে নিযুক্ত করেছে রাজ্য সরকার।

রাজ্যে এজি এবং পিপি-র পদত্যাগ অবশ্য নতুন ব্যাপার নয়। গত বারো বছরে রাজ্যে পাঁচ জন এজি এবং তিন জন পিপি বদল হয়েছে। হাই কোর্ট পাড়ার খবর, পূর্বতন অ্যাডভোকেট জেনারেলদের পদত্যাগের পিছনেও রাজ্য সরকারের সঙ্গে মতানৈক্য এবং ওই প্রবীণ আইনজীবীদের ব্যক্তিগত সম্মানের বিষয় জড়িত ছিল। যদিও সে ভাবে তাঁরা কেউই প্রকাশ্যে মুখ খোলেননি। সৌমেন্দ্রনাথও ইস্তফার পরে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শিষ্টাচারের সীমা ছাড়াননি। তবে নানা কথা প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘‘১০০ শতাংশ সহযোগিতা না পেলে পদে থেকে কোনও লাভ নেই। আমার মনে হয়, নিজের মান-সম্মান বজায় রেখেই সবাইকে কাজ করা উচিত।’’ এই মন্তব্যকেও ‘বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ’ বলছেন অনেকে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Calcutta High Court West Bengal

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy