Advertisement
E-Paper

বাধা ছাপিয়ে বাঁধ ভাঙল প্রেমের উদ‌্‌যাপন

চন্দ্রজিতের মতোই আজন্ম মূক ও বধির সোমা। প্রেমে পড়তে সময় লাগেনি বেশি। বছর দেড়েক পরে বিয়েও সেরে ফেলেন দু’জনে।

তিয়াষ মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০২:৫৯
বিয়ের পরে শ্রাবন্তী ও বুবাই। নিজস্ব চিত্র

বিয়ের পরে শ্রাবন্তী ও বুবাই। নিজস্ব চিত্র

গোলাপফুল। টেডি বিয়ার। হার্ট শেপের বেলুন। চকলেট। উপহার সামগ্রীতে ঢালাও ছাড়। বিউটি পার্লারে আকর্ষণীয় প্যাকেজ। এ শহরের গালে বসন্তের ছোঁয়া লাগতে না-লাগতেই যেন শুরু ভালবাসার উদ্‌যাপন। সৌজন্য, প্রেম-দিবস। বছরের একটা দিন, প্রেমের জন্য উৎসর্গ করা।

চেনা চেনা নানা রঙিন ছবিতে মেতে ওঠে ১৪ ফেব্রুয়ারি। আর এ সব পরিচিত জৌলুসের আড়ালে নিঃশব্দে প্রেমের প্রদীপ জ্বালান ওঁরা। প্রথাগত দৈহিক কাঠামোর সঙ্গে যাঁরা খাপ খান না, যাঁদের শারীরিক সক্ষমতা আর পাঁচ জনের মতো নয়, যাঁরা ‘স্বাভাবিক’ দুনিয়ার চোখে ‘প্রতিবন্ধী’।

‘‘আসলে যাঁরা কোনও রকম সক্ষমতাকে নিজের নিরিখে বিচার করে এ ভাবে দাগিয়ে দেন, তাঁদের মানসিকতার মধ্যেই প্রতিবন্ধকতা রয়েছে,’’ বলছিলেন বাগনান কলেজের অধ্যাপক বুবাই বাগ। কোমরের নীচ থেকে বাকি অংশটি প্রায় নেই বললেই চলে। ছোটবেলার পোলিও কেড়ে নিয়েছে দু’টি পা-ই। তাতে অবশ্য খুব কিছু আটকায়নি। হাত দিয়ে ঘষটেই হোক বা হুইল চেয়ারে বা ক্রাচে ভর করে, বা অতিরিক্ত চাকা লাগানো স্কুটার— গতি থামেনি জীবনের।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী, মধ্য তিরিশের এই যুবক সবে মাস দুয়েক হল বিয়ে সেরেছেন। তার আগে ছিল বছর খানেকের প্রেম পর্ব। পরিচিত বন্ধুর মাধ্যমে আলাপ হয়েছিল উলুবেড়িয়ার শ্রাবন্তীর সঙ্গে। মনের মিল যেখানে হওয়ার ছিল, শরীরের খামতি সেখানে বাধা হয়নি। আর পাঁচটা যুগলের মতোই দেখা করতেন বুবাই-শ্রাবন্তী, আড্ডা মারতেন। বন্ধুত্ব থেকেই প্রেম, বিয়ের সিদ্ধান্ত। ‘‘ভালবাসার পাশাপাশিই বাড়ছিল আশঙ্কা। যতই যা-ই হোক, একটা ‘স্বাভাবিক’ মেয়ের পক্ষে আমার মতো মানুষকে জীবনসঙ্গী হিসেবে মেনে নেওয়া সহজ নয়।’’

সহজ যে নয়, শ্রাবন্তী টের পেয়েছিলেন হাড়ে হাড়ে। পরিবারের কারও পক্ষেই মেনে নেওয়া সম্ভব হয়নি এই প্রেম। প্রেম থেকে পরিণয় তো আরওই কঠিন পথ। ‘‘কিন্তু ও কোনও দিন আমায় এতটুকু বুঝতে দেয়নি এই বাধাগুলো। সব সময়ে ভীষণ ইতিবাচক কথা বলত সম্পর্ক নিয়ে,’’ বললেন বুবাই।

শ্রাবন্তীর যুক্তি স্পষ্ট, ‘‘তথাকথিত স্বাভাবিক ছেলেকে বিয়ে করে তো বিয়ের পরেও এমনটা হতে পারত। তখন কি সম্পর্ক শেষ হয়ে যেত?’’ এই ইতিবাচক মনোভাবই বোধ হয় সব চেয়ে বেশি আকর্ষণ করেছিল বুবাইকে। তাই হেসে বললেন, ‘‘আমি শারীরিক দিক থেকে বিশেষ ভাবে সক্ষম, ও মানসিকতার দিক থেকে।’’

বিয়ের পরের প্রথম ভ্যালেন্টাইনস ডে বাড়িতেই থাকবেন বুবাই-শ্রাবন্তী। পরস্পরের সঙ্গে সময় কাটাবেন, উপভোগ করবেন বসন্তের আগমনী। নতুন পথে হাত ধরে চলার লড়াইয়ের মধ্যে দিয়েই উদ্‌যাপন হবে প্রেমের।

চারু মার্কেটের চন্দ্রজিৎ দাসের গল্পটা সিনেমার মতোই। জন্মের পরেই একাধিক বার জন্ডিস হওয়ার কারণে শ্রবণযন্ত্র নষ্ট হয়ে যায় চন্দ্রজিতের। ফলে সম্ভব হয়নি কথা বলতে শেখাও। একাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার পরে শহরের একটি বহুজাতিক খাবারের দোকানে কাজ করতে শুরু করেন তিনি। আর কাজ করতে করতেই পরিচয় চুঁচুড়ার বাসিন্দা সোমার সঙ্গে। চন্দ্রজিতের মতোই আজন্ম মূক ও বধির সোমা। প্রেমে পড়তে সময় লাগেনি বেশি। বছর দেড়েক পরে বিয়েও সেরে ফেলেন দু’জনে।

চন্দ্রজিতের মা ইন্দ্রাণীদেবী বলছিলেন, ‘‘বৌমা আমার সব দিকে চৌখস। আঁকা, সেলাই, হাতের কাজ, রান্না! আর তেমনই ভালবাসে ঘুরতে! এই তো, ক’দিন আগে বাংলাদেশ ঘুরে এল ওরা দু’জন মিলে। কোনও অসুবিধাই হয়নি। ওদের চলাফেরা, কাজকর্ম, উচ্ছলতা— দেখলে কে বলবে, কোনও রকম অস্বাভাবিকতা আছে?’’ চন্দ্রজিৎ-সোমার ভালবাসায় শব্দের খামতি থাকতে পারে, উদ‌্‌যাপনে নেই।

Valentines Day Love
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy