Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
Ramadan

এ বাড়িতেই উপবাস ভঙ্গ করেন আব্দুল, আরিফরা! ৩০ বছর ধরে ইফতার পালন করে কোলে পরিবার

সন্ধ্যার নমাজ শেষে এ বাড়িতেই উপবাস ভঙ্গ করেন আব্দুল আলিম, আরিফ কুরেশিরা। মঙ্গলবারের ইফতারে যোগ দিয়েছিলেন জনা তিরিশ। মেনু ছিল ফলমূল, পেঁয়াজি, ছোলা সেদ্ধ, চিঁড়েভাজা। সঙ্গে সরবত।

Iftaari

কোলে পরিবারের তরফে ইফতারের আয়োজন। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
সাঁকরাইল শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০২৩ ০৬:৩৬
Share: Save:

আরিফের পাতে তরমুজের টুকরো তুলে দিচ্ছিলেন মানসী। বেশি হয়ে যাবে বলেও রক্ষে নেই। মানসী বললেন, ‘‘এত গরমে কাজ করছ। বিকেলে ইফতারটা পেট পুরে না সারলে চলবে কী করে!’’

মঙ্গলবারটা খুবই ব্যস্ততায় কাটল হাওড়ার সাঁকরাইলের আলমপুরে কোলে বাড়ির বড় বৌ মানসীর। পরিবারের প্রথা মেনে প্রায় তিরিশ বছর ধরে রোজা চলাকালীন একটি দিন আশপাশের কিছু মুসলিম তাঁদের বাড়িতে ইফতার সারেন। সন্ধ্যার নমাজ শেষে এ বাড়িতেই উপবাস ভঙ্গ করেন আব্দুল আলিম, আরিফ কুরেশিরা। মঙ্গলবারের ইফতারে যোগ দিয়েছিলেন জনা তিরিশ। মেনু ছিল ফলমূল, পেঁয়াজি, ছোলা সেদ্ধ, চিঁড়েভাজা। সঙ্গে সরবত।

বছর তিরিশ আগে ইফতারের আয়োজন শুরু করেছিলেন পরিবারের কর্তা, প্রয়াত ভদ্রেশ্বর কোলের মা প্রয়াত আঙুরবালা। বর্তমান সদস্যেরা জানালেন, সে সময়ে পাশের গ্রাম কোলড়ার বাসিন্দা এক মুসলিম ফেরিওয়ালা ঘুরে ঘুরে জামাকাপড় বিক্রি করতেন। তিনি প্রতি সন্ধ্যায় মালপত্র রেখে যেতেন ভদ্রেশ্বরের বাড়িতে। সকালে আবার বেরোতেন। রমজান মাসের সন্ধ্যায় যখন ওই ফেরিওয়ালা ভদ্রেশ্বরের বাড়িতে আসতেন, তখন ইফতারের সময়। আঙুরবালা তাঁকে জল-বাতাসা, ভেজানো ছোলা-গুড় খেতে দিতেন। আঙুরবালার মৃত্যুর পরে কয়েক বছর এ কাজ চালিয়ে যান ভদ্রেশ্বর। ২০০৬ সালে তাঁর মৃত্যুর পরে তিন ছেলে চন্দ্রনাথ, উদয়শঙ্কর এবং অলোক বড় পরিসরে ইফতারের আয়োজন শুরু করেন।

এই এলাকার বিভিন্ন কল-কারখানায় অনেক ভিন্‌-রাজ্যের শ্রমিক কাজ করেন। অলোক বলেন, ‘‘এই সব মুসলমান শ্রমিকেরা তাঁদের পরিবার থেকে দূরে থাকেন। ইফতারের সময়ে পরিবারের সান্নিধ্য পান না। সে কারণে রমজান মাসের একটা দিন আমরা পরিবারের পক্ষ থেকে ইফতারের আয়োজন করি। শ্রমিকদের একটা পারিবারিক পরিবেশ দেওয়ার চেষ্টা করা হয়।’’ পরিবারের সদস্যেরা জানালেন, ইফতারের খরচ তিন ছেলে মিলে করেন। বড় বৌ মানসীর সঙ্গে মেজো যমুনা ও ছোট কুসুমলতাও পাত পেড়ে খেতে দেন সকলকে। পরিবারের নবীন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরাও কাজে হাত লাগায়। কিছু প্রতিবেশীও আসেন। মানসীর কথায়, "প্রতি বছর আমরা এই দিনটার জন্য অপেক্ষা করি। উপবাসের শেষে যখন মানুষগুলি তৃপ্তি করে ইফতার সারেন, মনে হয় আমাদের আয়োজন সার্থক।’’

এ বছর ইফতারে যোগ দিয়েছিলেন বছর একুশের আরিফ কুরেশি। উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা। কাজের সূত্রে থাকেন আলমপুরে। আরিফ বলেন, ‘‘আয়োজন এবং আন্তরিকতা দেখে মনেই হয়নি অন্য ধর্মের পরিবারে বসে ইফতার সারছি। মনে হল, নিজেরই সব আত্মীয়-স্বজন। এটাই তো আমার দেশ, যেখানে সব মানুষ এক।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Ramadan Iftaar hindu Muslim
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE