মালবাজারের স্কুলে পড়াচ্ছেন মহাদেব মান্না। সোমবার। —নিজস্ব চিত্র।
সরকারি ‘উৎসশ্রী’ প্রকল্পে সাধারণত বাড়ির কাছের স্কুলে বদলির আর্জি জানান অনেক শিক্ষক-শিক্ষিকা। ব্যতিক্রম বাংলার শিক্ষক মহাদেব মান্না। স্বেচ্ছায় বাড়ি থেকে ৭০০ কিলোমিটার দূরের স্কুলে বদলি নিয়েছেন তিনি। সেই এলাকায়, যেখানে কোনও দিন তিনি আসেননি, চিনতেন না কাউকে। জলপাইগুড়ির মালবাজারের সেই স্কুলে বদলি নিয়ে আসার পরে স্ত্রী, কন্যাসন্তানকে নিয়ে বাড়িভাড়া করে থাকছেন।
বছর চল্লিশের মহাদেবের বাড়ি পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়া পুরসভার সাত নম্বর ওয়ার্ডে। ২০১০-এর জুলাইয়ে পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল মহকুমার দাসপুর ব্লকে পাঁচবেড়িয়া রামচন্দ্র স্মৃতি শিক্ষামন্দিরে চাকরিতে যোগ দেন। বাড়ি থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরে ছিল স্কুল। তা ছেড়ে সুদূর ডুয়ার্সে বদলির আবেদন জানান। মহাদেব বলেন, ‘‘স্বামী বিবেকানন্দের বই আমার খুব প্রিয়। সে সব বই পড়েই অজানাকে জানার ইচ্ছে হয়। শিক্ষায় পিছিয়ে থাকা ডুয়ার্সের চা বলয়ে শিক্ষকতা করে কিছুটা হলেও যদি এখানকার ছাত্রসমাজকে এগিয়ে দেওয়া যায়, সে লক্ষ্যেই এখানে আসা।’’
চার বছরের মেয়েকে নিয়ে স্বামীকে বাড়ি থেকে এত দূরের অচেনা জায়গায় আসতে বারণ করেছিলেন স্ত্রী মুনমুন। মহাদেব শোনেননি। মুনমুন বলেন, ‘‘স্বামীর সিদ্ধান্ত প্রথমে মানতে পারিনি। ২০২১-এর ডিসেম্বরে মালবাজারে আসার পরে, আস্তে আস্তে জায়গাটা ভাল লাগতে শুরু করল। স্বামী আর পাঁচ জনের মতো নন, এটা বুঝি।’’
মালবাজারের আদর্শ বিদ্যাভবনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক উৎপল পাল বলেন, ‘‘এমন মানুষ বর্তমান সমাজে বিরল।’’ অষ্টম শ্রেণির এক পড়ুয়ার বক্তব্য, ‘‘স্যর পাঠ্যবইয়ের বাইরেও নানা ব্যাপারে আমাদের আগ্রহ তৈরির চেষ্টা করেন।’’ প্রথম প্রজন্মের শিক্ষার আলো পাওয়া ডুয়ার্সের চা বলয়ের ছেলেমেয়েদের জন্য স্কুলের বাইরে বাড়তি সময় দিতে রাজি মহাদেব। শিক্ষক দিবসের আগে বলেন, ‘‘যে কোনও ভাল কাজে জড়িয়ে থাকতে চাই। মালবাজারে একটা ভাল গ্রন্থাগার তৈরির ইচ্ছা রয়েছে।’’
বাড়ির কাছের স্কুল ছেড়ে কেন মালবাজারে গেলেন মহাদেব, তা এখনও বুঝতে পারেন না দাসপুরের পাঁচবেড়িয়া রামচন্দ্র স্মৃতি শিক্ষামন্দিরের প্রধান শিক্ষক তাপসকুমার মাইতি। তিনি বলেন, ‘‘কেন যে উনি হঠাৎ ডুয়ার্সের স্কুলে চলে গেলেন, তা বুঝতে পারিনি! তবে যেখানেই থাকুন, সফল হোন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy