দিল্লির পরে এ বার কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বের একাংশ পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনেও তেড়েফুঁড়ে নামার কথা ভাবছেন। কংগ্রেসের একটা বড় অংশের মতে, বারবার আঞ্চলিক দলগুলিকে রাজনৈতিক জমি ছেড়ে দিয়ে কোনও লাভ হচ্ছে না। এমনকি বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়েও কোনও সুবিধা হচ্ছে না। একমাত্র উপায় হল, কংগ্রেসের নিজের শক্তি বাড়ানো। তাতে যদি আম আদমি পার্টি বা আঞ্চলিক দলের ক্ষতি হয়, তার দায় কংগ্রেসের নয়। কারণ এই আঞ্চলিক দলগুলি কংগ্রেসের রাজনৈতিক জমি কেড়েই ফুলে ফেঁপে উঠেছে।
কংগ্রেস সূত্রের খবর, আগামী বছর পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে রাহুল গান্ধী বাংলায় রাজনৈতিক কর্মসূচির কথা ভাবতে পারেন। এ বিষয়ে ভাবনাচিন্তা চলছে। এখনও দিনক্ষণ বা খুঁটিনাটি কিছু স্থির হয়নি। কংগ্রেস নেতাদের যুক্তি, কংগ্রেস যথেষ্ট শক্তিশালী না হলে বিজেপির বিরুদ্ধে কোনও বিরোধী জোট মাথা তুলতে পারবে না। তার জন্য কংগ্রেসকে দেশ জুড়ে রাজনৈতিক জমি বাড়াতে হবে। কংগ্রেসকে কেন্দ্র করে বিরোধী জোটের সরকার তৈরি করতে হলে কংগ্রেসকে নিজেকে অন্তত দেড়শোর বেশি লোকসভা আসনে জিততেই হবে। তার জন্য প্রয়োজনে বিজেপির পাশাপাশি আঞ্চলিক দলের বিরুদ্ধেও লড়াই করতে হবে।
দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারে নেমে রাহুল গান্ধী, প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢরা কেউই আম আদমি পার্টিকে রেয়াত করেননি। অথচ গত লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস ও আম আদমি পার্টি দিল্লিতে জোট বেঁধে লড়েছিল। কেজরীওয়াল বিরোধীদের ইন্ডিয়া মঞ্চেরও শরিক। অথচ রাহুল-প্রিয়ঙ্কা দু’জনেই নরেন্দ্র মোদী তথা বিজেপির পাশাপাশি অরবিন্দ কেজরীওয়াল ও আম আদমি পার্টিকে আক্রমণ করেছিলেন। কংগ্রেস নেতৃত্বের একাংশের মতে, আগামী বছর পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনেও কংগ্রেস তৃণমূলের বিরুদ্ধে জনমানসে অসন্তোষের ফায়দা পেতে পারে। তার জন্য পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির পাশাপাশি তৃণমূলের বিরুদ্ধেও আক্রমণাত্মক হওয়া উচিত। প্রসঙ্গত, রাজ্যে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি বদলের পরে কংগ্রেস প্রথম দিকে মূলত বিজেপি-বিরোধী কর্মসূচি নিয়ে চলছিল। কিন্তু এখন প্রদেশ কংগ্রেস তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধেও প্রয়োজন মতো রাস্তায় নামছে।
দিল্লির ভোটের ফলে দেখা যাচ্ছে, বিধানসভায় বিজেপির জেতা ১৩টি আসনে বিজেপি ও আম আদমি পার্টির ভোটের ফারাকের থেকে কংগ্রেস বেশি ভোট পেয়েছে। কংগ্রেসের ভোটের হার আম আদমি পার্টির ভোটের হারের সঙ্গে যোগ হলে তা বিজেপির থেকে বেশি হয়। বাকি বিরোধী দলের নেতারা বলছেন, এর অর্থ হল কংগ্রেস দিল্লিতে আম আদমি পার্টির ভোট কেটে বিজেপিতে জিতিয়েছে। দু’দলের জোট হলে দিল্লির ভোটের ফল অন্য রকম হতে পারত।
দিল্লি কংগ্রেসের এক নেতার পাল্টা যুক্তি, “বিজেপি দিল্লিতে যে ৪৮টি আসনে জিতেছে, তার মধ্যে ১৩টি আসনে বিজেপি-আপের ভোটের ফারাক কংগ্রেসের ভোটের থেকে কম, এ কথা ঠিক। কিন্তু বাকি ৩৫টি আসনে বিজেপির জয়ের ব্যবধান কংগ্রেসের পাওয়া ভোটের থেকে অনেক বেশি। যার অর্থ, কংগ্রেস ভোট না কাটলেও বিজেপি এই ৩৫টি আসনে জিতে সরকার গড়ত।” কংগ্রেস এ বার দিল্লিতে কোনও আসন না জিতলেও গত বিধানসভা ভোটের থেকে ২ শতাংশ বিন্দু বেশি ভোট পেয়েছে। দিল্লির ওই নেতার যুক্তি, “আপ-এর সঙ্গে জোট করলে কংগ্রেসের ভোট না-ও বাড়তে পারত। কারণ কংগ্রেস আপ-এর প্রতি অসন্তুষ্ট ভোটারদের সমর্থন পেয়েছে। আপ-কংগ্রেস জোট হলে সেই পুরো ভোট বিজেপির দিকে চলে যেত।”
কংগ্রেস সূত্রের যুক্তি, দিল্লিতে শীলা দীক্ষিতের নেতৃত্বে ১৯৯৮ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত ১৫ বছর সরকার চলেছিল। কংগ্রেস যখন তৃতীয় বার ক্ষমতায় আসে, তখনও তারা ৪০ শতাংশের বেশি ভোট পেয়েছিল। এখন তা ৬ শতাংশের ঘরে। আম আদমি পার্টি দিল্লিতে যে বেড়েছে, তা কংগ্রেসের ভোট কেড়েই বেড়েছে। এ বার তার সামান্য অংশ কংগ্রেসের কাছে ফেরত এসেছে।
আজ কংগ্রেসের এক নেতা বলেন, “গোয়ার বিধানসভা নির্বাচনের পরে ভারপ্রাপ্ত নেতা পি চিদম্বরম বলেছিলেন, আম আদমি পার্টি ও তৃণমূল গোয়ায় গিয়ে ভোটে লড়েছিল বলেই ভোটের বিভাজনে কংগ্রেস হেরে গিয়েছে। তখন অরবিন্দ কেজরীওয়াল তার জবাবে বলেছিলেন, গোয়ার মানুষ যাকে চাইবেন, তাকে ভোট দেবেন। দিল্লির ক্ষেত্রেও এ কথা সত্যি। কংগ্রেস এ বার ভোট বাড়িয়েছে। পরের বার আসন জয়ের অবস্থায় চলে আসবে।” কংগ্রেসের প্রধান মুখপাত্র জয়রাম রমেশ বলেন, “আমরা দিল্লিতে আরও ভাল ফলের আশা করেছিলাম। কংগ্রেসের ভোট বেড়েছে। আসন মেলেনি। তবে দলের কর্মীদের চেষ্টায় কংগ্রেসের রাজনৈতিক জমি বাড়বে। ২০৩০-এ আবার দিল্লিতে কংগ্রেসের সরকার তৈরি হবে।”
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)