Advertisement
০৫ মে ২০২৪
পদ ছাড়লেন প্রধান, উপপ্রধান
TMC

ইস্তফার পরে থানায় তলব, ধন্দ কারণেই

রবিবার সকালে কাঁথি ৩ ব্লক অফিসে তৃণমূলের কাঁথি সাংগঠনিক জেলা সভাপতি তরুণ মাইতির পৌরোহিত্যে ব্লক তৃণমূলের এক জরুরি বৈঠক হয়।

রামকৃষ্ণ মণ্ডল। নিজস্ব চিত্র

রামকৃষ্ণ মণ্ডল। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কাঁথি শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০২২ ০৬:১৩
Share: Save:

সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিলেন সর্বভারতীয় তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে সেই নির্দেশের ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই পদ থেকে ইস্তফা দিলেন কাঁথির মারিশদা (৫) গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান ঝুনুরানি মণ্ডল, উপপ্রধান রামকৃষ্ণ মণ্ডল এবং অঞ্চল তৃণমূল সভাপতি গৌতম মিশ্র।

রবিবার সকালে কাঁথি ৩ ব্লক অফিসে তৃণমূলের কাঁথি সাংগঠনিক জেলা সভাপতি তরুণ মাইতির পৌরোহিত্যে ব্লক তৃণমূলের এক জরুরি বৈঠক হয়। সেখানে ব্লকের সব গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান এবং উপপ্রধানদের পাশাপাশি দলীয় পদাধিকারীরাও ছিলেন। সেখানেই ওই তিন জন পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। প্রধান ও উপপ্রধান নিয়ম মেনে আজ, সোমবার বিডিও নেহাল আহমেদের কাছেও ইস্তফাপত্র দেবেন। জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা বিধায়ক তরুণ মানছেন, ‘‘অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশক্রমে দলের অঞ্চল সভাপতি আমার কাছে লিখিত ভাবেই ইস্তফা দিয়েছেন। আর গ্রাম পঞ্চায়েতের পদাধিকারীরা কাল ব্লক অফিসে গিয়ে ইস্তফাপত্র তুলে দেবেন।’’

এ দিকে, ইস্তফা দেওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই রবিবার বিকেলে মারিশদা থানায় ডেকে পাঠানো হয়েছিল সদ্য প্রাক্তন প্রধান ও উপপ্রধান ঝুনুরানি, রামকৃষ্ণ এবং তৃণমূলের প্রাক্তন ব্লক কার্যকরী সভাপতি মানিক দোলুইকে। থানায় আসেন পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার অমরনাথ কে-ও। প্রায় আধ ঘণ্টা থানায় ছিলেন তিনি।

কিন্তু কেন এই তলব, তা স্পষ্ট হয়নি। থানা থেকে বেরিয়ে সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি পুলিশ সুপার। পরে থানার পিছনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে বাইকে চেপে চলে যাওয়ার সময় কথা বলেননি রামকৃষ্ণরাও। পরে অবশ্য ফোনে রামকৃষ্ণ বলেন, ‘‘থানায় এমনিই ডেকেছিল।’’ মারিশদা থানা সূত্রে দাবি, শনিবার অভিষেক যে সব বাড়িতে গিয়েছিলেন, সেখানকার পরিস্থিতি জানতে এসেছিলেন পুলিশ সুপার। আর ওই ঝুনুরানিরা ইস্তফা দেওয়ার পরে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে এসেছিলেন। সময়টা মিলে যাওয়া একেবারেই কাকতালীয়।

শনিবার বিকেলে কাঁথির সভায় যাওয়ার পথে মারিশদার লোকাল বোর্ড গ্রামে গাড়ি থামিয়ে নেমে পড়েন অভিষেক। ১১৬ বি জাতীয় সড়কের পাশে ওই গ্রামের বেশ কয়েকটি মাটির বাড়ি ঘুরে দেখেন তিনি। পঞ্চায়েত কাজ করছে না বলে স্থানীয়রা তাঁকে অভিযোগও জানান। এর পরেই সভামঞ্চ থেকে অভিষেক ওই প্রধান, উপপ্রধান ও অঞ্চল সভাপতিকে ইস্তফার নির্দেশ দেন। সভা শেষে ফেরার পথেও ওই এলাকায় ফের গাড়ি থামিয়ে স্থানীয়দের কথা শোনেন অভিষেক।

অঞ্চল তৃণমূলের সভাপতি পদে এ দিন ইস্তফা দিয়ে গৌতম মিশ্র বলেন, ‘‘একুশের বিধানসভা ভোটের আগে দুর্দিনে আমাকে অঞ্চল সভাপতি হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছিল। হয়তো আমি আমার দায়িত্ব সঠিক ভাবে পালন করতে পারিনি বলে দলের নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় মনে করেছেন। তাঁর নির্দেশ পালন করেছি।’’ আর উপপ্রধান পদে ইস্তফা দিয়ে রামকৃষ্ণের মন্তব্য, ‘‘দলকে ভালবাসতে গেলে অনেক কিছুই করতে হয়।’’

তবে অভিষেকের এমন কড়া পদক্ষেপে জেলায় আলোড়ন পড়েছে। কাজ করাতে এমন দাওয়াইয়ের পক্ষে যেমন অনেকে বলছেন, তেমনই প্রশ্ন উঠছে ভোটে জিতে আসা জনপ্রতিনিধির উপরে এমন চাপ সৃষ্টি কি কাম্য! তৃণমূল ছেড়ে আসা বর্তমানে বিজেপির কাঁথি সাংগঠনিক জেলার অন্যতম সাধারণ সম্পাদক তথা জেলা পরিষদ সদস্য চন্দ্রশেখর মণ্ডলের কথায়, ‘‘একে তো অন্যায় ভাবে পদ ছাড়তে বাধ্য করা হচ্ছে। তারপর আবার মুখ বন্ধ রাখতে থানায় ডেকে ধমকানো হচ্ছে। তৃণমূল পুরোপুরি পুলিশ নির্ভর হয়ে পড়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC Contai Abhishek Banerjee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE