Advertisement
E-Paper

বিজেপির মুখ পুড়িয়ে চন্দন তৃণমূলে, দল বদল চার কংগ্রেস বিধায়কেরও

সাংবাদিক থেকে রাজনীতিক হয়ে ওঠা চন্দন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিলেন। কিন্তু বাজপেয়ী সক্রিয় রাজনীতি থেকে দূরে সরে যাওয়ার পরে দলে তাঁর গুরুত্ব কমে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০১৮ ২২:০৭
ছবি- পিটিআই

ছবি- পিটিআই

প্রত্যাশিত ছিল কংগ্রেসে ভাঙন। ২১ জুলাই মমতার মঞ্চে বেশ কয়েক জন কংগ্রেস বিধায়ককে যে দেখা যাবে, সে বিষয়ে প্রায় নিশ্চিত ছিল রাজ্যের রাজনৈতিক শিবির। অস্বস্তি মোকাবিলার জন্য কংগ্রেস হয়তো মানসিক প্রস্তুতি নিয়েও রেখেছিল। অস্বস্তির মুখোমুখি শেষ পর্যন্ত হতেও হল কংগ্রেসকে। কিন্তু তার চেয়েও বেশি অস্বস্তিকর পরিস্থিতি সম্ভবত তৈরি হল বিজেপির জন্য। একুশের মঞ্চে এসে দাঁড়ালেন প্রাক্তন বিজেপি সাংসদ চন্দন মিত্র। বাজপেয়ী ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ছিলেন যে বিজেপি সাংসদ, মোদী জমানায় সেই চন্দন মিত্র তৃণমূলের খাতায় নাম লেখানোয় বেশ মুখ পুড়েছে রাজ্য বিজেপির।

চন্দন মিত্র বেশ কিছু দিন ধরেই বিজেপি-তে কোণঠাসা ছিলেন। সাংবাদিক থেকে রাজনীতিক হয়ে ওঠা চন্দন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিলেন। কিন্তু বাজপেয়ী সক্রিয় রাজনীতি থেকে দূরে সরে যাওয়ার পরে দলে তাঁর গুরুত্ব কমে। মোদী-অমিত শাহ জমানায় তিনি আরও অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েন।

বেশ কিছু দিন ধরেই চন্দন মিত্র জানান দিচ্ছিলেন যে, নেতৃত্বের প্রতি তিনি অসন্তুষ্ট। তাঁর মুখে সরকারের এবং দলের নীতির মৃদু সমালোচনাও শোনা যাচ্ছিল কোথাও কোথাও। সপ্তাহখানেক আগে আনুষ্ঠানিক ভাবে তিনি বিজেপি ছাড়েন। তৃণমূলে যোগ দিতে পারেন বলে তখনই জল্পনা শুরু হয়েছিল। কিন্তু গত বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির টিকিটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা চন্দন দল ছাড়ার সপ্তাহখানেকের মধ্যে একুশের শহিদ স্মরণ মঞ্চে হাজির হয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে থাকার বার্তা দিচ্ছেন— এ ছবি বিজেপির পক্ষে হজম করা অবশ্যই বেশ কঠিন।

অস্বস্তি যারই বেশি হোক, কোন দল সবচেয়ে বেশি ধাক্কা খেল এই একুশে জুলাইতে, সে হিসেব করলে কংগ্রেস এগিয়ে থাকবে বিজেপি-র চেয়ে। কংগ্রেসের চার বিধায়ককে শনিবার ধর্মতলার মঞ্চে দেখা গিয়েছে। দু’জন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর নিজের জেলা মুর্শিদাবাদের। নওদার বিধায়ক আবু তাহের এবং রঘুনাথগঞ্জের বিধায়ক আখরুজ্জামান। বাকি দু’জন কংগ্রেসের বহু দশকের গড় হিসেবে পরিচিত মালদহের। মোথাবাড়ির বিধায়ক সাবিনা ইয়াসমিন এবং রতুয়ার বিধায়ক সমর মুখোপাধ্যায়।

চার বিধায়কেই সীমাবদ্ধ থাকেনি কংগ্রেসের ভাঙন। দুই কাউন্সিলরও এ দিন কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে ঢুকেছেন। এক জন কলকাতার ১৪০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তারেক আনোয়ার। অন্য জন হলেন মালদহ জেলা কংগ্রেসের প্রভাবশালী নেতা তথা ইংরেজবাজার পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান নরেন্দ্রনাথ তিওয়ারি।

দলবদলের কাঁটায় এ দিন ঈষৎ বিদ্ধ হতে হয়েছে বামেদেরও। সিপিএম থেকে বহিষ্কৃত সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়কে তৃণমূলের শহিদ স্মরণ সমাবেশের মঞ্চে দেখা গিয়েছে শনিবার। দেখা গিয়েছে সিপিএম থেকে বহিষ্কৃত আরও এক নেতা তথা প্রাক্তন সাংসদ মইনুল হাসানকেও।

এঁদের সকলকেই সমাবেশের মূল মঞ্চে তোলা হয়েছিল। নিজের পাশ দাঁড় করিয়ে তাঁদের আনুষ্ঠানিক তৃণমূল-ভুক্তির কথা ঘোষণা করেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। পঞ্চায়েত স্তরেও দলবদল শুরু হয়ে গেল শহিদ দিবস থেকেই। যে ঝাড়গ্রামে পঞ্চায়েত ভোটে সবচেয়ে বড় ধাক্কা খেয়েছে তৃণমূল, সেখানেই গণ-দলবদল ঘটেছে এ দিন। পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ঝাড়গ্রামে বিজেপি, কংগ্রেস, সিপিএম বা নির্দল হিসেবে পঞ্চায়েতের বিভিন্ন স্তরে নির্বাচিত মোট ৫৬ জন শনিবার তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন।

দলবদল করার লড়াই থেকে সম্পূর্ণ বাইরে থাকতে চায়নি বিজেপি-ও। দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা কংগ্রেস সভাপতি নীলাঞ্জন রায় আজ বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। উত্তর দিনাজপুরের প্রবীন নেতা তথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মন্ত্রিসভার প্রাক্তন সদস্য আব্দুল করিম চৌধুরীও আজ জানিয়েছেন যে তিনি বিজেপি-কে সমর্থন করছেন। তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে মনোমালিণ্যের কারণে করিম চৌধুরী অবশ্য আগেই দল ছেড়ে বাংলা বিকাশ কংগ্রেস নামে একটি দল গঠন করেছিলেন। এ বার সেই দলই বিজেপির পাশে থাকবে বলে তিনি শনিবার জানিয়েছেন।

রাজ্যে বিজেপির সাধারণ সম্পাদক রাজু বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, ‘‘এই মুহূর্তে বাংলায় গণতন্ত্র বলতে কিছুই নেই, গণতন্ত্র ফেরাতে পারে একমাত্র বিজেপি। তাই গণতন্ত্রকে যাঁরা ভালবাসেন, তাঁরা অন্য কোনও দলে নয়, বিজেপিতেই যোগ দেবেন। অথবা বিজেপির পাশে দাঁড়াবেন।’’

TMC Martyr's Day Chandan Mitra Congress BJP Sabina Yasmin
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy