ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধনের (এসআইআর) জেরে ‘আতঙ্কে মৃত্যু’র অভিযোগ অব্যাহত রাখল তৃণমূল কংগ্রেস। এ বার এই অভিযোগে জোড়া মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে উত্তর ২৪ পরগনার মধ্যমগ্রাম এবং জলপাইগুড়িতে। তৃণমূলের বিরুদ্ধে পাল্টা মৃত্যু নিয়ে রাজনীতি করার অভিযোগ তুলেছে বিজেপি।
হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মধ্যমগ্রামে শনিবার জিয়ার আলি (৭০) নামে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। এর পরেই পরিবারের দাবি, এসআইআর-এর গণনা-পত্র পূরণের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য নিয়ে চিন্তায় ছিলেন জিয়ার। ২০০২-এর ভোটার তালিকায় নাম থাকলেও এপিক নম্বর খুঁজে পাননি তিনি। মৃতের পুত্রবধূ শাকিলা বিবি ও মমতা বিবিরা এ দিন বলেছেন, “গ্রামে তৃণমূলের শিবির থেকে এবং বাড়িতেও শ্বশুরমশাইকে বোঝানো হয়েছিল যে, আমরা এখানকার বাসিন্দা। চিন্তার কিছু নেই। কিন্তু উনি নিশ্চিন্ত হতে পারেননি। ফর্ম পূরণ করা অভ্যাস করছিলেন। অসুস্থ অবস্থায় সেই সব কাগজ ওঁর সামনেই ছড়িয়েছিল।” স্থানীয় বিধায়ক তথা খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষ-সহ তৃণমূল নেতৃত্ব মৃতের বাড়িতে গিয়েছিলেন। কেন্দ্রের শাসক দলকে নিশানা করে রথীনেরও দাবি, “বিজেপি নেতাদের মুখে লাগাতার অনুপ্রবেশকারী, এই ধরনের শব্দ শুনে মানুষ ভয় পাচ্ছেন। জিয়ারের এপিক নম্বর ছিল না। এই না-থাকাটা কমিশনের ভুল। তারই মাসুল দিলেন ওই ব্যক্তি।”
পাশাপাশি, জলপাইগুড়ি সদর ব্লকের দক্ষিণ বেরুবাড়ি পঞ্চায়েতের সাতকুড়া এলাকায় গত বুধবার কমলা রায় নামে বছর ৫২-র এক প্রৌঢ়ের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়েছিল। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, কমলা ৪০ বছর আগে বাংলাদেশে থেকে ভারতে এসেছিলেন। ভারতের বৈধ আধার কার্ড, ভোটার কার্ড, এমনকি ২০০২-এর ভোটার তালিকাতেও তাঁর নাম ছিল বলে দাবি। যদিও মৃতের ছেলে তোতন রায় বলেছেন, “বাবা উদ্বেগে ছিলেন।” তৃণমূলেরও দাবি, এসআইআর-উদ্বেগেই প্রৌঢ় আত্মঘাতী হয়েছেন। এ দিকে, এসআইআর-আতঙ্কে বাগুইআটিতেও বাড়িতে গলায় দড়ির ফাঁস দিয়ে এক যুবক আত্মঘাতী হওয়ার চেষ্টা করেছেন বলে অভিযোগ। আপাতত দেশবন্ধু নগর হাসপাতালে তিনি ভর্তি। তৃণমূলের স্থানীয় পুর-প্রতিনিধি প্রণয় রায় বলেছেন, “মানুষের মধ্যে ভীতি তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে।”
যদিও বিধানসভায় বিজেপির দলীয় সচেতক শঙ্কর ঘোষ অবশ্য এই প্রেক্ষিতে তৃণমূলকেই নিশানা করেছেন। তাঁর বক্তব্য, “মৃত্যু নিয়ে রাজনীতি করা তৃণমূলের রক্তে রয়েছে। ক্ষমতায় আসার জন্য ২০০৯ থেকে ২০১১ পর্যন্ত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একই কাজ করেছিলেন। ক্ষমতা টিকে থাকতে এখনও একই কাজ করে চলেছেন। আগরপাড়ায় প্রৌঢ়ের মৃত্যুর পরে তৃণমূলের নাটক সামনে চলে এসেছে। এই সব করে তৃণমূল আসলে মৃতদের অপমান করছে।”
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)