Advertisement
E-Paper

বিস্ফোরণ কাণ্ডে অস্বস্তি তৃণমূলে

পুরভোটের সাফল্যকে সামনে রেখে যখন আগামী বিধানসভা নির্বাচনের প্রস্তুতির কথা ভাবা হচ্ছিল, ঠিক তখনই পিংলা বিস্ফোরণ-কাণ্ড শাসক দলের অন্দরে চরম অস্বস্তির বাতাবরণ তৈরি করেছে। পুলিশ-তৃণমূলের প্রশ্রয়েই ব্রাহ্মণবাড়ে বেআইনি বাজি-বোমার কারখানা চলছিল বলে অভিযোগ উঠেছে। ঘটনায় ধৃত রঞ্জন মাইতিও তৃণমূল ঘনিষ্ঠ বলে এলাকাবাসীর দাবি। স্বভাবতই বিড়ম্বনায় তৃণমূলের পশ্চিম জেলা নেতৃত্ব।

বরুণ দে

শেষ আপডেট: ১১ মে ২০১৫ ০৩:৪১
পিংলায় বিস্ফোরণের পরে তৎপর পুলিশ। রবিবার হাওড়ার উলুবেড়িয়ার মালপাড়ায় পুলিশি অভিযান চালিয়ে আটক করা প্রচুর বাজি। গ্রেফতার করা হয় এক জনকে।ছবি: সুব্রত জানা।

পিংলায় বিস্ফোরণের পরে তৎপর পুলিশ। রবিবার হাওড়ার উলুবেড়িয়ার মালপাড়ায় পুলিশি অভিযান চালিয়ে আটক করা প্রচুর বাজি। গ্রেফতার করা হয় এক জনকে।ছবি: সুব্রত জানা।

পুরভোটের সাফল্যকে সামনে রেখে যখন আগামী বিধানসভা নির্বাচনের প্রস্তুতির কথা ভাবা হচ্ছিল, ঠিক তখনই পিংলা বিস্ফোরণ-কাণ্ড শাসক দলের অন্দরে চরম অস্বস্তির বাতাবরণ তৈরি করেছে। পুলিশ-তৃণমূলের প্রশ্রয়েই ব্রাহ্মণবাড়ে বেআইনি বাজি-বোমার কারখানা চলছিল বলে অভিযোগ উঠেছে। ঘটনায় ধৃত রঞ্জন মাইতিও তৃণমূল ঘনিষ্ঠ বলে এলাকাবাসীর দাবি। স্বভাবতই বিড়ম্বনায় তৃণমূলের পশ্চিম জেলা নেতৃত্ব। ইতিমধ্যে ঘটনাস্থলে এসেছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র, বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহরা। কাল, মঙ্গলবার আসার কথা বামফ্রন্টের রাজ্য চেয়ারম্যান বিমান বসুর। অথচ তৃণমূলের রাজ্য নেতৃত্ব দূর, জেলা নেতারাও ব্রাক্ষ্মণবাড় বা তার আশপাশ মাড়াচ্ছেন না। বিস্ফোরণের পরদিন এলাকায় গিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়েন তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি অজিত মাইতি।

তৃণমূল ছাত্র পরিষদ শনিবার পিংলায় মিছিল করলেও ঘটনাস্থলে যাওয়ার ঝুঁকি নেয়নি। বিজেপির জেলা নেত্রী অন্তরা ভট্টাচার্য বলছেন, “কোন মুখে আসবে ওরা (তৃণমূল)? পিংলার ঘটনায় ওদের মুখ পুড়েছে। মানুষের কাছে সব স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে।”

বিস্ফোরণ-কাণ্ডে যোগ যথারীতি অস্বীকার করছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। দলের জেলা কার্যকরী সভাপতি প্রদ্যোৎ ঘোষ বলেন, “পিংলার ঘটনা নিয়ে বিরোধীরা একযোগে কুৎসা করছে।” কেন দলের নেতারা ঘটনাস্থলে যাচ্ছেন না? সদুত্তর এড়িয়ে প্রদ্যোৎবাবুর জবাব, “এলাকার মানুষের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ রয়েছে।” তৃণমূলের এক সূত্রে খবর, পরিস্থিতি মোকাবিলায় শীঘ্রই পিংলায় সমাবেশ হতে পারে।

জেলার ৬টি পুরসভায় সদ্য নির্বাচন হয়েছে। ঘাটাল, ক্ষীরপাই, চন্দ্রকোনা ও খড়ার— এই চারটিতে বিপুল জয় পেয়েছে তৃণমূল। রামজীবনপুর এবং খড়্গপুরে ত্রিশঙ্কু ফল হলেও বিরোধী ভাঙিয়ে পুরবোর্ড গড়ার তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন নেতৃত্ব। পুরভোটের এই সাফল্যের ভিত্তিতে আগামী বিধানসভা নির্বাচনের আগে ঘর গোছানোর ভাবনাচিন্তা শুরু হয়েছিল তৃণমূলের অন্দরে। পাড়া বৈঠক, বুথ ও অঞ্চল সম্মেলন সেরে ফেলার নির্দেশ পৌঁছে গিয়েছিল ব্লকে ব্লকে। পিংলাতেও বুথ সম্মেলন শুরু হয়েছিল। ঠিক এই পরিস্থিতিতে বিস্ফোরণ-কাণ্ড কিছুটা ব্যাকফুটে ঠেলে দিয়েছে তৃণমূলকে।

বিস্ফোরণের পরে সামনে এসেছে ব্রাহ্মণবাড়ের ওই বাজি কারখানা চালাতেন রঞ্জন ও রামপদ মাইতি। সদ্য অপসারিত তৃণমূলের ব্লক সভাপতি গৌতম জানার ঘনিষ্ঠ রঞ্জন ছিলেন দলের বুথ সভাপতি। এ হেন রঞ্জনই বিস্ফোরণ-কাণ্ডে গ্রেফতার হওয়ায় বিরোধীরা তৃণমূলকে বিঁধছে। বিজেপির জেলা সভাপতি তুষার মুখোপাধ্যায় বলেন, “বাজি বলে দায় এড়ানোর চেষ্টা হতে পারে। তবে মানুষ তা বিশ্বাস করবে না।” সিপিএমের জেলা সম্পাদক তরুণ রায়েরও অভিযোগ, “তৃণমূল সত্যিটা আড়াল করার চেষ্টা করছে।” জেলা কংগ্রেস সভাপতি বিকাশ ভুঁইয়ার আবার মত, নিরপেক্ষ তদন্ত হলেই সব স্পষ্ট হবে।

বিস্ফোরণে ১২ জনের মৃত্যুর পরে অভিযোগ উঠেছে, ওই কারখানায় বাজির আড়ালে বোমা তৈরি হত। পুলিশ সব জেনেও ব্যবস্থা নেয়নি। বিস্ফোরণের পরেই পিংলার থানার ওসি পঙ্কজ মিস্ত্রিকে সাসপেন্ড করে ‘ক্লোজ’ করা হয়েছে। জেলা পুলিশের এক সূত্রে খবর, চাপে পড়েই এই সিদ্ধান্ত। পুলিশ চাপে রয়েছে বলেই বিস্ফোরণের মৃত পিংলার তিন বাসিন্দার দেহ গ্রামে নিয়ে যেতে দেয়নি বলেও অভিযোগ। ব্রাহ্মণবাড়ের বাসিন্দা মৃত শুভেন্দু ভক্তার দেহ শনাক্ত করতে জামাইবাবু ধর্মেন্দ্র বেরাকে মেদিনীপুরে নিয়ে আসা হয়। দেহ পুড়িয়েও দেওয়া হয়েছে শহরের পদ্মাবতী শ্মশানে। একই ভাবে রামপদ মাইতি এবং তাঁর স্ত্রী রিনার দেহ শনাক্ত করতে রামপদর কাকা গৌর মাইতি এবং খুড়তুতো ভাই কেনারামকে মেদিনীপুরে এনে দেহ দু’টি সৎকার করানো হয়েছে। গ্রামে দেহগুলি পাঠানো হলে পুলিশকে ক্ষোভের মুখে পড়তে হবে, এই আশঙ্কাতেই পুলিশ এ কাজ করেছে বলে অনুমান। যদিও জেলার পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষের দাবি, “পরিজনেরাই মৃতদেহ শনাক্ত করেছেন। পরে তাঁদের দেহ দিয়ে দেওয়া হয়েছে।” একই সুরে তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি অজিতবাবু বলেন, “দেহ কোথায় দাহ করা হবে, এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেন পরিজনেরাই।”

barun dey midnapore blast mamata bandopadhyay police trinamool tmc bjp
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy