Advertisement
E-Paper

উপাচার্য-ছাত্রনেত্রী কথা, চত্বরে খণ্ডযুদ্ধ

উপাচার্যের ঘরে অবাধ ও সুষ্ঠু ছাত্রভোটের জন্য দরবার করছেন টিএমসিপির সভানেত্রী জয়া দত্ত। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্বর ও সেনেট হলে তখন ধুন্ধুমার খণ্ডযুদ্ধ চলছে ওই সংগঠনেরই দু’টি গোষ্ঠীর মধ্যে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০১৭ ০২:৫৯
অচেতন এক তরুণীকে নিয়ে যাচ্ছেন টিএমসিপি সমর্থকরা।-নিজস্ব চিত্র

অচেতন এক তরুণীকে নিয়ে যাচ্ছেন টিএমসিপি সমর্থকরা।-নিজস্ব চিত্র

উপাচার্যের ঘরে অবাধ ও সুষ্ঠু ছাত্রভোটের জন্য দরবার করছেন টিএমসিপির সভানেত্রী জয়া দত্ত। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্বর ও সেনেট হলে তখন ধুন্ধুমার খণ্ডযুদ্ধ চলছে ওই সংগঠনেরই দু’টি গোষ্ঠীর মধ্যে। সন্ত্রস্ত সাধারণ পড়ুয়ারা দিশাহারার মতো দৌড়োদৌড়ি করছেন। সাংবাদিকেরা ছবি তুলতে চাওয়ায় ফেলে দেওয়া হচ্ছে মোবাইল। বৃহস্পতিবারের এই হিংস্র ছবি দেখিয়ে দিল, বিশ্ববিদ্যালয়ে শাসকের ছাত্র সংগঠনে খেয়োখেয়ি কোন স্তরে পৌঁছেছে।

এ দিন টিএমসিপি সভানেত্রীর সঙ্গে ছিলেন অন্যান্য কলেজ থেকে আসা বেশ কিছু ছাত্র। বিশ্ববিদ্যালয়ের খবর, লড়াইটা জয়ার গোষ্ঠীর সঙ্গে প্রাক্তন সভাপতি অশোক রুদ্র-সুজিত শ্যাম গোষ্ঠীর। দুই গোষ্ঠীর রেষারষি প্রবল জেনেও জয়া বহিরাগতদের নিয়ে গেলেন কেন, সেই প্রশ্ন উঠেছে তৃণমূলে। তৃণমূলের এক নেতা জানান, জয়ার পরিপক্বতার অভাব স্পষ্ট। তাঁকে ছাত্র সংগঠনের শীর্ষ পদ থেকে সরানোর দাবি উঠেছে।

বিরোধী-শূন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে টিএমসিপির গোষ্ঠী-দ্বন্দ্ব বাড়ছিল কয়েক মাস ধরেই। এ দিন তা চূড়ান্ত রূপ নেয়। ছাত্রভোটে মনোনয়নপত্রের স্ক্রুটিনির ফল এ দিনই প্রকাশ করার কথা ছিল। জয়া দুপুরে বিরাট সমর্থকদল নিয়ে ক্যাম্পাসে ঢোকেন। অভিযোগ, তাঁর সঙ্গীদের অধিকাংশই বাইরের তরুণ-তরুণী। বহিরাগতদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকতে গেলে রেজিস্ট্রারের অনুমতি নিতে হয়। বহিরাগত ঠেকাতে সিসিটিভি বসেছে। তবু এত বহিরাগত কী ভাবে ঢুকল, সেই প্রশ্নের সঙ্গে কর্তৃপক্ষের ভূমিকাও প্রশ্নের মুখে। উপাচার্য আশুতোষ ঘোষ পরে বলেন, ‘‘আমার ঘরে অনেকেই ঢুকে গিয়েছিল। আমি জানাই, বিষয়টি পছন্দ করছি না। ওরা সুষ্ঠু নির্বাচন, পরীক্ষার ফল প্রকাশ ইত্যাদি দাবিদাওয়া নিয়ে এসেছিল।’’

উপাচার্যের সঙ্গে জয়ার বৈঠক চলাকালীন সেনেট হলে তুলকালাম বেধে যায়। রেজিস্ট্রারের ঘরের পিছনের দিকের দরজার কাচ ভেঙে দিয়েছে যুযুধান ছাত্রজনতা। মারামারি করতে করতে এক দল যুবক ঢুকে পড়েন ইঞ্জিনিয়ারের ঘরে। উপাচার্যের ঘর থেকে বেরিয়ে কমন রুমে মিটিং করেন জয়া। তিনি বেরিয়ে যাওয়ার পরে ক্যাম্পাসেই ফের সংঘর্ষ বাধে।

সংঘর্ষে সন্ত্রস্ত পড়ুয়াদের একাংশ উপাচার্যের ঘরে আশ্রয় নেন। উপাচার্য পরে গাড়িতে তাঁদের বাড়ি পাঠান। পুলিশ জানাচ্ছে, জয়া চলে যাওয়ার পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে সদলবল দেখা গিয়েছে এলাকার তৃণমূল নেতা দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়কে। জয়ার সঙ্গীরা সকলেই দেবাশিসের অনুগামী বলে তৃণমূলের অন্দরের খবর।

শিক্ষাবিদ আনন্দদেব মুখোপাধ্যায় এবং সিপিআইয়ের রাজ্য সম্পাদক প্রবোধ পণ্ডা কলেজ স্ট্রিটে বই কিনতে গিয়েছিলেন। তাঁরা জানান, ক্যাম্পাসের গোলমাল বাইরে চলে আসে। দুই গোষ্ঠী মারামারি করতে করতে এসে পড়ে তাঁদের গাড়ির উপরেই। আনন্দবাবু বলেন, ‘‘শিক্ষা ক্ষেত্রে চূড়ান্ত অরাজকতা চলছে। এ দিন রক্তারক্তি কাণ্ড ঘটল।’’

এ ভাবে ছাত্রভোট হতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন ক্ষুব্ধ শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘এত বহিরাগত কী ভাবে ক্যাম্পাসে কী ভাবে ঢুকল, উপাচার্যের তা দেখা উচিত ছিল। উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলেছি। আবার বলব। জয়ার সঙ্গেও বলব। এ ভাবে চলতে পারে না।’’

বহিরাগত তত্ত্ব উড়িয়ে জয়ার বক্তব্য, অগস্টে পরীক্ষা শেষ হলেও স্নাতক পার্ট ওয়ান পাশের ফল বেরোয়নি। ফল ঘোষণার দাবি জানাতেই তাঁর সঙ্গে আসেন বঙ্গবাসী, বিদ্যাসাগর, সুরেন্দ্রনাথ, উমেশচন্দ্র-সহ বেশ কিছু কলেজের পড়ুয়ারা। ছাত্রভোট সুষ্ঠু করার দাবিও জানানো হয় উপাচার্যের কাছে। আর অশোক রুদ্রের দাবি, ‘‘আমি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ত্রিসীমানায় যাই না।’’

Calcutta University TMC
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy