E-Paper

শুভেন্দুর জেলায় ঘাসফুলের চিন্তা ‘ঘরশত্রুরা’ই

২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে নন্দীগ্রামে স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হারের পরে তৃণমূলের দলীয় পর্যালোচনাতেই উঠে এসেছিল এই বিশ্বাসঘাতকতার তত্ত্ব।

আনন্দ মণ্ডল , কেশব মান্না

শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৫:১৪
শুভেন্দু অধিকারী এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।

শুভেন্দু অধিকারী এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।

লোকসভা ভোট দোরগোড়ায়। তার আগে শুভেন্দু অধিকারীর জেলা পূর্ব মেদিনীপুরে ‘ঘরশত্রু’ নিয়েই চিন্তায় তৃণমূল।

২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে নন্দীগ্রামে স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হারের পরে তৃণমূলের দলীয় পর্যালোচনাতেই উঠে এসেছিল এই বিশ্বাসঘাতকতার তত্ত্ব। সম্প্রতি পঞ্চায়েত ভোটের মুখ দাবি ওঠে, বিধানসভা ভোটে নন্দীগ্রামে দলের দায়িত্বপ্রাপ্তের সঙ্গে বিজেপি রাজ্য নেতৃত্বের যোগাযোগ রয়েছে। এ বারে লোকসভা নির্বাচনের মুখেও জেলায় তৃণমূলের ছোট-বড়-মাঝারি একাধিক নেতা অধিকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াচ্ছেন বলেই খবর।

বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলার অন্যতম সহ-সভাপতি আনন্দময় অধিকারী এবং কাঁথি সাংগঠনিক জেলার অন্যতম সাধারণ সম্পাদক চন্দ্রশেখর মণ্ডলের দাবি, ‘‘ঝাঁকে ঝাঁকে তৃণমূল নেতা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। নাম প্রকাশ করলে তাঁরা দল ছাড়তে সমস্যায় পড়বেন। তবে লোকসভা ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণার পরে এই জেলায় তৃণমূল একেবারে শেষ হয়ে যাবে।’’

তৃণমূলের মুখপাত্র তথা জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত কুণাল ঘোষ অবশ্য এই দাবি উড়িয়ে দিয়ে বলেন, ‘‘দলে কোনও ঘরশত্রু নেই। সবটাই সংবাদ মাধ্যমের বানানো গল্প। আদি বিজেপি কর্মীরা যে দলে দলে যে আমাদের সঙ্গে যুক্ত হতে চাইছেন, সে কথা কখনওই প্রচার করা হয় না।’’

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করাচ্ছেন, শিশির অধিকারী ও তাঁর পুত্র শুভেন্দু যখন পুরোদমে তৃণমূলে, তখন তাঁদের হাত ধরে জেলার অনেক নেতারই ক্ষমতায়ন হয়েছিল। পরে শুভেন্দু বিজেপিতে এলেও তাঁর অনেক অনুগামী দলবদল করতে পারেনি। তৃণমূলের একটি অংশের দাবি, কিন্তু ভিতরে-ভিতরে ‘অধিকারী-আনুগত্যে’ বাঁধা পড়ে আছেন ওই নেতারা। শুভেন্দু নিজেও প্রকাশ্যে দাবি করেছেন, ‘‘তৃণমূলে চারটি গোষ্ঠী। তার মধ্যে তিনটি আমার সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছে।’’ তার উপর তৃণমূলে আদি-নব্যের লড়াইয়ে ক্ষমতা হারিয়ে অনেকেই ক্ষুব্ধ। ফলে, তাঁরা যে ভোটের সময় বিশ্বাসঘাতকতা করবেন না, হলফ করে বলতে পারছেন না কেউই।

সম্প্রতি প্রবীণ সাংসদ শিশিরের পা ছুঁয়ে ‘গুরুদেব’ সম্বোধন করায় কাঁথির পুরপ্রধান সুবল মান্নাকে শো-কজ় করেছে তৃণমূল। শুভেন্দুর সঙ্গে প্রাক্তন মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্রও গোপন বৈঠক করেছেন বলে জল্পনা ছড়িয়েছে। এই আবহে কারা শুভেন্দুর সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছেন, তার তালিকা তৈরির দাবি উঠেছে তৃণমূলের অন্দরে। সেই তালিকায় নাকি প্রথমেই নাম থাকতে পারে একদা অধিকারী পরিবারের ঘনিষ্ঠ অর্ধেন্দু মাইতি এবং মামুদ হোসেনের।

অর্ধেন্দু ভগবানপুরের প্রাক্তন বিধায়ক। দলে থাকলেও তৃণমূলের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে সে ভাবে দেখা যায় না। জেলা পরিষদের প্রাক্তন সহ-সভাধিপতি তথা কাঁথি সংগঠনিক জেলা তৃণমূলের সহ-সভাপতি মামুদ হোসেনকে আবার গত বিধানসভা ভোটের আগে বিজেপি নেতা সৌমেন্দু অধিকারীর পাশে একটি অরাজনৈতিক কর্মসূচিতে দেখা গিয়েছে। যদিও মামুদ বলছেন, ‘‘তৃণমূলের ছিলাম, আছি এবং থাকব।’’ ভগবানপুরের প্রাক্তন বিধায়ক অর্ধেন্দু মাইতি বলছেন, ‘‘বয়স জনিত কারণে সব সময় দলের কর্মসূচিতে যেতে পারি না। আর ব্যক্তি নয়, বিজেপি দলগত ভাবে আমাদের রাজনৈতিক শত্রু।’’

শুভেন্দু তৃণমূলে থাকাকালীন নন্দীগ্রাম-২ ব্লক সভাপতি ছিলেন মহাদেব বাগ। গত বিধানসভা ভোটে মমতার হারের পরে তাঁকে সরিয়ে দেয় তৃণমূল। তিনিও গোপনে এলাকার বিজেপি বিধায়কের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছেন বলে শোনা যাচ্ছে। তবে মহাদেবও তা অস্বীকার করেছেন। জেলা সভাধিপতি উত্তম বারিক কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আতঙ্কে তলে তলে শুভেন্দুর সঙ্গে সম্পর্ক রেখে চলেছেন বলে তৃণমূলের একাংশের অভিযোগ। যদিও উত্তমের দাবি, ‘‘নির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণ দিয়ে না জানালে এ সব কথার কথা।’’ শুভেন্দু যোগের আশঙ্কায় গত বিধানসভা ভোটে খেজুরিতে প্রাক্তন বিধায়ক রণজিৎ মণ্ডল এবং ভগবানপুরে মানব পড়ুয়াকে নিষ্ক্রিয় করে রাখা হয়েছিল।

গত বছর পুরভোটের সময় ‘দাদার অনুগামী’রা ঘাসফুলের টিকিট পেয়েছেন বলে প্রকাশ্যে ক্ষোভ জানান রামনগরের বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী অখিল গিরি। তবে অখিল-বিরোধী শিবিরের নেতাদের অনুযোগ, পারিবারিক সম্পর্কের বাইরে গিরি পরিবার, অর্থাৎ অখিল ও তাঁর ছেলে সুপ্রকাশের সঙ্গে রাজনৈতিক বোঝাপড়া রয়েছে অধিকারীদের। যদিও সুপ্রকাশ বলছেন, ‘‘আমাদের সঙ্গে অধিকারী পরিবারের সম্পর্কের বিষয়ে দল ও দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানেন। এ নিয়ে বাইরের কাউকে কিছু বলার প্রয়োজন মনে করি না।’’ অখিলেরও দাবি, ‘‘জেলায় দলের মধ্যে কোন ঘরশত্রু আছে বলে আমার মনে হয় না।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

TMC BJP

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy