Advertisement
০৫ মে ২০২৪
Sougata Roy Kunal Ghosh

অভিষেকের ছবি থেকে বয়সবিধি! কুণালের উল্টো সুর সৌগতের, হাওয়া দেখে চলেন! রায়কে পাল্টা ঘোষ

কুণাল ঘোষ যে ভাবে সিপিএমের ‘বৃদ্ধতন্ত্রের’ প্রসঙ্গ তুলেছিলেন, সৌগত তার জবাব দিতে চেয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘সিপিএম তো দলে বয়সবিধি ঠিক করেছে। তাই বিমান বসু আর সম্পাদক নেই।’’

Sougata Roy Kunal Ghosh

(বাঁ দিকে) কুণাল ঘোষ। সৌগত রায় (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০২৩ ২০:৫৪
Share: Save:

তৃণমূলের আভ্যন্তরীণ সমীকরণ নিয়ে গত শুক্রবার কুণাল ঘোষের মন্তব্য ঘিরে তোলপাড় পড়ে গিয়েছিল শাসক দলের অন্দরে। সে দিন কুণাল যা যা বলেছিলেন, এক সপ্তাহ পরে সে সব কার্যত নস্যাৎ করতে চাইলেন তৃণমূলের প্রবীণ সাংসদ সৌগত রায়। যা শুনে পাল্টা আবার সৌগতের উদ্দেশে কুণাল বললেন, ‘‘উনি তো হাওয়া দেখে চলেন! ওঁর কাছে আনুগত্য শিখব না।’’

কুণাল গত সপ্তাহে যা যা বলেছিলেন তার মধ্যে অন্যতম ছিল, তৃণমূলের বিশেষ অধিবেশনের মঞ্চে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি না রেখে ঠিক কাজ করা হয়নি। মঞ্চ ‘অসম্পূর্ণ’ লাগছিল। কিন্তু সৌগত বললেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলে প্রথম ও শেষ কথা। অভিষেককে জিজ্ঞেস করলেও তা-ই বলবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি ছিল সেটাই যথেষ্ট।’’ সৌগতের এই বক্তব্যের পর প্রত্যাশিত ভাবেই ফের মুখ খুলেছেন তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল। তিনি বলেছেন, ‘‘আমরা সৌগতদার গুণমুগ্ধ। তিনি দীর্ঘদিনের সাংসদ। সিপিএমের সন্ত্রাস দেখেছেন, লড়াই করেছেন। আমারও জানি, মমতাদিই দলে প্রথম এবং শেষ কথা। কিন্তু সৌগতদা বোধহয় সেটা কিছুদিন দেরিতে বুঝেছিলেন। তাই তৃণমূল তৈরি হওয়ার পর ১৯৯৮ সালে প্রথম লোকসভা নির্বাচনে দক্ষিণ কলকাতায় মমতাদির বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়েছিলেন! যিনি হাওয়া দেখে চলেন, তাঁর কাছে আনুগত্য শিখব না।’’

‘বয়সবিধি’ নিয়েও গত সপ্তাহে মুখ খুলেছিলেন কুণাল। তাঁর বক্তব্য ছিল, যাঁরা প্রবীণ, তাঁদেরই উচিত নির্বাচনী লড়াই থেকে সরে দাঁড়ানো। তাতে নতুনেরা সুযোগ পাবেন। না হলে দলটা ক্রমশ ‘সিপিএমের বৃদ্ধতন্ত্রের’ দিকে চলে যাবে। সৌগতের বক্তব্য, কুণাল এ সব কথা সংবাদমাধ্যমে না বলে দলের মধ্যেই বলতে পারতেন। তাঁর কথায়, ‘‘মমতাই তো তরুণদের জায়গা করে দেন। আর কে প্রার্থী হবেন, তা মমতাই ঠিক করেন। কুণালকে‌ও তো সাংসদ করেছিলেন মমতা। আমি বাড়িতে বসেছিলাম। আমায় ফোন করে মমতা বলেছিলেন, আপনাকে দমদমে লড়তে হবে। যাঁকেই প্রার্থী করুন না কেন, মমতাকেই ঘুরে ঘুরে জেতাতে হবে।’’ এবিপি আনন্দকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সৌগত এ-ও বলেন, ‘‘নির্দিষ্ট বয়ঃসীমা থাকা উচিত নয়। মমতাই তো বলেছেন, মনের বয়সটাই ‌শেষ কথা।’’ প্রসঙ্গত, তৃণমূলের বিশেষ অধিবেশনে সৌগতের নামই উল্লেখ করে মমতা বলেছিলেন, ‘‘সৌগতদা বলছিলেন, বয়স হয়ে যাচ্ছে। আমি বললাম, বয়স আবার কী? মনের বয়সটাই শেষ কথা।’’ কুণাল অবশ্য তার পরেই বলেছিলেন, ‘‘রাজনীতি মানেই কি সাংসদ, বিধায়ক হতে হবে? সেই জায়গা নতুনদের ছেড়ে দিয়ে সংগঠনে কাজ করা যায় না? আমি তো বলেছি, আমি আর সাংসদ, বিধায়ক হব না। ছাড়তে জানতে হবে তো।’’

কুণাল যে ভাবে সিপিএমের ‘বৃদ্ধতন্ত্রের’ প্রসঙ্গ তুলেছিলেন, সৌগত তারও জবাব দিতে চেয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘সিপিএম তো দলে বয়সবিধি ঠিক করেছে। তাই বিমান বসু আর সম্পাদক নেই। সেলিমকে ওই জায়গায় আনা হয়েছে। সেলিমের বয়স ষাটের ঘরে।’’ সৌগতের এই মন্তব্য নিয়ে কুণাল আবার বলেছেন, ‘‘বিমানদা কখনও সাংসদ, বিধায়ক হননি। তিনি সংগঠনটাই করেছেন। আর নতুনদের দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছেন বলেই বিমানদা সম্মান পাচ্ছেন।’’

প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের পর দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পেয়েছিলেন অভিষেক। তার পরেই বেশ কিছু সাংগঠনিক সংস্কারের চেষ্টা শুরু করেন এই তরুণ নেতা। বেশ কিছু সংস্কারের কথা অভিষেক নিজমুখে প্রকাশ্যেই বলেছিলেন। তার মধ্যে কিছু কার্যকর করা গিয়েছে। আবার বেশ কিছু যায়ওনি। অভিষেক যে যে সংস্কারের কথা বলেছিলেন তার মধ্যে অন্যতম দু’টি বিষয় ছিল বয়সবিধি এবং এক ব্যক্তি-এক পদ নীতি।

অভিষেকের সাংগঠনিক অভিমুখ স্পষ্ট হতেই বেশ কিছু প্রবীণ নেতার গলায় ‘বিদ্রোহ’ শোনা গিয়েছিল। যাকে রাজনৈতিক মহলের অনেকে ‘স্বার্থের সংঘাত’ বলে উল্লেখ করেছিলেন। পক্ষান্তরে, অভিষেকের ঘনিষ্ঠ নেতাদের বক্তব্য ছিল, নতুন কিছু করতে গেলে সবসময়েই বাধা আসে। এটা রাজনীতিতে নতুন কিছু নয়। যদিও তৃণমূল লিখিত ভাবে দলে বয়সবিধি তৈরি করেছে বলে জানা যায়নি। আবার সব ক্ষেত্রে এক ব্যক্তি এক পদ নীতি কার্যকর করা গিয়েছে তা-ও নয়। যেমন ফিরহাদ হাকিম এখনও মন্ত্রী এবং কলকাতার মেয়র পদে রয়েছেন। অধুনা জেলবন্দি মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে অনেক দিন আগেই জেলা সভাপতি অর্থাৎ সাংগঠনিক পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছিল শাসকদল। তৃণমূলের অনেকে এ-ও বলেন, অভিষেক সংগঠনের হাল ধরার পর গোটা বিষয়টিকে একটি পরিকাঠামোর ছাঁচে ঢালতে চেয়েছেন। সেখানে যেমন রাস্তার আন্দোলন রয়েছে, তেমনই রয়েছে সামাজিক মাধ্যমের ব্যবহারও। সাংগঠনিক কর্মসূচির পরীক্ষাও হয় পেশাদার পথে। কিন্তু দলের অনেকে সেই ঘরানাতেও মানিয়ে নিতে পারছেন না বলে শোনা যায়। কুণালের গত শুক্রবারের বক্তব্য নতুন করে তৃণমূলে ‘প্রবীণ-নবীন’ দ্বন্দ্ব উস্কে দিয়েছিল। সৌগত তাতেই তাল ঠুকলেন এক সপ্তাহের মাথায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE