শেষমেশ নটে গাছটিও মুড়োলো!
একের পর এক দখলদারির বাজারে বিরোধীদের হাতে সবেধন নীলমণি বলতে ছিল শুধু মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদ। একটু একটু করে ভাঙন ধরাতে ধরাতে শেষ পর্যন্ত কংগ্রেসের হাতে থাকা ওই জেলা পরিষদেও দখলদারি কায়েম করল শাসক দল। স্বয়ং প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর গড়ে বড়সড় ধাক্কা দিল তৃণমূল।
তিন বছর আগে পঞ্চায়েত ভোটে ৭০ আসনের মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদে একটি মাত্র আসন জিতেছিল তৃণমূল! সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য ম্যাজিক সংখ্যা ৩৬। বিধানসভা ভোটের পর থেকে জোর কদমে আসরে নেমে ২৯টি আসন নিজেদের দিকে টেনে এনেছিল তৃণমূল। কংগ্রেসের সাত, সিপিএমের দুই এবং আরএসপি-র এক জন সদস্যের হাতে শুক্রবার তৃণমূল ভবনে শাসক দলের পতাকা ধরিয়ে জেলা পরিষদে নিজেদের সংখ্যাকে ৩৯-এ নিয়ে গেলেন শুভেন্দু অধিকারীরা। ইদের পরের দিন ডিভিশনাল কমিশনারের কাছে বিগত জেলা পরিষদের বিরুদ্ধে তৃণমূল অনাস্থা আনার আবেদন জানাবে। শুভেন্দুর কথায়, এই জেলা পরিষদ দখল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ইদ ও প্রাক্-পুজোর উপহার!
প্রশ্ন উঠছে, নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ধারেকাছেও না থেকে এ ভাবে বিরোধীদের ঘর ভেঙে নির্বাচিত সংস্থা দখল করা কি আদৌ নীতিসম্মত? মালদহ, জলপাইগুড়ি থেকে মুর্শিদাবাদ, একই ঘটনা বারবার ঘটিয়ে চলেছে তৃণমূল। দখল হয়ে যাচ্ছে একের পর এক পঞ্চায়েত সমিতি, গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে পুরসভা পর্যন্ত। কিন্তু তৃণমূল নেতৃত্ব যে নৈতিকতার প্রশ্ন নিয়ে আদৌ ভাবিত নন, তার ইঙ্গিত এ দিন ফের মিলেছে দলের তরফে মুর্শিদাবাদের দায়িত্বপ্রাপ্ত পর্যবেক্ষক শুভেন্দুর মন্তব্যে। তিনি নির্দ্বিধায় বলেছেন, ‘‘গোটা রাজ্যই যখন তৃণমূল, তখন মুর্শিদাবাদ আর তার বাইরে থাকবে
কেন? এ রাজ্যে উন্নয়ন করতে গেলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরেই করতে হবে!’’
এখানেই শেষ নয়। অধীরকে রাজনৈতিক ভাবে আরও কোণঠাসা করতে এ বার তাঁর খাস তালুক বহরমপুরকেও যে নিশানা করা হবে, তা-ও বুঝিয়ে দিয়েছেন শুভেন্দু। বহরমপুর পুরসভা এখনও একচ্ছত্র ভাবে কংগ্রেসের দখলে। মন্ত্রী শুভেন্দু এ দিন ঘোষণা করেছেন, ‘‘বহরমপুর শহরে এখনও আমাদের সাংগঠনিক শক্তি কম। এ বার বহরমপুর শহরটাকেও আমাদের বৃত্তে আনতে হবে।’’ আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর বহরমপুরে সভা করার কথা তাঁর। মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদ দখলের জন্য ডিসেম্বরের সময়সীমা ঠিক করেছিলেন তৃণমূল নেতৃত্ব। আগাম কাজ হাসিল হয়ে যাওয়ার পরে শুভেন্দুর সংযোজন, ‘‘ডিসেম্বরের মধ্যে মালদহ-মুর্শিদাবাদে কংগ্রেস বলে আর কিছু থাকবে না!’’
জেলা পরিষদ এ ভাবে হাতছাড়া হওয়ায় অধীরবাবু একই সঙ্গে ক্ষুব্ধ এবং হতাশ। যে ভাবে তৃণমূল গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ভেঙে তছনছ করছে, তার নিন্দার ভাষা নেই বলে জানিয়ে প্রদেশ সভাপতি বলেন, ‘‘দিদি বলেছেন, জেলা পরিষদ দখল করতে হবে। তাই যে ভাবেই হোক প্রশাসন, পুলিশ, অর্থবলকে কাজে লাগিয়ে জেলা পরিষদ দখলের জন্য তৃণমূল নেতাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। জেলাশাসক থেকে থানার ওসিকে কাজে লাগানো হয়েছে।’’ অধীরবাবুর অভিযোগ, কাউকে টাকার লোভ, কাউকে খুনের হুমকি, কাউকে মাদক পাচারের মামলার ভয় দেখানো হয়েছে। তাঁর অভিযোগ, ‘‘পঞ্চায়েতি রাজের মূল কথা গণতন্ত্রকে আরও প্রসারিত করা। কিন্তু দিদি তার ঠিক উল্টো কাজ করছেন!’’
প্রসঙ্গত বিষ্ণুপুরের দলত্যাগী বিধায়ক তুষার ভট্টাচার্যের বিধায়ক-পদ বাতিলের দাবিতে এ দিনই বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়কে সংবাদমাধ্যমের রিপোর্টের প্রতিলিপি-সহ চিঠি পাঠিয়েছেন কংগ্রেস পরিষদীয় দলনেতা আব্দুল মান্নান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy