Advertisement
E-Paper

নির্দেশ অগ্রাহ্য করে বহিষ্কৃত তৃণমূল নেতা

মাত্র দু’দিন আগেই সতর্ক করেছিলেন খোদ দলনেত্রী। বর্ধমানের নেতাদের নিজের বাড়িতে বৈঠকে ডেকে জানিয়েছিলেন, কোনও গোষ্ঠীবাজি বরদাস্ত করবেন না তিনি। তার পরেও জেলা নেতৃত্বের নির্দেশ না মানায় দলের রায়না ২ ব্লক সভাপতি আনসার আলি খানকে বহিষ্কার করল তৃণমূল।

নিজস্ব সংবাদদাতা, রায়না

শেষ আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৩:১৭
আনসার আলি।

আনসার আলি।

মাত্র দু’দিন আগেই সতর্ক করেছিলেন খোদ দলনেত্রী। বর্ধমানের নেতাদের নিজের বাড়িতে বৈঠকে ডেকে জানিয়েছিলেন, কোনও গোষ্ঠীবাজি বরদাস্ত করবেন না তিনি। তার পরেও জেলা নেতৃত্বের নির্দেশ না মানায় দলের রায়না ২ ব্লক সভাপতি আনসার আলি খানকে বহিষ্কার করল তৃণমূল।

তৃণমূল সূত্রের খবর, সোমবার কলকাতায় খবর পৌঁছতেই আনসার আলিকে বহিষ্কার করার জন্য সুব্রত বক্সীকে নির্দেশ দেন নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আনসারের বিরুদ্ধে অবৈধ বালি কারবারে যুক্ত থাকা এবং নিহত দলীয় নেতা আব্দুল আলিমের স্ত্রী রুনা লায়লার বিরুদ্ধে মামলায় মদত দেওয়ার অভিযোগ দলের মধ্যে আগেই ছিল। রুনাকে রায়না ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি করার দলীয় সিদ্ধান্তও তিনি মানেননি। তার বদলে এ দিন অনুগামীদের ভোটে নিজেই ওই পদে বসে পড়েন।

রাতে তৃণমূলের জেলা সভাপতি (গ্রামীণ) স্বপন দেবনাথ বলেন, ‘‘দলের নির্দেশে রায়না ২ ব্লকের সভাপতি আনসার আলি খানকে বহিষ্কার করা হয়েছে। কারা ওঁর সঙ্গে যুক্ত, তা জানতে তদন্ত কমিটিও গড়া হচ্ছে।’’ স্বপনবাবুই ওই তদন্ত কমিটির দায়িত্বে থাকছেন। তবে আনসার যে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হয়ে গিয়েছেন, দল ওই পদ থেকে তাঁকে সরাতে পারবে না। এক বছরের আগে অনাস্থা প্রস্তাবও আনা যাবে না। তার আগেই বিধানসভা নির্বাচন এসে যাবে। তার মধ্যে অনেক অঙ্কই পাল্টে যেতে পারে বলে তৃণমূলেরই একাংশ মনে করছেন।

গত ১০ মে আলমপুরে নিজের বাড়ির কাছেই আততায়ীর গুলিতে খুন হয়েছিলেন রায়না ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, তৃণমূলের আব্দুল আলিম ওরফে বাবলু। মাধবডিহি থানা থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে ঘটনাটি ঘটে। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী, নিহতের ভাগ্নে শেখ হালিম মোট ১৫ জনের নামে অভিযোগ দায়ের করেন। পরে উপ-নির্বাচনে আলিমের স্ত্রী শেখ রুনা লায়লাকে প্রার্থী করে তৃণমূল। তিনি জয়ী হন। আগেই রুনাকে প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতরে অস্থায়ী পদে চাকরি দেওয়া হয়েছিল। পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি করার উদ্দেশে তাঁকে সেই চাকরি ছাড়তে বলা হয়। তিনি তা ছেড়েও দেন। কিন্তু শেষ মুহূর্তে বাদ সাধে আনসার-বাহিনী।

সাংসদ সুনীল মণ্ডলকে ঘিরে বিক্ষোভ।— নিজস্ব চিত্র।

তৃণমূল সূত্রের খবর, রুনাকে যে তাঁর স্বামীর পদে বসানো হবে, জেলা স্তরে আগেই তা ঠিক হয়ে গিয়েছিল। সপ্তাহ দুয়েক আগে বর্ধমান শহরের সংস্কৃতি লোকমঞ্চে অ্যানেক্স হলে দলের জেলা সভাপতি (গ্রামীণ) স্বপন দেবনাথ, বর্ধমান পূর্বের সাংসদ তথা রায়নার পর্যবেক্ষক সুনীল মণ্ডল এবং অন্য জেলা নেতারা রায়না ২ পঞ্চায়েত সমিতির ২২ জন সদস্যকে নিয়ে বৈঠকে বসেন। সর্বসম্মতি ক্রমে রুনাকে সভাপতি করার প্রস্তাব হয়। তা রাজ্য নেতৃত্বকেও জানানো হয়। ১ ডিসেম্বর সুনীলবাবুকে চিঠি দিয়ে স্বপনবাবু জানান— রাজ্য নেতৃত্বের পরামর্শ অনুযায়ী রায়না ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি হিসেবে রুনা লায়লাকে মনোনীত করা হয়েছে। ব্লক সভাপতি আনসার এবং রায়না ২ ব্লকের পঞ্চায়েতগুলিকেও ফোনে সেই সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেন স্বপনবাবু।

এ দিন বেলা ১১টায় সভাপতি নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার কিছু ক্ষণের মধ্যেই ব্লক অফিসে চলে এসে সুনীলবাবু জানান, দলের নির্দেশে রুনা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি হবেন। এই নির্দেশ কেউ অমান্য করলে দল তার বিরুদ্ধে কঠিন ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু তা শুনেই আনসারের সাঙ্গোপাঙ্গেরা চিৎকার করে বলতে থাকেন— ‘‘আমরা এই নির্দেশ মানি না।’’ পরিস্থিতি দেখে সুনীলবাবু ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যান। রুনাকে নিয়ে বেরিয়ে যান ৮ জন পঞ্চায়েত সমিতি সদস্যও। তাঁরা চলে যাওয়ার পরে ১৩ জন সদস্য আনসার আলি খানকে সভাপতি নির্বাচিত করেন। এক জন সদস্য সভায় থাকলেও ভোট দেননি।

ইতিমধ্যে সুনীলবাবু রুনাকে নিয়ে গাড়িতে জেলা দফতরের দিকে রওনা দিতেই রুনা-অনুগামী শ’তিনেক কর্মী বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। কয়েক জন গাড়ির সামনে শুয়েও পড়েন। তাঁদের দাবি, দলের নির্দেশ যারা মানেনি তাদের বহিষ্কার করতে হবে। সুনীলবাবু আশ্বাস দেন, দল ব্যবস্থা নেবে। দুপুর দেড়টা থেকে চার বছরের ফারহানকে সঙ্গে নিয়ে ব্লক অফিসের সামনে ধর্নায় বসেন রুনা। তিনি দাবি করেন, ‘‘দলীয় নির্দেশ যাঁরা মানছেন না এবং আমার স্বামীর খুনের ঘটনায় জড়িতদের মদত দিচ্ছেন, তাঁদের বহিষ্কার করতে হবে।’’ পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ জুলফিকার খান অভিযোগ করেন, ‘‘আলিমের খুনে জড়িতদের সঙ্গে নিয়ে সদস্যদের বাড়ি-বাড়ি গিয়ে হুমকি দিয়েছিল আনসার। আলিম খুনে অভিযুক্তদের জামিনের বিষয়েও সে তদারকি করে। মনে হয়, রুনাকে হারাতে দুষ্কৃতী ব্যবহারের পাশাপাশি বিস্তর টাকাও ছড়িয়েছেন উনি।’’

আনসার অবশ্য দাবি করেন, ‘‘আমি দলের অনুগত সৈনিক। দলের কেউ ফোনে কোনও নির্দেশ দেননি। সুনীলবাবু যখন দলের চিঠি নিয়ে আসেন, নির্বাচন প্রক্রিয়া শেষ হয়ে গিয়েছে।’’ সুনীলবাবু পাল্টা বলেন, ‘‘জেলা সভাপতি নিজে ওঁকে ফোন করে দলের নির্দেশ জানিয়েছিলেন। দলবিরোধী কাজ করতেও নিষেধ করেন। আমি নির্দিষ্ট সময়ে গিয়ে দলের চিঠি সকলকে দেখিয়েছিলাম। তার পরেও নিজেকে ‘দাদা’ প্রমাণ করতে উনি দলের নির্দেশ অমান্য করেন।’’ তবে রাত পর্যন্ত তাঁকে কেউ বহিষ্কারের কথা জানাননি বলে আনসার দাবি করেছেন।

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy