গত বছর পুরসভার বাজেটে ১০৯ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর অনন্যা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘যৌনগন্ধী’ বক্তৃতা নিয়ে জোর বিতর্ক হয়েছিল। যার জেরে ঘরে-বাইরে আক্রমণের মুখে পড়তে হয়েছিল শাসকদল তৃণমূলকে। সেই ঘটনার জেরে এ বছর বাজেট অধিবেশনের আগে সতর্ক তৃণমূল কাউন্সিলর দল। আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি কলকাতা পুরসভার বাজেট অধিবেশন। এর পর ২৪-২৫ ফেব্রুয়ারি সেই বাজেট নিয়ে আলোচনা হবে পুর অধিবেশনে। এই তিন দিনের বাজেট আলোচনা পর্বে যাতে দলের কোনও কাউন্সিলর বিরূপ বা বিতর্কিত বক্তৃতা না করেন, সে ব্যাপারে ইতিমধ্যে পদক্ষেপ করেছেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। পুরসভা সূত্রে খবর, এ বিষয়ে তিনি কড়া নজর রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন পুরসভায় তৃণমূল কাউন্সিলর দলের মুখ্যসচেতক বাপ্পাদিত্য দাশগুপ্তকে। যাতে কাউন্সিলরদের বক্তৃতা নিয়ে কোনও বিতর্ক না হয় সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলেছেন মেয়র।
গত বছর বাজেট বিতর্কে অংশ নিয়ে পশ্চিমি সংস্কৃতিতে ‘ফাদার’ এবং ‘নান’দের (সন্ন্যাসিনী) সম্পর্ক নিয়ে নানা গল্পের কথা উল্লেখ করেছিলেন অনন্যা। সেই ‘যৌনগন্ধী’ গল্পে বাইবেলের ১১২ নম্বর অধ্যায়ে ‘গভীরে যাও, আরও গভীরে যাও’ বাণী রয়েছে বলে দাবি করেছিলেন তিনি। সেই সময় অধিবেশনে প্রতিবাদ ওঠে বিজেপির তরফে। ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি কাউন্সিলর সজল ঘোষ এবং ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি কাউন্সিলর বিজয় ওঝা অনন্যার মন্তব্যের প্রতিবাদ করেন। পরে অনন্যার বক্তৃতার খবর জানাজানি হতে বিতর্ক শুরু হয়। সেই দিন সন্ধ্যায় দলীয় কাউন্সিলরের ওই মন্তব্যের কথা জানতে পারেন তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সঙ্গে সঙ্গেই তিনি ফোন করেন মেয়রকে। ভর্ৎসনা করে ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী অনন্যার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন মেয়রকে। অনন্যা যাতে পুর অধিবেশনে আর বক্তৃতা করার সুযোগ না পান, সেই বন্দোবস্ত করতে নির্দেশ দেন।
তার পরেই নিজের এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে এই বিষয়ে মেয়র ফিরহাদ লেখেন, ‘‘আজ পুরসভায় বাজেট বক্তৃতায় পুর প্রতিনিধি অনন্যা বন্দ্যেপাধ্যায়ের কিছু মন্তব্য সমাজের এক সম্প্রদায়ের মানুষকে আঘাত করেছে। আমি এই বিষয়ে অত্যন্ত দৃঢ় ভাবে জানাচ্ছি যে, ওঁর এই মতের সঙ্গে দল একমত নয় এবং দলের পক্ষ থেকে এর তীব্র নিন্দা করা হচ্ছে। ওঁর কাছে তৃণমূল পুর দলের পক্ষ থেকে এই বক্তব্যের জবাবদিহি চাওয়া হয়েছে।’’ নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে মেয়রের প্রশ্নের জবাব দেন অনন্যা। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পর মেয়রের দফতর থেকে ফোন করে অনন্যাকে বাজেট অধিবেশনে না আসার নির্দেশ পাঠানো হয়। এর পর পুর অধিবেশনে অনন্যার বক্তৃতাও বন্ধ হয়ে যায়। আর বছর ঘুরে আবার নতুন বাজেট অধিবেশন কলকাতা পুরসভায়। তাই এ বার আগে থেকেই সতর্ক পুরসভার তৃণমূল কাউন্সিলর দল। তবে এ বিষয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে নারাজ শাসকদল। তৃণমূল কাউন্সিলর দলের একটি সূত্র জানাচ্ছে, কোন কাউন্সিলর কী বিষয়ে বক্তৃতা করবেন তা দলীয় নেতৃত্বের অনুমোদন নিয়েই ঠিক করা হচ্ছে এ বার।