বিচারকের এজলাসে অভিযুক্তদের কুঠুরিতে দাঁড়িয়ে শুনানির আগেও পুলিশের বিরুদ্ধে ফোঁস করেছিলেন। শুনানি শেষে জামিন নামঞ্জুর হয়ে জেল হাজতের নির্দেশ হতে তৃণমূলের সেই ছাত্রনেতাই কেমন যেন চুপসে গেলেন। অভিযোগ করলেন, পুলিশ তাঁকে ফাঁসিয়েছে।
দল হাত তুলে নিলে কী হয়, তা টের পেয়ে গেলেন রানিগঞ্জের তৃণমূল ছাত্র পরিষদ নেতা সৌমিত্র বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার পুলিশের গাড়ি জ্বালানো ও থানায় বোমা মারার হুমকি দেওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ওই ছাত্রনেতাকে তাঁর বাড়ি থেকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। সৌমিত্রকে চটজলদি বহিষ্কারও করেন টিএমসিপি নেতৃত্ব। বুধবার আসানসোল আদালতে তাঁকে তোলে পুলিশ। শুনানির আগে ভারপ্রাপ্ত এসিজেএম অর্ধেন্দু সেনের এজলাসে অভিযুক্তদের কুঠরিতে দাঁড়িয়েও সৌমিত্রর তেজ এতটকু কমেনি। পুলিশ কখন ধরল, প্রশ্ন করতেই ফুঁসে উঠে বললেন, ‘‘রাতের অন্ধকারে চোরের মতো ধরেছে। ওসি-কে মজা দেখাব!’’ দল থেকে বহিষ্কারের প্রসঙ্গ তুলতে তাঁর মন্তব্য, ‘‘ছাড়ুন তো দলের কথা!’’
মঙ্গলবার দুপুরে অনলাইনে ভর্তির সময়সীমা বাড়ানোর দাবিতে দলবল নিয়ে রানিগঞ্জ টিডিবি কলেজের অধ্যক্ষ স্বদেশ মজুমদারকে ঘেরাও করেন টিএমসিপি-র রানিগঞ্জ ব্লক সভাপতি সৌমিত্র। ঘণ্টাখানেক ঘেরাওয়ের পরে কলেজ চত্বরে পুলিশের গাড়ি ঢুকতেই গোলমালের সূত্রপাত। কলেজ কর্তৃপক্ষ না ডাকা সত্ত্বেও কেন পুলিশ এসেছে, সেই প্রশ্ন তুলে ওসিকে ফোন করে সৌমিত্র হুমকি দেন, ‘‘পুলিশের গাড়ি আটকে রেখেছি। পাঁচ মিনিটের মধ্যে আপনাকে আসতে হবে। না হলে থানা বোমা মেরে উড়িয়ে দেব। গাড়ি জ্বালিয়ে দেব।’’
শাসকদল সৌমিত্রর পাশে নেই বুঝে রানিগঞ্জ থানাও স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে সৌমিত্রের বিরুদ্ধে পুলিশকে সরকারি কাজে বাধা, হুমকি দেওয়া-সহ ছ’টি ধারায় মামলা রুজু করে। তার মধ্যে একটি জামিন-অযোগ্য। রাতেই গ্রেফতার করা হয় সৌমিত্রকে। কলেজ কর্তৃপক্ষ অবশ্য এখনও কোনও অভিযোগ করেননি। অধ্যক্ষ বলেন, ‘‘বিষয়টি কলেজের পরিচালন সমিতির এক্তিয়ারভুক্ত। সমিতির বৈঠকে বসার কথা আছে। সদস্যেরা ঠিক করবেন কী হবে।’’ এ দিনই টিডিবি কলেজের টিএমসিপি পরিচালিত ছাত্র সংসদের ১৬ জন সদস্য অধ্যক্ষের কাছে ইস্তফাপত্র জমা দেন। সংগঠনের নেতাকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে কলেজের গেটে কিছু ক্ষণ অবস্থান-বিক্ষোভও করেন। অধ্যক্ষ জানান, ইস্তফাপত্র পরিচালন সমিতির কাছে পাঠানো হবে। যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার তারাই নেবে।
প্রতিবাদ বলতে ওইটুকুই। দল ও দলের ছাত্র সংগঠনের শীর্ষ নেতৃত্বের মেজাজ বুঝে সমঝে গিয়েছেন সৌমিত্রর অনুগামীরাও। তাই এ দিন আদালতে ধৃত ছাত্রনেতাকে তোলার সময়ে তাঁদের কাউকেই দেখা যায়নি। শুনানির শেষে সৌমিত্রর জামিন খারিজ করে তাঁকে তিন দিন জেল হাজতে রাখার নির্দেশ দেন ভারপ্রাপ্ত এসিজেএম। এর পরেই খানিকটা ভেঙে পড়েন ওই ছাত্রনেতা। আদালত থেকে বেরোনোর সময়ে তিনি বলেন, ‘‘আমাকে মিথ্যে অভিযোগে ফাঁসানো হয়েছে।’’
শুক্রবার তাঁর হুমকি দেওয়ার সিডি পুলিশকে আদালতে পেশ করার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy