Advertisement
০১ মে ২০২৪
TMC On Tapas Roy

‘বাধ্যবাধকতার’ কারণে দল ছেড়েছেন তাপস, ইডি হানার পর দলীয় নেতৃত্ব যোগাযোগ করেছিলেন! পাল্টা তৃণমূল

তাপস যখন সোমবার বিধানসভার গেটে সাংবাদিক বৈঠক করছেন, তখন তমলুকে ভাষণ দিচ্ছিলেন মমতা। তিনি তাপসের নাম না করে বলেন সিবিআই, ইডির ভয় দেখিয়ে তৃণমূলকে ভাঙতে চাইছে বিজেপি।

TMC’s Reaction on Tapas Roy’s resign from Assembly

(বাঁ দিকে) তাপস রায়। সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ মার্চ ২০২৪ ১৫:১২
Share: Save:

সোমবার বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার আগে-পরে তাপস রায় যে মন্তব্য করেছেন, তা উড়িয়ে দিল তৃণমূল। উল্টে পাল্টা শাসকদলের তরফে বলা হয়েছে, ‘বাধ্যবাধকতা’র কারণেই তাপস দলের পদ এবং বিধায়ক পদ ছেড়েছেন। সেই ‘বাধ্যবাধকতা’ হল ইডি। দলের একটি অংশ থেকে এটাই বলা হচ্ছে যে, তাপসের বাড়িতে হানা দিয়ে ইডি নির্ঘাত কিছু তথ্যপ্রমাণ পেয়েছিল। সেই কারণেই তাঁকে বিজেপিতে (তৃণমূলের মতে, ‘ওয়াশিং মেশিনে’) যেতে হচ্ছে। যে বক্তব্যের সঙ্গে তৃণমূলের অন্দরে তাপসের ‘ঘোষিত শত্রু’ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুগামীরাও ভিন্নমত নন।

ঘটনাচক্রে, তাপস যখন সোমবার বিধায়কের পদে ইস্তফা দেওয়ার পরে বিধানসভার গেটে সাংবাদিক বৈঠক করছেন, ঠিক সেই সময়েই পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুকে সরকারি সভায় ভাষণ দিচ্ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি তাপসের নাম করে কিছু বলেননি। তবে বলেছেন, ‘‘বিজেপি সিবিআই-ইডির ভয় দেখিয়ে তৃণমূলকে ভাঙতে চাইছে!’’

সোমবার তৃণমূল তাপসের উদ্দেশে বলেছে, হয় তিনি অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী, নয়তো বাংলার মানুষকে বোকা ভাবছেন। দলের এক নেতার কথায়, ‘‘আগামী দিনে দিদির ছবি নিয়ে বিজেপির জমিদারির বিরুদ্ধে লড়াই হবে। যে দিদি কোভিড, আমপানের মতো কঠিন সময়ে মানুষের পাশে থেকেছেন।’’

শাসকদলের তরফে আরও বলা হয়েছে, তাপস যে দাবি করেছেন, ইডি হানার পর তাঁর পাশে দলীয় নেতৃত্ব দাঁড়াননি, তাঁর সঙ্গে কোনও কথাও বলেননি, সে দাবি অসত্য। তৃণমূলের বক্তব্য, ইডি তাপসের ফোন বাজেয়াপ্ত করে নিয়ে গিয়েছিল। দু’দিন পর তাঁর নম্বর সক্রিয় হয়। সেই সময়েই দলীয় নেতৃত্ব তাঁর সঙ্গে একাধিক বার কথা বলেছিলেন। শাসকদলের আরও বক্তব্য, তাপস দলের মুখপাত্র ছিলেন। কিন্তু সোমবার তিনি যা যা দাবি করেছেন, তা ‘হাস্যকর’।

সোমবার যে তাপস তৃণমূলের বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দিতে পারেন, তা প্রথম লিখেছিল আনন্দবাজার অনলাইন। সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ তাপসের বাড়িতে তাঁকে বোঝাতে যান মন্ত্রী ব্রাত্য বসু এবং তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ। কিন্তু তাঁদের ‘দৌত্য’ ব্যর্থ হয়। তাপস তাঁদের জানিয়ে দেন, অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। ব্রাত্য-কুণাল বেরিয়ে যাওয়ার পর স্নান সেরে তাপস রওনা দেন বিধানসভার উদ্দেশে। তার পরে স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের সামনে বসে সই করে বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দেন। পাশাপাশি জানান, গত ১ মার্চ তিনি সমস্ত সরকারি ও দলীয় পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। দলনেত্রীকে তা জানিয়েও দিয়েছেন।

বিধানসভায় ইস্তফাপর্ব মেটানোর পর তাপস অভিযোগ করেন, তাঁর বাড়িতে ইডির হানার পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বা দলের কেউ তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। কথা বলেননি। তিনি বিধানসভা অধিবেশনে যোগ দিয়েছিলেন। তা-ও তাঁর সঙ্গে কথা বলা হয়নি। পাশাপাশি, নানাবিধ দুর্নীতির অভিযোগ, সন্দেশখালির ঘটনা নিয়েও তিনি ‘যারপরনাই অস্বস্তি’তে ছিলেন বলে দাবি করেছেন তাপস।

তাপস এ-ও বলেছিলেন যে, ফিরহাদ হাকিমের বাড়িতে সিবিআই হানার পর মুখ্যমন্ত্রী যে ভাবে তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন এবং বিধানসভায় দাঁড়িয়ে সন্দেশখালির শেখ শাহজাহানের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছিলেন, তাঁর ক্ষেত্রে তেমনটা দেখা যায়নি। তাপসের এক হিতৈষীর কথায়, ‘‘তাপসদার বাড়িতে ইডি তল্লাশি হল ১২ ঘণ্টা ধরে। দল সে বিষয়ে এক বারও মুখ খুলল না! অথচ, শাহজাহানের বাড়িতে ইডির অভিযান বা ফিরহাদ হাকিমের বাড়িতে তল্লাশির নামে সিবিআই কী ভাবে সব তছনছ করেছে, রান্নাঘরে গিয়ে মশলার কৌটো পর্যন্ত উল্টে দিয়েছে তদন্তকারীরা, সে বিষয়ে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী প্রকাশ্যে বিবৃতি দিলেন! একই যাত্রায় পৃথক ফল কেন হবে?’’

কালক্ষেপ না-করে তাপসের সেই দাবি খণ্ডন করা হয়েছে তৃণমূলের তরফে। পাশাপাশি এমনও দাবি করা হয়েছে যে, ‘বাধ্যবাধকতা’র কারণেই তিনি দল ছেড়েছেন। যদিও তাপস বলেননি, তিনি কোন দলে যাবেন। সময়ে তা সবাই দেখতে পাবেন বলে বিধানসভা ছেড়ে বেরিয়ে যান তাপস। তবে সব ঠিকঠাক চললে তাপস বিজেপিতে যোগ দিতে চলেছেন। কলকাতা উত্তর অথবা কলকাতা লাগোয়া (অনেকে বলছেন দমদম) কোনও লোকসভা আসনে তাঁকে পদ্ম প্রতীকে ভোটে লড়তে দেখা যেতে পারে বলে তাঁর ঘনিষ্ঠদের বক্তব্য।

গত ১২ জানুয়ারি তাপসের বিবি গাঙ্গুলি স্ট্রিটের বাড়িতে ইডি হানা দিয়েছিল। বেশ কয়েক ঘণ্টা তল্লাশির পর তাপসের বাড়ি থেকে কিছু নথিপত্র এবং তাঁর মোবাইল ফোনটি বাজেয়াপ্ত করে নিয়ে গিয়েছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। দু’দিন পরে তাঁর ফোন ফেরত দেওয়া হয়। তাঁকে উত্তর কলকাতার জেলা সভাপতি পদ থেকে সরানো, মন্ত্রী না করা, দলে ‘গুরুত্ব’ না-পাওয়া ইত্যাদি নিয়ে তাপসের ‘ক্ষোভ’ ছিল। তবে ইডির হানা তাঁকে ‘বেপরোয়া’ করে তুলেছিল। দু’দিন আগেই উত্তর কলকাতার তৃণমূল সাংসদ সুদীপের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে তোপ দেগেছিলেন তাপস। বরাহনগরের বিধায়ক সরাসরি অভিযোগ করেছিলেন, সুদীপই তাঁর বাড়িতে ইডিকে ‘ঢুকিয়েছিলেন’। তবে তাপস দল ছাড়ার আগে-পরে নেতৃত্বের বিরুদ্ধে যে বিবৃতি দিয়েছেন, তার পাল্টা আখ্যান রচনা শুরু করে দিয়েছে তৃণমূল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC TMC Leaders Tapas Roy Sudip Bandyopadhyay
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE