Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

রয়েছে চাহিদা, টান পড়েছে নলেন গুড়ে

বঙ্গসমাজে শীত মরসুমে কেকের সঙ্গে জয়নগরের মোয়ার কদর। ফলে এ সময়টায় দক্ষিণ ২৪ পরগনার মোয়া কারবারিদের ফোন বেজেই চলে ক্রমাগত। মোয়া চেয়ে ইতিমধ্যেই ফোন আসতে শুরু করেছে দেশ-বিদেশের নানা প্রান্ত থেকে।

এমন জাম্বো মোয়ার সম্প্রতি কদর বেড়েছে। নিজস্ব চিত্র

এমন জাম্বো মোয়ার সম্প্রতি কদর বেড়েছে। নিজস্ব চিত্র

শুভাশিস ঘটক
শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৩:১০
Share: Save:

বঙ্গসমাজে শীত মরসুমে কেকের সঙ্গে জয়নগরের মোয়ার কদর। ফলে এ সময়টায় দক্ষিণ ২৪ পরগনার মোয়া কারবারিদের ফোন বেজেই চলে ক্রমাগত। মোয়া চেয়ে ইতিমধ্যেই ফোন আসতে শুরু করেছে দেশ-বিদেশের নানা প্রান্ত থেকে। অথচ এমন হইচইয়ের দিনেও মুখে হাসি নেই জয়নগরের মোয়া কারবারিদের!

কারণ, টান পড়েছে মোয়া তৈরির মূল উপাদান নলেন গুড়েই। নভেম্বর থেকে জানুয়ারি, এই তিন মাসই মোয়া বিক্রির মূল মরসুম। এ দিকে, এখনও পর্যন্ত ভাল মানের নলেন গুড় আসছেই না তাঁদের হাতে।

এমন জাম্বো মোয়ার সম্প্রতি কদর বেড়েছে। নিজস্ব চিত্র

এক মোয়া কারবারির আক্ষেপ, বিদেশ থেকে ক্রমাগত ‘জাম্বো মোয়া’ পাঠিয়ে দেওয়ার অনুরোধ আসছে। অনলাইন ব্যবসায়ীরাও মোয়া কারিগরদের কারখানা- দোকানে হত্যে দিয়ে পড়ে রয়েছেন। কিন্তু চাহিদা অনুযায়ী ‘কোয়ালিটি’ মোয়ার জোগান দিতে প্রায় হিমশিম হাল তাঁদের।

কিন্তু নলেন গুড়ে টান কেন?

খেজুর গাছের রস থেকেই তৈরি হয় নলেন গু়ড়। মোয়া মরসুমের প্রায় মাস তিনেক আগে থেকেই খেজুর গাছ কাটা শুরু হয়। শীত পড়তেই গাছ থেকে গড়াতে থাকে রস। ওই রস সংগ্রহ করে আগুনের তাপে পাক দিয়েই তৈরি হয় নলেন গুড়। মোয়া কারবারিদের কথায়, খেজুর গাছের কোনও চাষ হয় না এখানে। জমির আশেপাশে, পুকুরের ধারে যেমন-তেমন ভাবে গজিয়ে ওঠে কিছু খেজুর গাছ। তা থেকেই যতটুকু গুড় হওয়ার, তা হচ্ছে। ফলে সব সময়ে এক রকম হয় না তার মান।

সঙ্কটের এতেই শেষ নয়। যেটুকুও বা নলেন গুড় পাওয়া যেত, তা-ও ‘শিউলি’র অভাবে আটকে থাকে বলে জানাচ্ছেন এক দল মোয়া কারবারি। খেজুর গাছ কাটা থেকে শুরু করে রস সংগ্রহ করেন যাঁরা, তাঁরাই পরিচিত ‘শিউলি’ নামে। কারবারিরা জানাচ্ছেন, অধিকাংশ শিউলির বয়স হয়ে গিয়েছে। এখন আর ওঁরা গাছে উঠতে পারেন না। বৃদ্ধ শিউলিদের ছেলে-মেয়েরা এখন আর এই পেশায় আসছেন না। সুতরাং নলেন গুড়ের সমস্যা ক্রমশ জটিল আকার ধারণ করছে। বহড়ু বাজারের মোয়া কারবারি বাবলু ঘোষ বলেন, ‘‘এক দিকে সারা রাজ্য নকল ‘জয়নগরের মোয়া’য় ছেয়ে গিয়েছে। নলেন গুড়ের আসল জয়নগরের মোয়া চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ করাই দুষ্কর হয়ে উঠেছে।’’

এ দিকে, বিদেশে এখানকার ‘জাম্বো মোয়া’র চাহিদা এখন আকাশচুম্বী বলে দাবি করছেন মোয়া কারবারিরা। জাম্বো মোয়া এক-একটির ওজন প্রায় ২৫০ থেকে ৩০০ গ্রাম। বছর দুই ধরে ওই মোয়া বিদেশে রফতানি করা হচ্ছে বলে দাবি করছেন কারবারিরা। এখন ৩৫০- ৪০০ গ্রাম ওজনের জাম্বো মোয়াও বিদেশে হিট।

কিন্তু জাম্বো মোয়া তৈরিতে আরও বেশি নলেন গুড় প্রয়োজন। তা আসবে কোথা থেকে?

কারবারিদের কথায়, জয়নগর বা বহডু মোয়ার মূল উপকরণই নলেন গুড়। কনকচূড় ধানের খইয়ের সঙ্গে নলেন গুড় মেশানোই হল মোয়া তৈরির প্রাথমিক ধাপ। সেই গুড়ই যদি পর্যাপ্ত না আসে হাতে, তবে ভাল মোয়া হবে কোথা থেকে!

এক মোয়া কারিগরের অভিযোগ, ভাল জাতের জয়নগর ও বহুড়ুর মোয়া অধিকাংশ লোকেই পান না। বাজারে এই নাম করে বহু ভেজাল মোয়া বিকোয়। সেখানে না থাকে কনকচূড় ধানের খই, না থাকে নলেন গুড়।

ওই এলাকার মোয়া কারবারি রঞ্জিত ঘোষের কথায়, ‘‘গত কয়েক বছর ধরে প্রায় কয়েক লক্ষ টাকার জাম্বো মোয়া দেশ-বিদেশে রফতানি করেছি আমরা। কিন্তু এ বছর নলেন গুড়ে এতই টান যে চাহিদা মতো মোয়া তৈরিই করে উঠতে পারছি না আমরা।’’ ফলে ডিসেম্বরের মাঝামাঝিও ব্যবসায় ভাটাই চলছে শহরের কাছের এই মোয়া মহল্লায়!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Moa Molasses Joynagarer moa
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE