গঙ্গোত্রী, উত্তরাখন্ড। ছবি: সংগৃহীত।
বছর দু’য়েক ধরে পরিকল্পনা করে পুজোর ছুটি কাটাতে একাদশীর দিন সকালে বেরিয়ে পড়েছিলাম চার ধাম দর্শনের ইচ্ছায়। বহরমপুরের তিন জন আর শক্তিপুরের ন'জন মোট বারো জন বন্ধু মিলে বেরিয়ে পড়ি। কিন্তু বিধি বাম। দ্বাদশীর বিকেল পাঁচটায় হরিদ্বারে পৌঁছনোর পরেই মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়। আমরা ভয় পেয়ে যাই। ঠিক করে ফেলি আর এগোবো না। তখনও আমরা রাতে থাকার হোটেল পাইনি। একটু খোঁজ খবর নিয়ে গঙ্গার ধারে একটি হোটেলে পেলাম মাথা গোঁজার ঠাঁই।
তত ক্ষণে কানে চলে এসেছে চার ধাম বন্ধের খবর। যদিও খানিক ক্ষণ পরে আবার খবর পেলাম, কেদারনাথ বন্ধ থাকলেও গঙ্গোত্রী, যমুনোত্রী যাওয়া যেতে পারে। সেই মতো ওই রাতেই বৃষ্টি মাথায় যমুনোত্রীর উদ্দেশে বেরিয়ে পড়লাম। হরিদ্বার থেকে ১৯০ কিলোমিটার দূরে যমুনোত্রী। কিন্তু ১২০ কিলোমিটার রাস্তা পেরনোর পর আমাদের কয়েক জন অসুস্থ হয়ে পড়েন। সেখানে ফের রাত্রিবাস করি সবাই মিলে। সেই রাত যেন কাটতেই চাইছিল না। পরের দিন ভোরে বেরিয়ে যমুনোত্রী যখন পৌঁছলাম, তখন শুনলাম ধস নেমে বহু পর্যটক আটকে গিয়েছেন অন্য দিকে। তবু যমুনোত্রীতে দর্শনীয় স্থান দেখে পৌঁছে গিয়েছি গঙ্গোত্রী। সেখানেই আটকে রয়েছি।
গঙ্গোত্রী আসার পথে দেখলাম, বহু জায়গায় ধস নেমেছে। বড় বড় কাদা মাখা নুড়ি পাথর পড়ে রাস্তা আটকে গিয়েছে। এমনিতেই পাহাড়ি পথ সরু। তারপর প্রচণ্ড ঠান্ডা। রাস্তায় মাঝে মাঝে থমকে গিয়েছি। দূর থেকে দেখেছি স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে রাস্তা মেরামতির কাজ হচ্ছে। কিন্তু রাস্তায় নামা নিষেধ ছিল। যখন গঙ্গোত্রীতে নামলাম, তখন সবাই ছুটছেন নিজেদের হোটেলের দিকে। তবে স্থানীয় বাসিন্দারা যথেষ্ট সহযোগিতা করছেন। ওখানকার স্থানীয় হোটেলগুলো পরিস্থিতি বিচার করে পর্যটকদের সাহায্য করছেন। যেখানে দু’জন থাকার কথাসেখানে চার জনকে থাকতে দিচ্ছেন। তার জন্য কোনও বাড়তি পয়সা নিচ্ছেন না।
এখন আবহাওয়ার কিছুটা উন্নতি হয়েছে। লক্ষ্মীপুজোয় যখন আমাদের এলাকার মানুষজন আনন্দ করছে তখন ভয় বুকে হোটেলে বসে আছি আমরা বারো জন। রাতে কী খাবো না খাবো তা এখনও পর্যন্ত ঠিক করতে পারিনি। স্থানীয় প্রশাসনের দেখা এখনও পাইনি। পাশেই একটা চিকিৎসা শিবির খোলা আছে, সেখান থেকে ওষুধ নিয়ে এসেছি। এর মধ্যে বহরমপুরের শক্তিপুর থানা থেকে ফোন এসেছে। খোঁজ খবর নিয়েছেন থানার আধিকারিকেরা। প্রত্যেকের বাড়ি থেকে ফোন আসছে বারবার।
আপাতত নিরাপদে থাকলেও নিজেরাও জানি না, আগামী দিন কী সমস্যার মুখোমুখি হবো। তবে আর এগোবে না, এ বার ফিরে যাবো। কিন্তু কখন পৌঁছব তা অবশ্য অনিশ্চিত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy