Advertisement
E-Paper

ধসে বন্ধ পাহাড়ের রাস্তা, নাজেহাল পর্যটকেরা

বর্ষার পাহাড়ে বেড়াতে গিয়ে ধসের কবলে পড়েছেন দেশ-বিদেশের পর্যটকদের অনেকেই। বুধবার হোটেল কিংবা অতিথি নিবাস থেকে বেরিয়ে কিছুটা গিয়েই থমকে যেতে হচ্ছে। কোথাও গাড়ি থাকলেও চালক মিলছে না। চালক মিললেও রাস্তায় বড় বড় গাছ-পাথর পড়ে থাকায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা জনহীন এলাকায় বৃষ্টির মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে।

কিশোর সাহা

শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০১৫ ০৩:৪৬
বুধবার রাতেই ট্রেনে নিউ জলপাইগুড়ি পৌঁছলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।

বুধবার রাতেই ট্রেনে নিউ জলপাইগুড়ি পৌঁছলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।

বর্ষার পাহাড়ে বেড়াতে গিয়ে ধসের কবলে পড়েছেন দেশ-বিদেশের পর্যটকদের অনেকেই। বুধবার হোটেল কিংবা অতিথি নিবাস থেকে বেরিয়ে কিছুটা গিয়েই থমকে যেতে হচ্ছে। কোথাও গাড়ি থাকলেও চালক মিলছে না। চালক মিললেও রাস্তায় বড় বড় গাছ-পাথর পড়ে থাকায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা জনহীন এলাকায় বৃষ্টির মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে। এই অবস্থায় দেশ-বিদেশের কয়েক হাজার পর্যটক দার্জিলিং ও সিকিম পাহাড়ে আটকে গিয়েছেন। যে সামান্য কয়েক জন ঘুর পথে হলেও নামতে পেরেছেন, তাঁদের অনেকেও বুধবার ঠিক সময়ে বিমানবন্দর, স্টেশন বা বাস টার্মিনাসে পৌঁছতে পারেননি।

আটকে পড়া পর্যটকদের মধ্যে রয়েছেন অনেক প্রবীণ, শিশু ও মহিলাও। বিশেষ বাসের ব্যবস্থা করে তাঁদের দ্রুত সমতলে নামিয়ে আনার জন্য নানা মহলে আর্জি জানিয়েছেন বেসরকারি ট্যুর অপারেটররা। তবে খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বর্তমান ধস-পরিস্থিতিতে কোনও তাড়াহুড়ো করতে জেলা প্রশাসনকে নিষেধ করেছেন। মুখ্যমন্ত্রীর যুক্তি, ‘‘টানা বৃষ্টিতে পাহাড়ের ৩ মহকুমার রাস্তাঘাটে অনেক জায়গায় ধস নেমেছে। কিছুটা জায়গা অতি মাত্রায় ধসপ্রবণ। নানা বিপদের আশঙ্কা রয়েছে। সে জন্য তাড়াহুড়ো করতে নিষেধ করেছি।’’ তাঁর দাবি, ‘‘পর্যটকদের যাতে কোনও অসুবিধে না হয়, সেটা নিশ্চিত করবে রাজ্য সরকার।’’ সরকারি সূত্রেই জানা গিয়েছে, আজ, বৃহস্পতিবার থেকে বিশেষ হেল্প ডেস্ক খুলছে রাজ্য পর্যটন দফতর। জিটিএ প্রধান বিমল গুরুঙ্গও জানিয়েছেন, পর্যটকদের নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছে দিতে তাঁরা সবরকম ব্যবস্থা করছেন। কিন্তু মিরিক, কালিম্পং ও কার্শিয়াঙের যে বিস্তীর্ণ এলাকায় ধস নেমেছে, সেখানকার অবস্থা স্বাভাবিক হতে অন্তত আরও দু’দিন লাগবে। তার আগে পর্যন্ত পর্যটকদের ভোগান্তি যে চলবেই তা নিয়ে সংশয় নেই।

কেমন ভোগান্তি?

এ দিনের কথাই ধরা যাক। দিল্লি থেকে দার্জিলিং হয়ে সপরিবারে গ্যাংটক গিয়েছিলেন রৌনক কৌশল। বুধবার দুপুরে ২টো ২০-র উড়ানে কলকাতা পৌঁছনোর কথা ছিল তাঁদের। কিন্তু রাতভর বৃষ্টির ফলে ধসে সব কিছুই ওলটপালট হয়ে গিয়েছে। তাই সকাল ৭টায় গ্যাংটক থেকে রওনা হয়ে সিকিম-বাংলার চেকপোস্ট রংপোতেই থেমে যায় গাড়ি। রংপো থেকে কিছুটা এগিয়ে কালিম্পঙের রাস্তায় ধস নেমেছে। যে আকারের পাথর রাস্তা আটকে পড়ে রয়েছে, তা সরানো শেষ হতে কয়েক ঘণ্টা লাগবে। তাই মংসুং রোড দিয়ে কালিম্পঙে যান তাঁরা। সেখান থেকে তিস্তা বাজার হয়ে জোড়বাংলো অর্থাৎ ঘুমের রাস্তায় যান। কিন্তু হিলকার্ট রোডে গেলে বারবার আটকে পড়তে হচ্ছে। রাস্তার নানা জায়গায় ধস। তাই সোনাদা থেকে দিলারাম, বাগোড়া হয়ে চিমনি পৌঁছন তাঁরা। সেখান থেকে কার্শিয়াং হয়ে রোহিণী রোড দিয়ে সুকনা হয়ে শিলিগুড়ি পৌঁছন বেলা ২টো নাগাদ। তত ক্ষণে নির্ধারিত উড়ানের সিকিউরিটি চেকিং বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ফলে, রাতটা শিলিগুড়িতে থাকতে বাধ্য হয়েছেন তাঁরা। দিল্লির পাল পরিবারও গ্যাংটক থেকে রওনা হয়েছিলেন সকালে। কিন্তু, বাগডোগরায় সময়ে পৌঁছতে না-পারায় বিমান ধরতে পারেননি।

ওড়িশার গঞ্জামের বিজু পারিদা সহ ১৮ জনের দল একটি বড় গাড়ি ভাড়া করে মিরিকে গিয়েছিলেন। বুধবার কালিম্পং হয়ে লাভা যাবেন ভেবেছিলেন। কিন্তু, পরিস্থিতি দেখে শিলিগুড়ি রওনা হন। তখন প্রথম আটকান মিরিকের কাছেই। ঘুরপথে বাগডোগরা হয়ে বিকেলে শিলিগুড়ি ফেরেন। পেশায় ইঞ্জিনিয়র বিজুবাবু উত্তরাখণ্ডে চাকরি করেন। তিনি বললেন, ‘‘কোথাও দেখলাম কালভার্ট ভেঙে গিয়েছে। কোথাও রাস্তায় গাছ, পাথর পড়ে। ধসপ্রবণ এলাকায় বর্ষার সময়ে ‘কুইক রেসপন্স টিম’ বেশি সংখ্যায় থাকাটা বাধ্যতামূলক।’’ তাঁর কথায়, ‘‘উত্তরাখণ্ড ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার পরে এটা শিখেছে। আশা করি পশ্চিমবঙ্গও শিখবে।’’

যাঁরা বাগডোগরা, এনজেপিতে নেমে এদিন পাহাড়ে যাবেন বলে রওনা হয়েছিলেন, তাঁদেরও প্রতি পদে হয়রানি হয়েছে। এনবিএসটিসি-র বাস সুকনায় গিয়ে থেমে গিয়েছে। আর যায়নি। পাহাড় থেকেও নামেনি। বেসরকারি বাস, গাড়ি রোহিণী গিয়ে ধসে আটকে গিয়েছে। ধস সরানো হলে রোহিণী হয়ে কার্শিয়াং, চিমনি, সোনাদা, জোড়বাংলো তিস্তা বাজার হয়ে গ্যাংটকে গিয়েছে কিছু গাড়ি। গ্যাংটকে হেলিকপ্টার চলাচল করলেও তাতে আসন সংখ্যা সীমিত হওয়ায় অনেকেই শিলিগুড়িতে আটকে গিয়েছেন। বর্ষায় রাজ্যের পর্যটকদের সংখ্যা তুলনায় কম। ভিনরাজ্য ও বিদেশের পর্যটকই এখন বেশি বলে ট্যুর অপারেটর ও হোটেল মালিক সংগঠনের দাবি।

ইস্টার্ন হিমালয়া ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের কার্যকরী সভাপতি সম্রাট সান্যাল জানান, বর্ষায় পাহাড়ে ধস নামতেই পারে। কিন্তু এবার ধস-পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর। কোন রাস্তায় কোথায় গাছ-পাথর পড়ে রয়েছে, তা পর্যন্ত ঠিকঠাক কেউ বলতে পারছেন না। যে কটি রাস্তা খোলা, তারও কোনটি কখন ধসের কবলে পড়বে, তা-ও কেউ জানে না। সে জন্য অনেকে পাহাড়ে আটকে পড়েছেন। অনেকে ট্রেন-বাস-বিমান ধরতে পারেননি। তিনি বলেন, ‘‘আমরা পুলিশ-প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। ধসে নিখোঁজদের উদ্ধার করাটাই এখন সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। আশা করি, দু-চার দিনের মধ্যে পরিস্থিতির উন্নতি হবে।’’

কিন্তু পাহাড়ে বৃষ্টি তো চলছেই। ফলে, উদ্ধারের কাজেও বিঘ্ন ঘটছে। ফি ঘণ্টায় নানা এলাকায় ধসের খবর পৌঁছচ্ছে পুলিশ-প্রশাসনের কাছে। তাই পাহাড় যে কবে ছন্দে ফিরবে, তা এখনও কারও কাছে স্পষ্ট নয়।

kishore saha Darjeeling Tourists landslide rain
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy