Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus

স্কটিশ সুন্দরীর ‘টোপ’, করোনা প্রতিষেধকের কাঁচামাল পাঠাতে গিয়ে সর্বস্বান্ত বাঙালি ব্যবসায়ী

পেশায় ব্যবসায়ী আশিষ সামন্ত সিআইডিতে করা অভিযোগে জানিয়েছেন, এ বছরের এপ্রিলে ফেসবুকে তার সঙ্গে আলাপ হয় স্কটিশ মহিলা মারিয়া স্পেন্সারের।

পাঁশকুড়ার ব্যবসায়ীর সঙ্গে ফেসবুকে আলাপ হয় এই স্কটিশ মহিলার। —নিজস্ব চিত্র।

পাঁশকুড়ার ব্যবসায়ীর সঙ্গে ফেসবুকে আলাপ হয় এই স্কটিশ মহিলার। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০২০ ২২:০৩
Share: Save:

মার্কিন একটি সংস্থা করোনা ভাইরাসের প্রতিষেধক তৈরি করছে। আর সেই প্রতিষেধক তৈরিতে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল যাচ্ছে ভারত থেকে। সোশ্যাল মিডিয়ায় আলাপ হওয়া এক স্কটিশ সুন্দরীর প্রস্তাবে, সেই কাঁচামাল সরবরাহ করতে গিয়ে ৫৫ লক্ষ টাকা খোয়ালেন পাঁশকুড়ার এক ব্যবসায়ী।

পেশায় ব্যবসায়ী আশিষ সামন্ত সিআইডিতে করা অভিযোগে জানিয়েছেন, এ বছরের এপ্রিলে ফেসবুকে তার সঙ্গে আলাপ হয় স্কটিশ মহিলা মারিয়া স্পেন্সারের। সেই আলাপের সূত্র ধরে বিভিন্ন সময় তাঁরা সোশ্যাল মিডিয়ায় চ্যাট করেছেন। সেখান থেকেই আশিস জানতে পারেন, মারিয়া একটি মার্কিন বহুজাতিক ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মী। আশিষ জানিয়েছেন, গত জুন মাসে মারিয়া তাকে জানান, তাঁর কোম্পানি করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক তৈরি করছে। সেই প্রতিষেধক তৈরি করতে একটি বিশেষ ধরনের তেল প্রয়োজন যা, তার কোম্পানি ভারত থেকে আমদানি করে। সেই তেল প্রতি লিটারের দাম আড়াই হাজার ডলার। সিআইডিতে করা অভিযোগে আশিষ জানিয়েছেন, এর কিছু দিন পরেই মারিয়া তাঁকে প্রস্তাব দেন, ওই তেল তাঁর কোম্পানিকে সরবরাহ করার।

আশিসের দাবি, মারিয়া তাঁকে জানিয়েছিলেন, এর আগে মহারাষ্ট্রের একটি কোম্পানির কাছ থেকে প্রতি লিটার তেল আড়াই হাজার ডলারে কিনে তিনি ওই তেল কোম্পানির কাছে পৌঁছে দিতেন প্রতি লিটার ৪ হাজার ৯০০ ডলার হিসেবে। কিন্তু বর্তমানে সেই সরবরাহকারী সরাসরি কোম্পানিকে সরবরাহ করতে চাওয়ায় মারিয়া নিজের লভ্যাংশ পাচ্ছেন না। তাই আশিষ যদি ওই সরবরাহকারীর কাছ থেকে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল কিনে তার কোম্পানিকে সরবরাহ করেন তা হলে লভ্যাংশের টাকা ভাগাভাগি করে নিতে পারেন মারিয়া এবং আশিষ।

আরও পড়ুন: বাদুড়িয়ায় বসেই কাশ্মীরি যুবকদের ওয়াজিরিস্তানের জঙ্গি ট্রেনিং ক্যাম্পে পাঠাত তানিয়া

আরও পড়ুন: করোনা আক্রান্ত ৯ দিনের শিশু, মূত্রথলির জটিল অপারেশনের নজির মেডিক্যালে

পাঁশকুড়ার ব্যবসায়ী আশিষ সামন্ত। —নিজস্ব চিত্র।

অভিযোগকারী ব্যবসায়ীর দাবি, প্রথমে তিনি রাজি না হলেও পরে মোটা অঙ্কের লাভের কথা ভেবে তিনি রাজি হয়ে যান মারিয়ার প্রস্তাবে। এরপর মারিয়া তাকে মহারাষ্ট্রের আহমেদনগরের ওই তেলের সরবরাহকারীর যোগাযোগ দেন। মারিয়ার পরিকল্পনা মতো, তিনি মারিয়ার কোম্পানিকে ওই তেল সরবরাহ করার দরপত্র পাঠান। সেই দরপত্র অনুমোদিত হয়। অন্য দিকে আহমেদনগরের কোম্পানিও তাঁকে সেই তেল সরবরাহ করতে সম্মত হয়। এর পর চার দফায় চারটি আলাদা আলাদা অ্যাকাউন্টে মহারাষ্ট্রের মালাদ, আহমেদনগর, রাজস্থানের জয়পুরের চার ব্যক্তির কাছে সব মিলিয়ে প্রায় ৫৫ লক্ষ টাকা তিনি পাঠান। তবে সেই কাঁচামাল তার কাছে আসেনি। সরবরাহকারী জানিয়ে দেন যে, তাঁরা সরাসরি মার্কিন ওই সংস্থাকে ওই কাঁচামাল পাঠিয়ে দেবেন। কারণ, আশিসের রফতানি করার লাইসেন্স নেই। সেই প্রস্তাবে রাজি হয়ে যান আশিষ।

তার দাবি, টাকা-পয়সার লেনদেন হওয়ার পর হঠাৎ করেই সমস্ত সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় মারিয়ার সঙ্গে। শুধু মারিয়া নয়, তিনি যাঁদের যাঁদের নম্বর দিয়েছিলেন সরবরাহকারী হিসেবে তাঁদের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হন আশিষ। মারিয়া যে মোবাইল নম্বর থেকে তার সঙ্গে যোগাযোগ করতেন, সেখানে ফোন করতে গিয়েও সেই সেই নম্বরের কোন অস্তিত্ব নেই বলে জানতে পারেন তিনি। এর পর মারিয়ার দেওয়া তার সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করতে গেলেও সেই একই অবস্থা হয় তাঁর। এর পরেই আশিস বুঝতে পারেন, তিনি প্রতারিত হয়েছেন। আশিসের দাবি, তিনি তার প্রায় সর্বস্ব ঢেলে দিয়েছিলেন মোটা অঙ্কের মুনাফা করার লোভে।

আশিস প্রথমে তমলুকে সাইবার অপরাধ থানাতে অভিযোগ জানাতে যান। পরে তিনি জেলার পুলিশ সুপারের সঙ্গেও দেখা করেন। জেলা পুলিশের পরামর্শেই তিনি অভিযোগ জানান সিআইডিতে। পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পুলিশ সুপার সুনীল যাদব জানিয়েছেন, ‘‘আমরা অভিযোগ পেয়েছি। খতিয়ে দেখছি গোটা বিষয়টি।’’

তদন্তকারীরা ইতিমধ্যেই সেই সমস্ত অ্যাকাউন্টের মালিকের হদিশ পাওয়ার চেষ্টা করছেন, যেখানে আশিস টাকা পাঠিয়ে ছিলেন। প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে ওই অ্যাকাউন্টগুলো ভুয়ো নামে তৈরি। তদন্তকারীদের আশঙ্কা, এর পেছনে বড় আন্তর্জাতিক চক্র রয়েছে। নাইজেরিয়ার প্রতারক চক্রের অপরাধের ধরনের সঙ্গে এই প্রতারণার অনেকটাই মিল রয়েছে। জেলা পুলিশের পাশাপাশি তদন্তে সিআইডিও সহযোগিতা করছে বলে জানা গিয়েছে পুলিশ সূত্রে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus COVID-19 Panskura Fraud
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE