Advertisement
E-Paper

আধুনিক ট্রমা কেয়ার পাবে কি পর্যাপ্ত নার্স

বিশেষজ্ঞদের মতে, পর্যাপ্ত প্রশিক্ষিত নার্স না থাকলে ট্রমা কেয়ার চালানো বেশ কঠিন। রোগীকে সময়মতো ওষুধ, ইঞ্জেকশন দেওয়া ছাড়াও আশঙ্কাজনক রোগীর পর্যবেক্ষণ ও সেই তথ্য ঠিকমতো রেকর্ড করে রাখার কাজ খুব গুরুত্বপূর্ণ।

তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০১৮ ০৩:৪৩
এসএসকেএমে ট্রমা কেয়ার ইউনিট তৈরির কাজ চলছে। নিজস্ব চিত্র

এসএসকেএমে ট্রমা কেয়ার ইউনিট তৈরির কাজ চলছে। নিজস্ব চিত্র

সব ব্যবস্থাই পাকা। বিশাল বাড়ি, আধুনিক সরঞ্জাম, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। কিন্তু এত ব্যবস্থা গিয়ে ধাক্কা খাচ্ছে একটাই জায়গায়। তা হল প্রশিক্ষিত নার্স।

কয়েকশো কোটি টাকা খরচ করে ‘লেভেল ১’ ট্রমা কেয়ার ইউনিট তৈরি হচ্ছে এসএসকেএম হাসপাতালে। কিন্তু স্বাস্থ্যকর্তাদের একটা বড় অংশ স্বীকার করছেন, ট্রমা কেয়ারের পরিষেবা দেওয়ার জন্য উপযুক্ত নার্সই নেই এ রাজ্যে। তাই পরিপাটি পরিকাঠামোর পরেও ট্রমা কেয়ারের পরিষেবা পাওয়া যাবে কি না, গোড়াতেই তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে
শুরু করেছে।

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরেই দিল্লির এইমস‌-এর ধাঁচে লেভেল ১ ট্রমা কেয়ার ইউনিট তৈরির কাজ চলছে এসএসকেএমে। পথ দুর্ঘটনা-সহ একাধিক ক্ষেত্রে উপযুক্ত ট্রমা কেয়ার চিকিৎসা পরিষেবায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উন্নত মানের পরিকাঠামো, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, হাসপাতালের সমন্বয়ের পাশাপাশি ট্রমা কেয়ারে প্রশিক্ষিত নার্সও খুব জরুরি। কিন্তু প্রায় ছ’হাজার নার্সের ঘাটতি নিয়ে চলা স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় ট্রমা কেয়ার মুখ থুবড়ে পড়বে না তো, প্রশ্ন উঠছে সেখানেই। বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, এইমস-এর মতো হাসপাতালে ট্রমা কেয়ারের জন্য কুড়ি জন নার্স নিযুক্ত থাকেন। জরুরি বিভাগে আশঙ্কাজনক রোগীর দেখভাল কী ভাবে করতে হয়, সে বিষয়ে বিদেশ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে এসেছেন তাঁরা।

বিশেষজ্ঞদের মতে, পর্যাপ্ত প্রশিক্ষিত নার্স না থাকলে ট্রমা কেয়ার চালানো বেশ কঠিন। রোগীকে সময়মতো ওষুধ, ইঞ্জেকশন দেওয়া ছাড়াও আশঙ্কাজনক রোগীর পর্যবেক্ষণ ও সেই তথ্য ঠিকমতো রেকর্ড করে রাখার কাজ খুব গুরুত্বপূর্ণ। রোগী পিছু পর্যাপ্ত নার্স না থাকলে সেই কাজ এখানে কী ভাবে হবে, প্রশ্ন উঠছে তা নিয়ে। স্বাস্থ্য দফতরের একাংশই জানাচ্ছেন, নার্সের অভাবে ধুঁকছে জেলা থেকে শহর। নিয়োগ প্রক্রিয়াই সময়মতো সম্পূর্ণ করা যাচ্ছে না। তার মধ্যে একটি হাসপাতালের ট্রমা কেয়ার ইউনিট সামলানোর জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা তো দূর অস্ত্!

স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে জানা গিয়েছে, ১১তলা ওই ট্রমা কেয়ার ইউনিটের তিনটি জোন থাকবে। অতিরিক্ত আশঙ্কাজনক রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই রে়ড জোনে ঢুকিয়ে দেওয়া হবে। চিকিৎসক পরীক্ষা করার পরেই তাঁর রিপোর্ট ব়ড় পর্দায় ভেসে উঠবে। কাচ দিয়ে ঘেরা সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে পরিজনেরা দেখতে পাবেন, কী ধরনের পরিষেবা পাওয়া যাচ্ছে।

এর পরে থাকবে ইয়েলো জোন। যেখানে তুলনায় কম আশঙ্কাজনক রোগীকে পরীক্ষা করা হবে। তাঁকে ভর্তি করতে হবে কি না, সেখানেই বিবেচনা হবে। আর থাকবে গ্রিন জোন। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে রোগীদের ছেড়ে দেওয়া হবে।

উন্নত মানে পরিষেবার ব্যবস্থার পাশাপাশি ওই ইউনিটের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েও পরিকল্পনা চলেছে। এইমস-এর মতো হাসপাতালে বিশেষ নিরাপত্তারক্ষীর ব্যবস্থা রয়েছে। এসএসকেএমে কী ভাবে সেই মানের নিরাপত্তা দেওয়া যায়, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই কলকাতা পুলিশ ও স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের নিয়ে বৈঠক হয়েছে। বর্তমানে এসএসকেএমের জরুরি বিভাগের পাশে ভবানীপুর থানার আউটপোস্ট আছে। কিন্তু জরুরি বিভাগ থেকে ট্রমা কেয়ারের বাড়িটি যথেষ্ট দূরে। ফলে সেখানে ট্রমা কেয়ার বিষয়ে প্রশিক্ষিত নিরাপত্তাকর্মী দেওয়ার পরিকল্পনা চলছে।

স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা জানান, নতুন এই ব্যবস্থায় কোন বিভাগে কত জন চিকিৎসক থাকবেন, ইতিমধ্যেই প্রাথমিক ভাবে একটি রূপরেখা তৈরি হয়ে গিয়েছে। রোগী পিছু একটি হিসেব তৈরির চেষ্টা চলছে। কিন্তু নার্স ঘাটতি চরমে। তাই কী ভাবে নার্সের দায়িত্ব ভাগ হবে, তা নিয়ে এখনও কিছুই ঠিক হয়নি।

স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী অবশ্য এই প্রসঙ্গে জানান, এসএসকেএমের ট্রমা কেয়ার-সহ রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে একাধিক আধুনিক পরিষেবা ব্যবস্থা তৈরি হচ্ছে। সে সব ক্ষেত্রেও নার্সের ভূমিকা জরুরি। সে দিকে নজর দিয়েই নার্স নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। বিভিন্ন নার্সিং কলেজে আসনও বাড়ানো হয়েছে। কী ভাবে আরও প্রশিক্ষিত নার্স ঠিক জায়গায় নিযুক্ত করা যায়, তার পরিকল্পনা হচ্ছে।

Trauma care centre SSKM Skilled Nurse
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy