Advertisement
E-Paper

পা-টাই কেটে দিক, নইলে মরে যাব

কতটা পথ পেরোলে তবে ইমার্জেন্সির গেট থেকে ওয়ার্ডের শয্যা পর্যন্ত পৌঁছনো যায়?

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০১৯ ০১:৩০
কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল চত্বরে স্ট্রেচারে শুয়ে মনোরমা কয়াল। ছবি: রণজিৎ নন্দী।

কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল চত্বরে স্ট্রেচারে শুয়ে মনোরমা কয়াল। ছবি: রণজিৎ নন্দী।

কতটা পথ পেরোলে তবে ইমার্জেন্সির গেট থেকে ওয়ার্ডের শয্যা পর্যন্ত পৌঁছনো যায়?

পোর্টেবল অক্সিজেন সিলিন্ডার না থাকায় গত রবিবারই পথ দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম মোকসেদ আলি কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তিন ঘণ্টা অ্যাম্বুল্যান্সেই পড়ে ছিলেন। বিষয়টি সামনে আসায় স্বাস্থ্যকর্তারা দাবি করেছিলেন, এ নেহাতই বিচ্ছিন্ন ঘটনা। সত্যিই কি তাই? মঙ্গলবার সকাল থেকে মেডিক্যালের ইমার্জেন্সিতে নজর রেখেছিল আনন্দবাজার। সামনে আসা একাধিক রোগীর হয়রানির মধ্যে মাত্র একটিকে উদাহরণ হিসেবে বেছে নিয়েছি আমরা।

এ দিন উলুবেড়িয়া হাসপাতাল থেকে রেফার হয়ে আসা, হাওড়ার শ্যামপুরের বাসিন্দা বছর চল্লিশের মনোরমা কয়ালকে ইমার্জেন্সির বাইরে স্ট্রেচারে পড়ে থাকতে হয়েছে দিনভর। স্যালাইন ধরে ঠায় দাঁড়িয়ে ছিলেন তাঁর মা। দুপুর তিনটের পরে কার্যত কেড়ে নেওয়া হয় সেই স্ট্রেচারটিও। অভিযোগ, হাসপাতালের কর্মী এসে বলে যান, ‘‘নিজের সম্পত্তি পেয়েছেন নাকি? সর্বক্ষণ রেখে দেওয়া যাবে না।’’ অগত্যা যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকা মনোরমাকে শুইয়ে দেওয়া হয় ইমার্জেন্সির বাইরের রাস্তায়। রাতেও শয্যা মেলেনি তাঁর। কী ঘটেছিল, শোনা যাক তাঁদেরই মুখ থেকে।

মনোরমা কয়াল, রোগিণী:

আমি কী দোষ করেছি? কেন এরা আমায় ভর্তি নেয় না? পায়ের যন্ত্রণায় আর পারছি না। উলুবেড়িয়া হাসপাতালের ডাক্তারবাবুরা তো বলে দিয়েছেন যে, তাঁদের আর কিছু করার নেই। কলকাতায় নিয়ে যান। এখানে সকাল ১১টা থেকে পড়ে আছি। ভর্তিই নিচ্ছে না। কাগজে লিখে দিয়েছে, ভর্তি নেওয়া হবে, কিন্তু কোনও শয্যাই নাকি ফাঁকা নেই! আমার পা-টাই কেটে দিক। নইলে মরে যাব।

শ্রাবণী মণ্ডল (মনোরমার বোন):

দিদির সুগার ধরা পড়েছিল কয়েক বছর আগে। পরে বাঁ পায়ে ঘা হয়ে যায়। গত মার্চে উলুবেড়িয়া হাসপাতাল আমাদের বলে দিয়েছিল যে কলকাতার হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে দ্রুত অস্ত্রোপচার করাতে হবে। এখানে নিয়ে আসার পরে ডাক্তারবাবুরা বলেন, দিদির অপারেশন করা যাবে না। সুগার কমিয়ে ফের নিয়ে আসতে হবে। বাড়ি নিয়ে যাওয়ার পরে সুগার কমার বদলে বেড়ে গিয়েছে। গত মাসে বাধ্য হয়ে দিদিকে উলুবেড়িয়া হাসপাতালে ভর্তি করাই। কিন্তু ওখানকার ডাক্তারেরা তো আগেই বলে দিয়েছিলেন, তাঁদের আর কিছুই করার নেই। ওঁরা রেফার করে দেন কলকাতায়। আমরাই আবার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসি। যদি এ বার অন্তত ভর্তি নেয়! কিন্তু দেখলাম, এখানে কিছুই বদলায়নি। সকাল থেকে এ বিল্ডিং থেকে ও বিল্ডিংয়ে ছুটে বেড়াচ্ছি।

একটানা কেঁদে যাচ্ছিলেন মনোরমার মা জানকী বর্মণ। তাঁর কথায়, ‘‘যাব কোথায়? মেয়েটার এত কষ্ট আর দেখতে পারছি না। ও মরলে তবে কি হাসপাতালে একটা বেড জুটবে?’’

আনন্দবাজারের তরফে যোগাযোগ করা হয় মেডিক্যালের সুপার ইন্দ্রনীল বিশ্বাসের সঙ্গে।

সুপার বলেন, ‘‘কাজের সূত্রে দিল্লিতে রয়েছি। এখান থেকে রোগীর অবস্থা না দেখে তো কিছু বলা সম্ভব নয়। শয্যার সমস্যা রয়েছে তা সকলেই জানেন। আমরাই বা কী করব? যে যেখান থেকে পারছেন এখানে চলে আসছেন। জেলাগুলো একটু ভাবুক।’’

এর পরে রোগীর আত্মীয়েরা তাঁর মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে তাঁকে ফোন করেন। ফোনে সুপার বলেন, ‘‘গিয়ে আর একবার অনুরোধ করুন। দেখুন যদি হয়।’’

আনন্দবাজারের তরফে যোগাযোগ করা হয় রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা প্রদীপ মিত্রের সঙ্গে।

তাঁর বক্তব্য, রোগীর এই অবস্থা তো এক দিনে হয়নি। আগে কেন আসেননি? বহির্বিভাগে দেখিয়ে যা করার করতে হবে।

তাঁকে জানানো হয়, রোগীর পরিবারের দাবি, আগে অনেকবার হাসপাতাল থেকে তাঁদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রদীপবাবু বলেন, ‘‘সে অনেকের অনেক রকম দাবি থাকে।’’

রবিবার ‘পোর্টেবল অক্সিজেন সিলিন্ডার’ না পাওয়ায় হয়রানির শিকার রোগীর আত্মীয় মঞ্জুর হোসেনের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছিলাম আমরা। এ দিনের ঘটনা শুনে মঞ্জুর বলেন, ‘‘আমাদের সঙ্গে যা হয়েছে সেটা কেন সকলকে জানিয়েছি, এ কথা বলে হাসপাতালের কয়েক জন চিকিৎসক আমাদের উপরে চোটপাট করছেন। বলেছেন, ‘চিকিৎসা কিন্তু আমরাই করব। আমাদের বিরুদ্ধে বললে কী হয় জানেন?’ আসলে কিছুই বদলায় না।’’

Health Medical College and Hospital Hospital Patients
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy