Advertisement
E-Paper

সিবিআই মামলায় দুই পুলিশকর্তা

অনুমতি চাওয়া হয়েছিল বছর চারেক আগে। মিলল গত সপ্তাহে। তা-ও দু’জনের বিরুদ্ধে।নন্দীগ্রামে গুলি চালানোর ঘটনায় ছয় পুলিশকর্তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা শুরু করার জন্য রাজ্য সরকারের কাছে আর্জি জানিয়েছিল সিবিআই।

শিবাজী দে সরকার ও অত্রি মিত্র

শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০১৬ ০৩:০৫
দেবাশিস বড়াল ও সত্যজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

দেবাশিস বড়াল ও সত্যজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

অনুমতি চাওয়া হয়েছিল বছর চারেক আগে। মিলল গত সপ্তাহে। তা-ও দু’জনের বিরুদ্ধে।

নন্দীগ্রামে গুলি চালানোর ঘটনায় ছয় পুলিশকর্তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা শুরু করার জন্য রাজ্য সরকারের কাছে আর্জি জানিয়েছিল সিবিআই। সময়টা ২০১২ সালের মে মাস। তার পর থেকে অন্তত তিন দফা চিঠি দিলেও নবান্নের কর্তারা
রাজি হননি।

এ বার মত পাল্টালেন। প্রশাসন সূত্রের খবর, গত সপ্তাহেই নবান্ন থেকে চিঠি গিয়েছে সিবিআইয়ের দফতরে। তাতে মামলা শুরু করার সবুজ সঙ্কেত দেওয়া হয়েছে।

তবে ছয় নয়, দু’জনের বিরুদ্ধে মামলার অনুমতি দিয়েছেন নবান্নের কর্তারা। এঁরা হলেন দেবাশিস বড়াল ও সত্যজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। দু’জনেই আইপিএস। প্রথম জন কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ)-এর পদ থেকে অপসারিত হয়ে মাস দুয়েক হল ‘কম্পালসরি ওয়েটিং’-এ রয়েছেন। আর দ্বিতীয় জন বর্তমানে কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (সশস্ত্র বাহিনী) পদে বহাল।

এই নিয়ে প্রশ্ন করা হলে দেবাশিসবাবু ‘কিছু জানি না’ বলে মন্তব্য করেন। আর সত্যজিৎবাবু কোনও মন্তব্যই করতে রাজি নন।

সিবিআই অবশ্য রাজ্য সরকারের চিঠির প্রাপ্তি স্বীকার করেছে। সংস্থার এক কর্তা জানান, রাজ্য সরকারের অনুমতি মেলায় ওই দুই অফিসারের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে। বাকি যে চার জন পুলিশ কর্তা (পশ্চিমাঞ্চলের তৎকালীন আইজি অরুণ গুপ্ত, জেলার পুলিশ সুপার অনিল গঞ্জি শ্রীনিবাসন, নন্দীগ্রাম ও খেজুরির ওসি শেখর রায় ও অমিত হাতি)-এর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা শুরুর অনুমতি চাওয়া হয়েছিল, তা নিয়ে ফের চিঠি দেওয়া হবে সরকারকে।

কেমিক্যাল হাব তৈরির জন্য জমি নেওয়ার নোটিসকে কেন্দ্র করে ২০০৭-এর ১৪ মার্চ নন্দীগ্রামে কয়েক হাজার মানুষের প্রতিরোধকে ছত্রভঙ্গ করতে গুলি চালায় পুলিশ। তাতে ১৪ জনের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে ভাঙাবেড়ার ১১ জন ও অধিকারীপাড়ার তিন জন গ্রামবাসী ছিলেন। ওই ঘটনায় উত্তাল হয় রাজ্য। তৎকালীন বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় সিবিআই তদন্তের দাবি জানান।

ঘটনার পরের দিনই আদালতের নির্দেশে তদন্তে নামে সিবিআই। তদন্তের কাজ কিছুটা এগনোর পর ওই ছয় পুলিশকর্তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা ও জেরার অনুমতি চায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। ওই ছয় জনের বিরুদ্ধে নিয়ম না মেনে গুলি চালানো এবং সাক্ষ্য-প্রমাণ লোপাটের অভিযোগ পেয়েছিল সিবিআই। কিন্তু তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করার
অনুমতি দিতে রাজি হয়নি তৃণমূল সরকার। কেন?

রাজ্য পুলিশের এক কর্তা এর কারণ ব্যাখ্যা করে জানান, তখন প্রশাসনের একাংশের বক্তব্য ছিল, নন্দীগ্রামের ঘটনায় অভিযুক্ত পুলিশ অফিসারেরা হুকুম তামিল করেছেন মাত্র। তখন যাঁরা সরকার চালাতেন, সেই নেতাদের ছাড় দিয়ে কেবল পুলিশকে অভিযুক্ত করা অযৌক্তিক। তাই তাঁদের বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রী কোনও ব্যবস্থা নেওয়ার পক্ষপাতী ছিলেন না। এর পরিবর্তে সরকার নিজেই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত শুরু করে।

ওই কর্তা জানান, কেন তাঁদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত শুরু হবে না, ওই ছ’জনের কাছে তার ব্যাখ্যা (শো-কজ) চেয়েছিল স্বরাষ্ট্র দফতর। জবাবে পুলিশকর্তাদের অনেকেই পাল্টা চিঠি দিয়ে সিবিআইয়ের আনা অভিযোগের খুঁটিনাটি জানতে চান সরকারের কাছে। “অভিযুক্তদের দাবি সিবিআইকে জানানো হয়। কিন্তু তারা বলেছে, ওই সব গোপনীয় তথ্য কোনও মতেই অভিযুক্তদের জানানো যাবে না।”— বলেন স্বরাষ্ট্র দফতরের এক কর্তা। সিবিআইয়ের বক্তব্য ছিল, তারা চার্জ গঠনের অনুমতি পেলে তা সরাসরি আদালতে পেশ করবে। অভিযুক্তদের আলাদা করে কোনও তথ্য জানানো যাবে না। এই টানাপড়েনে ছয় অফিসারের
বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্তের প্রক্রিয়া আর এগোয়নি।

সেই অনুমতি পেতে চার বছর পেরিয়ে গেল কেন?

এর স্পষ্ট কারণ জানাতে চাননি রাজ্য প্রশাসনের কর্তারা। তবে রাজ্য পুলিশের একাংশ একটা ঘটনাচক্রের দিকে ইঙ্গিত করছেন। গত বিধানসভা নির্বাচনে কলকাতা পুলিশে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন দেবাশিস বড়াল। সে সময়ে শাসক দলের একাধিক নেতা তাঁর বিরুদ্ধে অতি সক্রিয়তার অভিযোগ তুলেছিলেন। দ্বিতীয় বার সরকার গঠনের পরে দেবাশিসবাবুকে সরিয়ে দিয়ে কম্পালসরি ওয়েটিং-এ পাঠানো হয়। এ বার আরও এক ধাপ এগিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করার অনুমতিও দেওয়া হল সিবিআই-কে। তাঁদের কথায়, নন্দীগ্রাম-কাণ্ড নিয়ে একাধিক মামলা রয়েছে। এর একটিতে দেবাশিসবাবুর সঙ্গে সত্যজিৎবাবুরও নাম রয়েছে। তাই খানিকটা বাধ্য হয়েই সত্যজিৎবাবুর বিরুদ্ধেও মামলার অনুমতি দিতে হয়েছে। পুলিশের ওই কর্তা জানান, বাকি চার জনের বিরুদ্ধে অনুমতি দেওয়ার ক্ষেত্রে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি।

Nandigram CBI
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy