বর্গভীমা (বাঁ দিকে) ও সর্বমঙ্গলা মন্দিরের শংসাপত্র নিজস্ব চিত্র।
ভক্তি ও বিশ্বাস বজায় রেখেই রাজ্যের দুই মন্দির কর্তৃপক্ষ ভোগের ক্ষেত্রে প্রাথমিক ভাবে গুণমান এবং পরিচ্ছন্নতার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। স্বাস্থ্য দফতরের আওতাধীন খাদ্য সুরক্ষা দফতরের পরামর্শ মেনেই এই পরীক্ষা ‘পাশ’ করেছেন তাঁরা। ভোগ রান্নার জন্য পেয়েছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রকের ‘ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ডস অথরিটি অব ইন্ডিয়া’ (এফএসএসএআই)-র প্রাথমিক শংসাপত্র বা লাইসেন্স। এত দিন এই লাইসেন্স মূলত দেওয়া হত বিভিন্ন হোটেল ও রেস্তরাঁকে।
গত জুলাই মাসে পূর্ব মেদিনীপুরের বর্গভীমা মন্দির কর্তৃপক্ষ এই লাইসেন্স পেয়েছেন। দুর্গাপুজোর ঠিক আগে, সেপ্টেম্বরে একই লাইসেন্স পেয়েছেন বর্ধমানের সর্বমঙ্গলা মন্দির কর্তৃপক্ষ। এই ঘটনা মনে করিয়ে দিচ্ছে সত্যজিৎ রায়ের ‘গণশত্রু’ ছবির কথা। ধর্মস্থানে যদি অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ভোগ রান্না হয়, তা হলে তা অমৃতবৎ হয় না— এমনই বার্তা সেখানে দিয়েছিলেন ছবির চিকিৎসক অশোক গুপ্ত। মন্দিরের জল পরীক্ষা করে তিনি দেখিয়েছিলেন, তাতে রয়েছে জন্ডিস-সহ বিভিন্ন রোগের জীবাণু। অথচ, সেটাই চরণামৃত হিসাবে খাচ্ছেন ভক্তেরা। প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করে স্বার্থান্বেষী কিছু মানুষের রোষে পড়তে হয়েছিল তাঁকে।
বর্গভীমা এবং সর্বমঙ্গলা মন্দিরে কিন্তু পথ প্রদর্শক হয়েছেন দুই কর্তৃপক্ষই। তাঁরা সাধারণ মানুষের জীবন ও স্বাস্থ্যের সঙ্গে আপস করতে চাননি। তাই স্বাস্থ্য দফতরের দেওয়া প্রস্তাবে রাজি হয়েছিলেন। কয়েক দফায় রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের ফুড সেফটি অফিসারেরা এই দুই মন্দিরের ভোগ ও ভোগ রান্নার জলের নমুনা পরীক্ষা করেছেন। সরেজমিনে দেখা হয়েছে মন্দিরের রান্নাঘর, রান্নার পদ্ধতি, রাঁধুনি ও পরিবেশকদের পরিচ্ছন্নতা। কয়েক দিনের প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে রন্ধনকর্মীদের। রান্নাঘরের পরিকাঠামোর বেশ কিছু পরিবর্তন করতে বলা হয়েছে। সেই কাজ চলছে দু’জায়গাতেই।
প্রাথমিক পরীক্ষায় পাশ করে সরকারি শংসাপত্র পেলেও আগামী কয়েক মাস ধরে চলবে ফুড অডিট। তাতে পাশ করলে পাওয়া যাবে এফএসএসএআই-এর বিশেষ ‘ব্লিসফুল হাইজেনিক অফারিং টু গড’ বা ‘ভোগ’ শংসাপত্র। এফএসএসএআই-এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, এখনও পর্যন্ত দেশের ১২টি রাজ্যের ৩২৮টি ধর্মীয় স্থান এই ‘ভোগ’ শংসাপত্র পেয়েছে। এই তালিকায় সবচেয়ে বেশি ধর্মীয় স্থান রয়েছে তামিলনাড়ুর। পশ্চিমবঙ্গের নাম তালিকায় এখনও ওঠেনি। সেই পথে যাত্রা শুরু করেছে বর্গভীমা ও সর্বমঙ্গলা মন্দির।
রাজ্যে প্রথম ভোগের গুণমান বজায়ের লাইসেন্স পেয়েছে বর্গভীমা মন্দির। মন্দিরের সচিব শিবাজি অধিকারী জানালেন, প্রতিদিন এই সতীপীঠে ৬০০-৭০০ জন অন্নভোগ খান। সেখানে ভাজা, ডাল, পোলাও, শুক্তো থেকে পোনা মাছ, শোল মাছের অম্বল, চাটনি, পায়েস— সবই থাকে। রান্নার কর্মী রয়েছেন ১৫ জন। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিভাস রায়ের কথায়, স্বাস্থ্য দফতরের প্রস্তাব মেনে ৭ জুলাই ওই মন্দির এফএসএসএআই প্রাথমিক শংসাপত্র পেয়েছে। তার আগে মন্দিরের ভোগ ও জল পরীক্ষা করা হয়েছিল। চূড়ান্ত শংসাপত্র দেওয়ার আগে তৃতীয় একটি সংস্থা ফের ওই পরীক্ষাগুলি করবে।
বর্ধমানের প্রায় ৪০০ বছরের পুরনো সর্বমঙ্গলা মন্দিরে রোজ প্রায় ৪০০ জনের ভোগ হয়, জানালেন মন্দিরের ট্রাস্টি বোর্ডের সম্পাদক সঞ্জয় ঘোষ। এখানেও অন্ন ভোগ হয়। রান্না করেন ৬ জন। মন্দির কর্তৃপক্ষের মতে, মন্দিরের ভোগ বলে অস্বাস্থ্যকর ভাবে রান্না হলেও তা খেয়ে কেউ অসুস্থ হবেন না— এমন অবাস্তব কথায় তাঁরা বিশ্বাসী নন। তাই মন্দির কর্তৃপক্ষ ভোগের মান রক্ষায় স্বাস্থ্য দফতরের প্রস্তাব মেনে চলছেন। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তা প্রণব রায় জানান, সর্বমঙ্গলা মন্দির ‘ভোগ’ শংসাপত্র পেয়ে গেলে একে-একে জেলার খেপি মা মন্দির, কঙ্কালেশ্বরী মন্দিরের মতো অন্য মন্দিরগুলিকেও এফএসএসএআই-এর শংসাপত্রের আওতায় নিয়ে আসার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy