Advertisement
০৭ মে ২০২৪
শিলিগুড়িতে অভিযোগ নিল না পুলিশ

চরিত্রের প্রশ্ন তুলে ডিস্কোয় মার দুই তরুণীকে

রাতবিরেতে পার্টিতে গিয়ে মদ্যপান এবং হুল্লোড় করতেন মিনাল অরোরা এবং তাঁর বান্ধবীরা। সে জন্য কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে নিজেদের চরিত্র নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছিল তাঁদের। ‘

জখম এক তরুণী। — নিজস্ব চিত্র

জখম এক তরুণী। — নিজস্ব চিত্র

কিশোর সাহা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৩:৩২
Share: Save:

রাতবিরেতে পার্টিতে গিয়ে মদ্যপান এবং হুল্লোড় করতেন মিনাল অরোরা এবং তাঁর বান্ধবীরা। সে জন্য কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে নিজেদের চরিত্র নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছিল তাঁদের। ‘পিঙ্ক’ ছবির সেই দৃশ্যই যেন ফিরে এল রবিবার রাতে, শিলিগুড়ির উত্তরায়ণ শপিং মলের একটি ডিস্কোয়। একই প্রশ্ন তুলে প্রথমে ওই ডিস্কোয় মারধর করা হয় দুই তরুণীকে। এর পরে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল গিয়ে এবং অভিযোগ জানাতে থানায় গিয়েও একই অভিজ্ঞতা হয় ওই দুই তরুণীর। বারবারই উঠে আসে চরিত্রের কথা। অভিযোগ, শেষ পর্যন্ত তাঁদের অভিযোগ না নিয়েই ফিরিয়ে দেয় মাটিগাড়া থানা।

রবিবার রাতের এই ঘটনার আতঙ্ক এ দিনও পিছু ছাড়েনি ওই দুই তরুণীর। নিজেদের রুপোলি পর্দার মিনাল অরোরা বা বাস্তবের সুজেট জর্ডনের মতো মনে হচ্ছে তাঁদের। পার্ক স্ট্রিটে একটি গাড়িতে তুলে গণধর্ষণ করা হয় সুজেটকে। তার পরে তিনি অভিযোগ জানাতে গেলে ফিরিয়ে দেয় পার্ক স্ট্রিট থানা। এবং এই খবর সংবাদমাধ্যমে আসার পরে বহু রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বই তাঁর চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। মৃত্যু পর্যন্ত এই সব কিছুর সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যান তিনি। শিলিগুড়়ির এই দুই তরুণীর এখন মনে হচ্ছে, ‘‘চারদিকে এত ‘নীতি-পুলিশ’ থাকলে পানশালা, ডিস্কোয় নিগ্রহের শিকার মেয়েদের তো কোনও দিন সুবিচার পাওয়ার কোনও আশাই নেই।’’

নীতি পুলিশের বাড়াবাড়ি এমন একটা শহরে হল, যার পুলিশ প্রধান এক জন মহিলা। বিষয়টি জানার পরে শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার চেলিং সিমিক লেপচা অবশ্য বলেছেন, ‘‘গুরুতর অভিযোগ। ওই দুই তরুণীর সঙ্গে কথা বলে প্রতিটি অভিযোগ খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছি। আমিও ওঁদের সঙ্গে কথা বলব।’’

তরুণী দু’জন জানান, তাঁরা একসঙ্গে একটি ‘ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট’ সংস্থা চালান। রবিবার এক জনের জন্মদিন উপলক্ষে এক যুবককে নিয়ে তাঁরা ডিস্কোয় গিয়েছিলেন। এক তরুণী জানান, জন্মদিনের পার্টিতে প্রচণ্ড জোরে গান বাজছিল। কোনও কথা শোনা যাচ্ছিল না। তখন এক জন অন্য জনের কানের কাছে মুখ এনে কথা বলতে হচ্ছিল। এটা দেখে বাউন্সারেরা এগিয়ে এসে জানান, এখানে চুমু খাওয়া বারণ। অভিযোগ, তাঁরা দু’জনের চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। প্রতিবাদ করলে তর্ক শুরু হয়। শেষে রাত সওয়া দুটো নাগাদ চরিত্রের দোহাই দিয়েই তাঁদের মারধর করে ডিস্কো থেকে বের করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। মারের চোটে এক জনের চোখে রক্ত জমে যায়। অন্য জনের হাতে কালসিটে পড়ে।

তরুণী জানান, এই অবস্থায় তাঁরা ১০০ নম্বরে ফোন করেন। পাঁচ মিনিটের মধ্যে পুলিশ এসে তাঁদের মাটিগাড়া হাসপাতালে নিয়ে যায়। দুই তরুণীর অভিযোগ, কিন্তু চিকিৎসক গোড়া থেকেই ‘নীতি পুলিশ’-এর মতো বকাবকি করে আপত্তিকর মন্তব্য করেন। সেখান থেকে মাটিগাড়া থানা। অভিযোগ, থানার ডিউটি অফিসার প্রথমে জানতে চান, তাঁরা (ওই দুই তরুণী) খানাপিনায় কত খরচ করেছেন? টাকার অঙ্ক শুনে নানা রসিকতাও করেন। রাতের বেলায় ডিস্কোয় যে মেয়েরা যায়, তাদের চরিত্র নিয়েও টিপ্পনি কাটেন বলে অভিযোগ। এক তরুণী জানান, এত কিছুর পরেও কিন্তু অফিসার শেষ অবধি অভিযোগ নেননি। অনেক চেষ্টা করার পরে ব্যর্থ হয়ে রাত তিনটেয় বাড়ি ফেরেন দুই তরুণী।

ঘটনাচক্রে, ডিস্কোর অন্যতম মালিক পিন্টু দাসকে ফোন করে ওই দুই তরুণী জানান, অভিযুক্ত বাউন্সারেরা ক্ষমা চাইলে তাঁরা মামলায় যাবেন না। সোমবার রাতে পিন্টুবাবু বলেন, ‘‘কী হয়েছিল তার ফুটেজ রয়েছে। দুই তরুণীও বাউন্সারদের মারধর করেছেন।’’ একই সঙ্গে তিনি মেনে নেন, ‘‘ডিস্কোয় আসা কোনও মেয়ের চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলার অধিকার কারও নেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Disco Molest
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE